ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসেই প্রথম স্প্যান বসানো হচ্ছে

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৩ জুন ২০১৭

পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। চলতি মাসেই প্রথম স্প্যান স্থাপনে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসবে এই স্প্যানটি। তাই এই পিলার দুটি সম্পন্ন করতে উপরিভাগের কাজ চলছে। এছাড়া ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারেও কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। প্রথম স্প্যান বসার পরপরই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৪টি স্প্যান বসবে। তাই ৩৭ নম্বর থেকে ৪২ নম্বর পর্যন্ত এই ৬টি পিলারের কাজের বিশেষ ব্যস্ততা লক্ষ করা গেছে। এদিকে মাওয়া প্রান্তে পাইল স্থাপনের কাজ চলছে পুরোদমে। ৫ নম্বর পিলারের ৬টি পাইলের মধ্যে ৪টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। আর ২টি পাইলের একাংশ স্থাপন হয়েছে। পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ইতোমধ্যে ২০টি স্প্যান সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন বেইজিংয়ে অপর স্প্যানগুলো তৈরির কাজ চলছে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ১১০টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন মূল সেতুর পাইলগুলোর উপরিঅংশে এখন কাজ চলছে বেশি। নতুন ৩ হাজার ৬০০ কিলোজুল ক্ষমতার জামার্নি হ্যামার আসার পর পাইল স্থাপনের গতি আরও বেড়ে যাবে। বর্তমানে ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি বিকল রয়েছে। এটি মেরামতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই নতুন এই হ্যামার আনা হচ্ছে। এখন ২ হজার ৪০০ কিলোজুল ক্ষমতার একটি হ্যামার দিয়ে পাইল স্থাপন করা হচ্ছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে এ্যাপ্রোচ রোডের কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। মাওয়া প্রান্তে ১.৬৭ কিলোমিটার মেইন রোড ও দুই কিলোমিটার লিংক রোডের কাজ গত জুলাইতে শেষ হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে ১০.৫৭ কিলোমিটার (প্রায়) মেইন রোড, ৩ কিলোমিটার লিংক রোড, ১২ কিলোমিটার সার্ভিস রোড ও ৬ কিলোমিটার ফেরি শিফটিং রোডের কাজের শেষ হয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ। নির্বাহী প্রকৌশলী (এ্যাপ্রোচ রোড) সৈয়দ রজব আলী জানান, ‘গত ডিসেম্বর মাসেই এ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হলেও গত পাঁচ মাসে ধীরগতিতে বাকি ১৩ শতাংশ কাজ করতে হয়েছে। কারণ মাটি সেটলমেন্টের একটা ব্যাপার আছে। এছাড়া, সেতুর দুই প্রান্তে থানা তৈরির কাজও আমাদের নতুন করে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অগখ-ঐঈগ ঔঠ (আবদুল মোনেম গ্রুপ)কে এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের কাজটি দেয়া হয়। ২০১১ সালে মাওয়া প্রান্তে এ্যাপ্রোচ রোডের এ কাজের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৯৩ কোটি টাকা (প্রায়) ও জাজিরা প্রান্তে জন্য এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা (প্রায়)। তবে এখন মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে। পারচেজ কমিটির অনুমতি নিয়ে মূল্য বাড়ানো হয়ে থাকে। থানা তৈরি ও ফেরিঘাট শিফটিং এমনি কিছু কাজ নতুন করে দেয়ার ফলে মূল্য কিছুটা বাড়বে। এদিকে, পুনর্বাসন খাতে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান সহকারী পরিচালক (পুনর্বাসন) খন্দকার নাজিবুল হাসান। তিনি জানান, ‘মাওয়া প্রান্তে ৪টি ও জাজিরা প্রান্তে ৩টি মোট ৭টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৪৪টি প্লটের মধ্যে গত এপ্রিল মাস নাগাদ ২ হাজার ৩৬৫টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০০ অধিক ব্যক্তিকে ভিটা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রায় শতাধিক পরিবার প্লট পাননি বলে জানিয়েছেন কুমারভোগ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ও মহিলা কাউন্সিলর রীনা বেগম। কাউন্সিলর রীনা বেগম জানান, শুধু রান্নাঘর বা বাথরুম আছে কিন্তু বসতভিটায় আর অন্য কোন ঘর নেই বলে অনেকে প্লট পাননি। প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল জলিল জানান, বিভিন্ন কারণে দেড়শ বা তার কিছু কম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্লট পাননি। তারা আমাদের কাছে এলে আমরা তাদের জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। প্লট না পাওয়া প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী (পুনর্বাসন) মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, যদি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্লট পাওয়ার সকল শর্ত পূরণ করার পরও প্লট না পায়, তাহলে সে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সেতু কর্তৃপক্ষের এ সংক্রান্ত কমিটি তার প্লট পাওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। তিনি আরও জানান, প্লট পাওয়ার কিছু নীতিমালা আছে। অনেকে সে সকল নীতিমালার আওতায় না পড়লেও আবেদন করে থাকে। যেমন, ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হয়তো তার অন্য কোন বাড়ি আছে বা বিকল্প ফ্ল্যাট আছে। তারপরেও সে আবেদন করলে প্লট পাবে না। কিন্তু, অনেকেই এটা বুঝতে চায় না। আবার, বসতভিটায় হয়তো কোন ঘর ছিল না। শুধু রান্নাঘর বা গোয়ালঘর ছিল। সে ক্ষেত্রেও সে প্লট পাবে না। সবগুলো প্লট এখনো হস্তান্তর হয়নি। যারা সত্যিকারভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্লট পাওয়ার নীতিমালায় যোগ্য বিবেচিত হবে তারা অবশ্যই প্লট পেয়েছে এবং বাকিরাও পাবে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী (পুনর্বাসন) মোঃ তোফাজ্জল হোসেন। এদিকে, দ্বিস্তর বিশিষ্ট পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপর বসানোর জন্য সø্যাব নির্মাণের কাজ গত তিন সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে। মোট তিন হাজার সø্যাব বসানো হবে। এই সø্যাবের ওপর বিটুমিন দেয়া হবে। এটির ওপর দিয়েই যানবাহন চলবে। পদ্মা নদীতে আরও অপেক্ষা করছে ৪ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ক্রেন যার কাজ হবে স্প্যানগুলোকে দুই পিলারের ওপর বসিয়ে দেয়া। এই মাসে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হলেই পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি সবাই দেখতে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আবদুল কাদের।
×