ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব পণ্যের দাম বাড়বে, কমবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২ জুন ২০১৭

যেসব পণ্যের দাম বাড়বে, কমবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, আরোপ ও বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে কয়েকটি সেবা খাত এবং পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। ফলে ওইসব পণ্য ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোক্তাকে আগের চেয়ে বেশি দাম দিতে হতে পারে। আবার অনেক পণ্য থেকে শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। দাম বাড়বে ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু তৈরি পণ্যের আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে গুঁড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙ্গুর, যেকোন ধরনের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশু খাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তৈল, পেইন্ট, ভার্নিশ, সৌন্দর্য অথবা প্রসাধনী সামগ্রী, সেভিং কিটস, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, এ্যারোসল ও মশার মারার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, ফ্রেম, মোটর গাড়ির টায়ার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওভেন ফ্রেবিক্স, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর আচ্ছাদন। এছাড়া শিশুদের গার্মেন্টস পণ্য, বিদেশী জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্টেইলনেস স্টিলের সিঙ্ক, ওয়াস বেসিনের যন্ত্রাংশ, ওয়াটার ট্যাপ, বাথরুমের ফিটিংস, স্টেইনলেস স্টিল বেলট, দুই ও চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিক্সা/থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, সিলিং ফ্যান ও এর যন্ত্রাংশ, রঙিন টেলিভিশন, সিম কার্ডের দাম বাড়বে। এছাড়া স্থানীয় বা সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্কারোপের ফলে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে- সব ধরনের পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হট ডগ, ফলের রস ও ফ্রুুট ড্রিংক, পাস্তা, লাজারানো, মিনারেল ওয়াটার (৩ লিটার পর্যন্ত), কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল, পেইন্টস, সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধনী, পাউডার, শ্যাম্পু, সেভের আগে পরে ব্যবহৃত সামগ্রী, ঘাম দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, সুগন্ধযুক্ত বাথ সল্ট ও অন্যান্য সামগ্রী, পেপার, সিরামিক, সোলার প্যানেল, দেয়াল টাইলস ও বাথটাব, সিমকার্ড (রিপ্লেসমেন্টসহ) সরবরাহ। এছাড়া নতুন বাজেটে কমমূল্যের সিগারেট ও বিড়ির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়ছে ই-সিগারেট ও এর রিফিলের শুল্ক হারও। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও সার্কভুক্ত দেশ ব্যতীত এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্লেন ভ্রমণে ব্যয় বাড়ছে। ফলে সার্কভুক্ত দেশব্যতিত এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা ও ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যামান ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই শুল্ক টিকেটের সঙ্গে যুক্ত করে আদায় করা হবে। দাম কমবে ॥ বাজেটে শুল্কহার হ্রাস ও কর রেয়াতির প্রস্তাব করায় বেশ কিছু পণ্য ও যন্ত্রপাতির দাম কমতে পারে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চাল, ডাল, ডিম, ফল, মাছ, মাংস, মধু, তরল দুধ, লবণ ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, মাংস, মুড়ি, চিঁড়া, চিনি, আলুসহ সব ধরনের শাক সবজিসহ প্রায় ৫৪৯টি পণ্যের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া কলা, খেজুর, ডুমুর, আনারস, পেয়ারা, আম, গাব, লেবুজাতীয় ফল, আঙ্গুর, তরমুজ, আপেল, নাশপাতিসহ যেকোন ফল, গোলমরিচ, ভ্যানিলা, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, জৈত্রী, এলাচ, মৌরী, ফেনেল, ধনিয়া, জিরা, আদা, জাফনার, হলুদ, তেজপাতা, কারি, মসলা, গম, মেসলিন; রাই, বার্লি, জই, ভুট্টা, ধান, সব ধরনের চাল, মুড়ি, সোরঘাম শস্য, বাজরা, ক্যানারাই বীজও ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্যের তালিকায় রয়েছে। ভ্যাট না থাকায় খরচ বাড়বে না দেশের মধ্যে (সরবরাহ) এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহনের মাধ্যমে পরিবহন সেবা, ভাড়াকৃত পরিবহন ছাড়া ট্যাক্সি, বাস, মিনিবাস, লঞ্চ, স্টিমার, ফেরির মাধ্যমে পরিবহন সেবারও। এয়ারলাইন্স (চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া প্রদানকারী সংস্থা ব্যতীত) ও খাদ্যশস্য পরিবহন সেবাদাতাদেরও বাড়বে না খরচ। কৃষি পণ্যের মধ্যে বীজ, সব ধরনের সেচ সেবা, বীজ সংরক্ষণ সেবা, মৎস্য, জলজপ্রাণী ও জলজ সম্পদ আহরণ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত সেবা। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ভেদে কমবে হাইব্রিড গাড়ির দাম। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের উপর কর ও শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশে সংযোজিত ও উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও ফোনের দাম কমবে। প্রস্তাবিত বাজেটে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ট্যাব উৎপাদনে ব্যবহার হয় এমন প্রায় ৫০টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়ে অভিন্ন ১ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং গণপরিবহন সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা, ও প্রশিক্ষণের ওপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া দেশীয় শিল্পের বিকাশ এবং প্রতিযোগিতামূলক রফতানি বাণিজ্যের লক্ষ্যে রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজ, এসি, পাম ওয়েল, সয়াবিন তেল ও এলপিজি সিলিন্ডার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমবে।
×