ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় মাসে শতাধিক ছাঁটাই

রাসিকে আতঙ্কে আওয়ামীপন্থী কর্মচারীরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৯ মে ২০১৭

রাসিকে আতঙ্কে আওয়ামীপন্থী কর্মচারীরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের দৈনিক মজুরিভিত্তিক আওয়ামীপন্থী কর্মচারীরা ছাঁটাই আতঙ্কে রয়েছেন। এরই মধ্যে অনেকে ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। মেয়র হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নতুনভাবে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে দেড় মাসে শতাধিক শ্রমিক ও কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সরিফুল ইসলাম বাবু ও নিযাম উল আযীমের সময় নিয়োগপ্রাপ্তদের ছাঁটাই করা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে তার ঘনিষ্ঠ দলীয় লোকজন এবং সিটি কর্পোরেশনে অনুগতরা দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক ও কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ের পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে মেয়র বুলবুল আওয়ামী লীগ সমর্থক শ্রমিক ও কর্মচারীদের শনাক্ত করার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক ও কর্মচারীকে শনাক্ত করা হয়। এরপর তৈরি করা হয় তালিকা। আর এ তালিকার ভিত্তিতেই ছাঁটাই কার্যক্রম চলছে। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক ও কর্মচারীরা জানান, শুধু দলীয় কারণে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ছাঁটাই করছেন। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্য বেতন ও ভাতাও দেয়া হচ্ছে না। আওয়ামীপন্থীদের ছাঁটাই করে সেখানে বিএনপি সমর্থক-কর্মী ও অনুসারীদের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বুলবুল। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সিটি হাসপাতালে অস্থায়ী ভিত্তিতে দুইজন নার্স, পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগে একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং কনজারভেন্সি বিভাগে একজন শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও দুই শতাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে রাসিক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় দুই হাজার দুইশ শ্রমিক-কর্মচারী। এর মধ্যে প্রকৌশল ও পরিবেশ বিভাগে ১০ জন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ১০ জন, কনজারভেন্সি বিভাগ থেকে ১০ জন, পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের শ্রমিক, ড্রেন ক্লিনার ও শ্রমিক ৪০ জন, শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে ৬ জন, সাধারণ প্রশাসনিক শাখা থেকে ১২ জন, সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সিটি হাসপাতাল থেকে ২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এছাড়া জরুরী সেবা খাত, বিদ্যুত, পরিবহন, নিরাপত্তা, রাজস্ব এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের মোট ১৫৪ জনকে ছাঁটাই করেছেন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সবচেয়ে বেশি ছাঁটাই হয়েছেন সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীমের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মচারীরা। শুধু তার কার্যালয়ের আওতায় দৈনিক মজুরিভিত্তিক ১১ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন এমিলি। তিনি বলেন, গত দুই বছর থেকে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। দৈনিক মজুরি তিন শ’ টাকা করে দেয়া হত। হঠাৎ গত ১১ মে পরিচ্ছন্নতা বিভাগ থেকে তাকে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। উন্নয়ন শাখায় কর্মরত ছিলেন একজন সহকারী প্রকৌশলী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সময় তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত। দীর্ঘ সময় চাকরি করছেন। গত ৯ মে আকস্মিকভাবে দেখতে পাই, হাজিরা খাতায় আমার নাম নেই। এরপর জানতে পারি আমাকে ছাঁটাই করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজমীর আহম্মেদ মামুন বলেন, মেয়র বুলবুলের প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ। একজন অভিভাবকের কাছ থেকে আমরা এ ধরনের আচরণ আশা করি না। মেয়র বুলবুল দলীয় সংকীর্ণতায় ভুগছেন। বেছে বেছে আওয়ামী লীগ সমর্থক শ্রমিক ও কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন। এ বিষয়ে মেয়র বুলবুল বলেন, একজন অনির্বাচিত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র (নিযাম উল আযীম) নিয়োগ দিতে পারেন না। আর তিনি নিয়োগ দিয়েছেন অস্বচ্ছভাবে। এ কারণে তার আমলে যারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন, তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। এছাড়া একজন সহকারী প্রকৌশলীকে দুর্নীতির কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
×