ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক লেনদেনে কর দ্বিগুণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৮ মে ২০১৭

ব্যাংক লেনদেনে কর দ্বিগুণ হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে প্রস্তুত করা নীতিমালা জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে। তাই ব্যাংকে টাকা জমা রাখা ও উত্তোলন বা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে আগের তুলনায় দ্বিগুণ কর কেটে নেয়া হবে। ইতোমধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ব্যাংক লেনদেনে করের হার দ্বিগুণ করার প্রস্তুাব দিয়েছে সরকারকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রস্তাব কার্যকর হলে আগামী জুলাই থেকে ব্যাংকে বছরে কেউ পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন করলে, তার কাছ থেকে আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হবে ৩০ হাজার টাকা। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সমপরিমাণ অর্থের জন্য আবগারি শুল্ক হিসেবে বছরে কেটে নেয়া হয় ১৫ হাজার টাকা। বিদ্যমান নিয়মে যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন, তারা নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত কর দেন। এর বাইরে ওই টাকার ওপর আবগারি শুল্ক বাবদ আবারও কর দিতে হয়। যা আগামী অর্থবছরে দিতে হবে চলতি অর্থবছরের দ্বিগুণ। চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের ওপর এক হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছে সরকার। এনবিআরের প্রস্তুাব অনুযায়ী, এই পরিমাণ অর্থ লেনদেন করলে আগামী ১ জুলাই থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে কেটে নেয়া হবে তিন হাজার টাকা। এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনে চলতি অর্থবছরে সাড়ে সাত হাজার টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা আরোপ করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে নিজের টাকা তুললেও দ্বিগুণ কর দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন, তারা নিদিষ্ট হারে কর দেন। ব্যাংকে যে টাকা থাকে, তা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত হয় এবং ট্যাক্সও নেয়া হয়। কাজেই একই টাকার ওপর আবার ‘আবগারি শুল্ক’ কেটে নেয়া স্বাভাবিক নয় বলেই আমি মনে করি। এতে ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য সোর্স বৃদ্ধি না করে একই জায়গা থেকে বারবার ট্যাক্স নেয়া কোন ভাল লক্ষণ নয়। করের আওতা না বাড়িয়ে এসব করার কোন মানেই হয় না, যোগ করেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের জন্য এনবিআরের চূড়ান্ত করা শুল্ক প্রস্তাব ইতোমধ্যে সই করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। এনবিআরের প্রস্তাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও (২০১৭-১৮) ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন আবগারি শুল্কমুক্ত রাখা হয়েছে। এতে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন করলে কোন কর দিতে হবে না। তবে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা ও ঋণের ওপর ২০০ টাকা কেটে নেয়া হবে। চলতি অর্থবছরে নেয়া হয়েছে ১৫০ টাকা। এক লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা ও ঋণের ওপর চলতি বাজেটে আবগারি শুল্ক ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। ১০ লাখ এক টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের ওপর চলতি অর্থবছর এক হাজার ৫০০ টাকা নিচ্ছে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে তিন হাজার টাকা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য রাজস্ব বাড়াতে এনবিআর হয়তো আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। এতে ব্যাংকে লেনদেন করা ব্যক্তিদের মধ্যে কিছুটা হইচই বা অস্বস্তি দেখা দিলেও পরে তা মেনে নেবে। তিনি আরও বলেন, করের আওতা বাড়ানো গেলে হয়তো এনবিআর এখানে হাত দিত না। বাস্তবতা হচ্ছে- অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের মানুষ কর দেন না। এ কারণে এনবিআরের ওপর রাজস্ব বাড়ানোর চাপ থাকে। তাই বাধ্য হয়েই একই যায়গা থেকে বেশি কর নেয়ার চেষ্টা করে এনবিআর।
×