ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশলদিয়ায় চলছে বিশাল নির্মাণ যজ্ঞ, ৪০ ভাগ কাজ শেষ

ওয়াসা ঢাকাবাসীকে এবার পদ্মার বিশুদ্ধ পানি খাওয়াবে

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ২৭ মে ২০১৭

ওয়াসা ঢাকাবাসীকে এবার পদ্মার বিশুদ্ধ পানি খাওয়াবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ দেয়ার জন্য মুন্সীগঞ্জের পদ্মার তীরে যশলদিয়া এলাকায় চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। তৈরি হচ্ছে ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধনাগার। রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের ৪০ লাখ মানুষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই পানির সুবিধা পাবেন। ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা ওয়াসার এই প্রকল্পটির কাজ বর্তমানে ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে বলে ওয়াসা ও চায়না সিএএমসি কোম্পানির কর্মকর্তারা জানালেন। বৃহস্পতিবার পানি শোধনাগার প্রকল্পের ফেজ-১ এর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও বিশাল ক্রেন দিয়ে পাইপ বসানো হচ্ছে-আবার কোথাও বিকট শব্দে চলছে ইট পাথর ভাঙ্গার কাজ। নির্মাণ হচ্ছে বড় বড় ভবন। কথা হলো ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে। তিনি বললেন, এখন পর্যন্ত কাজের যে অগ্রগতি তাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ঢাকা শহরে মাটির নিচ থেকে পানি তোলার পরিমাণ কমিয়ে দেয়ার জন্যই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নেমে যাওয়ায় ২০০২ সালে সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয় পদ্মা থেকে পানি এনে ঢাকা শহরে সরবরাহ দেয়ার। ওই প্রস্তাব অনুমোদন হয় ২০১০ সালে। এরপর চূড়ান্তভাবে প্রকল্প অনুমোদন হয় ২০১৩ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চায়নিজ এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি সই হয় ২০১৩ সালের ৭ মে। ঋণচুক্তি কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১৫ নবেম্বর। প্রকল্পটির মূল ডিপিপি অনুমোদন হয় ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ পায় চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এখানে ঢাকা ওয়াসা দেবে ২২ কোটি টাকা। সরকার অনুদান দেবে এক হাজার ৭৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বাকি ২ হাজার ২৮০ কোটি ২ লাখ টাকা স্বল্প সুদে ঋণ সহযোগিতা চায়না এক্সিম ব্যাংক। যদিও প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। এজন্য আমরা মনে করেছিলাম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সময় বেশি লেগে যাবে। তবে বর্তমানে কাজের যে অগ্রগতি তাতে যথাসময়েই কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের জন্য ১০৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে পাম্প স্টেশনের জন্য ১২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি জমি মন্সীগঞ্জে। প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার নির্মাণ, যার মধ্যে ইনটেক চ্যানেল, পাম্পিং স্টেশন, ভূগর্ভস্থ জলাধার এবং হাই লিফট পাম্প স্টেশনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করা হবে। শূন্য দশমিক ৮ কিলোমিটার অপরিশোধিত পানি পরিবহন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ৩২ কিলোমিটার পরিশোধিত পানি পরিবহন লাইন নির্মাণ করে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীকে অতিক্রম করবে। প্রকল্প এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রায় ৪০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নকারী চায়নিজ প্রতিষ্ঠান সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোং লি: ও ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ। ঢাকা থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এক দল সাংবাদিক সাইট পরিদর্শন করেছেন। সাংবাদিকদের প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। তার আগে প্রকল্প নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সিএএমসির প্রজেক্ট ম্যানেজার জং জাওইয়ং পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন। সেখানে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায়, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আকতারুজ্জামান ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য চায়নিজ কর্মকর্তাবৃন্দ। ঢাকা ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এ প্রকল্প কাজ সফলভাবে সমাপ্ত হলে সরবরাহকৃত সারফেস ও আন্ডারগ্রাউন্ড পানির অনুপাত হবে ৪৫ দশমিক ৫৫ ভাগে নেমে আসবে। বর্তমানে এর পরিমাণ ৭৮ দশমিক ২২ ভাগ। এই শোধনাগারের পানি সমস্ত পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, ধানম-ি ও কারওয়ানবাজার আংশিক কাভার করবে বলে তিনি জানান। পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর যে উদ্যোগ ঢাকা ওয়াসা নিয়েছে এই প্রকল্প তারই অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
×