ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবেদনের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯১

সরকারী নীতিমালা মেনে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ব্যাপক সাড়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ মে ২০১৭

সরকারী নীতিমালা মেনে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ব্যাপক সাড়া

বিভাষ বাড়ৈ ॥ আদালতের রায় নিয়ে নামী কয়েক কলেজে নিজস্ব নিয়মে ভর্তি চললেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে সরকারী ভর্তি নীতিমালার আওতায় আসা সারাদেশের কলেজগুলোতেও। প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় সাড়া পড়ছে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়ায়। স্বস্তি প্রকাশ করছেন অভিভাবকরাও। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ শিক্ষা বোর্ডের কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অনলাইনে আবেদন করেছে ৮ লাখ ২০০ ও এসএমএস করেছে দুই লাখ ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী। আবেদনের সংখ্যা ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯১। কোন রকমের বিড়ম্বনা ছাড়াই গত ৯ মে থেকে দেশব্যাপী একযোগে চলছে নতুন নীতিমালা অনুসারে ভর্তি কার্যক্রম। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন অনলাইন বা টেলিটকে এসএমএস পাঠিয়ে আবেদন ইস্যুটি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি ও টেলিটক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন অনলাইনে কোন সমস্যা না হলেও প্রথম দিকে টেলিটকে এসএমএসের টাকা পাঠানোয় কিছুৃটা জটিলতায় পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তবে তা দ্রুতই নিরসন করা হয়েছে। এর ফলে এখন স্বাভাবিক গতিতেই আবেদনের ফি পাঠাতে পারছে শিক্ষার্থীরা। সকল বোর্ডের হয়ে যিনি বিষয়টিতে সর্বক্ষণিক নজর রাখছেন সেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মোঃ আশফাকুস সালেহীন শনিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল ফোনে এসএমএস এবং অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করছে ভালভাবেই। কোন বিড়ম্বনা নেই। অন্য বছর এই সময়ের তুলনায় এবার আবেদনের সংখ্যাও বেড়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে খবর রাখছি। সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত আশাপ্রদ। আবেদনের সংখ্যা উল্লেখ করে কলেজ পরির্দশক বলেন, এ পর্যন্ত আবেদন করেছে অনলাইনে ৮ লাখ ২০০ ও এসএমএস করেছে দুই লাখ ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী। মোট আবেদনের সংখ্যা ৫০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯১। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজে আবেদনের সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় ভাল উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেছে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৬ জন। আবেদনের সংখ্যা ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৭। একেকজন শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন ৫টি সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের অনুকূলে আবেদন করতে পারছে। এদিকে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও। অনলাইন ও টেলিটকে আবেদন করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আয়েশা। সন্তোষ প্রকাশ করে সে বলছিল, আমি ভিকারুননিসা থেকেই জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছি। নীতিমালা অনুসারে আমরা আমাদের কলেজে ভর্তিতে অগ্রাধিকার পাব। তার পরও যদি কোন সমস্যা না হয় তাই পছন্দের কয়েকটিতে আবেদন করেছি। কোন সমস্যা হয়নি। নিজের টেলিটক মোবাইল থেকেই এসএমএস করেছি। কোন সমস্যা হয়নি। তার মা সালেহা বেগম বলছিলেন, শুনেছি গবনির্ং বডির একজন সদস্যের রিটের পর আদালত এ প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব নিয়মে ভর্তির পক্ষে রায় দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষও আপীল করেছে। আবেদন ভালভাবে হয়েছে। আশা করি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করেই পদক্ষেপ নেবে। আমরা কোন জটিলতা চাই না। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুর রহমান অনলাইন ও এসএমএস ভর্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন, সকল কার্যক্রম অত্যন্ত সুন্দরভাবে চলছে। ঝামেলা ছাড়া আবেদন করছে প্রার্থীরা। ঝামেলা একদম কমে গেছে কলেজগুলোর। আবেদনের ফি কেটে নেয়া হচ্ছে মোবাইল থেকে, আর প্রার্থীরা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কোন রকমের ঝামেলা ছাড়া আবেদন করতে পারছে পছন্দের অন্তত ১০টি কলেজে। একদিকে টাকা সাশ্রয় হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দৌড়াতে হচ্ছে না কলেজে কলেজে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলছিলেন, টেলিটকের আবেদন চলছে সুন্দরভাবে। আবেদন নিয়ে কলেজগুলোরও কোন চাপ নেই এখন। আমাদের কাজ শুরু হবে তালিকা প্রকাশের পর ভর্তি শুরু হলে। অনলাইনে হওয়ায় আমাদের কোন চাপ নেই। নেই কোন ভর্তির তদ্বিরও। এদিকে আদালতের রায়ের পর ভিকারুননিসা নূন কর্তৃপক্ষ এখনও সরকারী নীতিমালা মেনেই ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। একজন সদস্য রিট করলেও অন্যরা সরকারী নিয়ম মেনেই ভর্তি অব্যাহত রাখতে চায়। তবে আদালতের রায় নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কাজ চলছে তিন প্রতিষ্ঠানে। উচ্চ মাধ্যমিকে মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালা রাজধানীর ওই তিন কলেজের ক্ষেত্রে স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। ফলে এসএসসির ফলের মেধা তালিকায় নয়, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই রাজধানীর হলিক্রস, নটর ডেম ও সেন্ট জোসেফ কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে। জানা গেছে, নটর ডেম কলেজে চলছে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া। ১৬ মে থেকে শুরু হয়েছে আবেদন। চলবে আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত। এছাড়া হলিক্রস কলেজে ১৯ মে থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। শেষ হবে আজ। পরীক্ষা হবে আগামী ২৬ মে। সেন্ট জোসেফ স্কুল এ্যান্ড কলেজে ১৭ মে থেকে শুরু হয়েছিল আবেদন। শনিবার ছিল আবেদনের শেষ সময়। জানা গেছে, সারাদেশে নীতিমালা তিন বছর ধরে বাস্তবায়ন হলেও নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফ স্কুল এ্যান্ড কলেজ শুরু থেকেই আদালতে নীতিমালার স্থগিতাদেশ নিয়ে নিজস্ব নিয়মে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। তারা আদালতে রিট করে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েই করছে শিক্ষার্থী ভর্তি। সরকারী নিয়ম মানলে একদিকে ভাল শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব নয়, অন্যদিকে তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে-এমন অভিযোগ এনে আদালতে রিট করে জয়ী হয় তিন প্রতিষ্ঠান। একই প্রক্রিয়ায় এবারও তারা পেয়েছে আদালতের রায়। সেই রায় নিয়ে ইতোমধ্যেই তারা শুরু করেছে ভর্তি কার্যক্রম। দেশের সরকারী-বেসরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন জমা নেয়া চলবে ২৬ মে পর্যন্ত। ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। এ বছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ছাড়াও ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাও একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে। বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) এবং কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবার একাদশে ভর্তির আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
×