ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বললেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নারীবাদী নেত্রী কমলা ভাসিন

নারীর শ্রম, প্রজনন ও মগজ শোষণ করেই পুরুষ লাভবান হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ মে ২০১৭

নারীর শ্রম, প্রজনন ও মগজ শোষণ করেই পুরুষ লাভবান হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতাকারী তথা ‘ধর্ষক’ সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত নারী অধিকার নেত্রী কমলা ভাসিন। বাংলাদেশে কয়েকটি সাম্প্রতিক আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এই নারী নেত্রী বলেন, গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে তিনটি রেপ হয়েছে; এক বাবা তার আট বছরের মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে, একজন নারী পুলিশ কনস্টেবল তার পুরুষ সহকর্মী দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে আর হয়েছে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা। সেইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, বনানীর রেইনট্রিতে ঘটা ধর্ষণের বিচার নিয়ে এত কথা হচ্ছে, অন্য দুই ধর্ষণের বিচার নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই কেন? নারীর প্রতি বৈষম্য-সহিংসতার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় নারীবাদী গণআন্দোলন মঞ্চ ‘উদ্যমে উত্তরণে শতকোটি’ আয়োজিত ‘কমলার সাথে একবেলা’ শীর্ষক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সব ধর্ষণের বিচার দাবি করেন দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের এই নারীবাদী মুখপাত্র। শনিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নারীর ওপর চলমান সহিংসতা ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, কেউ ধর্ষক হয়ে জন্ম নেয় না, তুমি-আমি-আমরা ওদের ধর্ষক বানিয়েছি। মেয়েদের পোশাক ও খোলামেলা চলাফেরা পুরুষদের ধর্ষণে প্রলুব্ধ করে- সমাজে প্রচলিত এই মনোভাবের কড়া সমালোচনা করেন দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাওয়া কমলা ভাসিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওরা বলে আমরা দেহ আবৃত রাখি না বলেই ধর্ষিত হই; অথচ নিজেরা সব জায়গায়, সব সময় মূত্রত্যাগ করে। আমরা (নারীরা) ধর্ষক হলে দক্ষিণ এশিয়ার সব পুরুষ ধর্ষিত হত। মেয়েদের পরিবারের সদস্যদের ‘পুরুষতন্ত্রের পুতুল’ হিসেবে অভিহিত করে কমলা বলেন, চলন্ত বাসে নারী দেহে হাত দেয়া ছেলেদের পরিবার জানতে চায় না তার সন্তান ঘরের বাইরে কি করছে; কিন্তু মেয়ে কী পোশাক পরল, তা নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই! ‘যৌনতা-আকাক্সক্ষা নয়, ধর্ষণের মূলে রয়েছে ক্ষমতা, এটি ‘ক্রাইম অব পাওয়ার’। পুরুষতন্ত্রকে ‘কুসংস্কার’ হিসেবে অভিহিত করে নারীর চুল থেকে পা পর্যন্ত পুরুষের নিয়ন্ত্রণে এমন মন্তব্য করে কমলা বলেন, তারা বলে ঈশ্বর আমাদের ‘ইনফেরিয়র’ করে সৃষ্টি করেছে, অথচ প্রজনন ছাড়া নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই। অথচ প্রতিনিয়ত পুরুষরা আমাদের শ্রম, যৌনতা, প্রজনন ও মগজকে শোষণ করে লাভবান হচ্ছে। তারা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে চায় না, কারণ আমরা স্বাধীন হলে তারা শোষণ করতে পারবে না। তাই চার দেয়ালে আটকে রাখতে চায়, ঘর থেকে বের হতে দিতে চায় না। আমরা যত বাইরে বের হব তত আমাদের ওপর সহিংসতা কমবে। নারী অধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী শুরু হওয়া আন্দোলন ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সমন্বয়ক কমলা ভাসিন ১৯৭৬ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তার কাজ শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘে কাজ শুরু করলেও ২০০২ সালে চাকরি ছেড়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ নারী নেটওয়ার্ক-‘সঙ্গত’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ‘উদ্যমে উত্তরণে শতকোটি’র বাংলাদেশ সমন্বয়ক খুশি কবির এবং ‘সঙ্গতের’ কোর কমিটির সদস্য ফৌজিয়া খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
×