ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরদের টালবাহানা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২০ মে ২০১৭

কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরদের টালবাহানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সীমাহীন কলড্রপে মোবাইল গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের বার বার নির্দেশ দেয়ার পরও কলড্রপের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। কলড্রপের ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে গত বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। প্রায় এক বছর আগে অপারেটরদের এই নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। কিন্তু অপারেটররা বিটিআরসির নির্দেশ উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তারা গ্রাহকের কলড্রপের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ বাস্তবায়ন করার বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন এক কোটি ৮০ লাখ মিনিট কলড্রপ হচ্ছে। অপারেটররা দিনে কলড্রপ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, কলড্রপের জন্য গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ আছে। কিন্তু অপারেটররা এটা বাস্তবায়নে নানা টালবাহানা করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরদের আবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে বসে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা হবে। গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষা করতে বিটিআরসি কাজ করছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা বা ‘টকটাইম’ ফেরত দেয়ার নির্দেশটি বাস্তবায়ন করার জন্য মোবাইল অপারেটরদের গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জুনের মধ্যে অপারেটররা এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। সম্প্রতি বিটিআরসি কলড্রপের ক্ষতিপূরণ নিয়ে অপারেটরদের আবার চিঠি দিয়েছে। এবারের চিঠিতে বলা হয়েছে, কলড্রপের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন নির্দেশের পরও মোবাইল অপারেটররা এ বিষয়ে কোন উদ্যোগই নিচ্ছে না। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ছয়টি অপারেটরের দিনে মোট কলের সংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি মিনিট। এর মধ্যে গড় কলড্রপের হার ১ শতাংশ। এই হিসাবে প্রতিদিন কলড্রপ হচ্ছে এক কোটি ৮০ লাখ মিনিট। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখ। এতে গ্রাহকপ্রতি কলড্রপের হার শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। অপারেটররা বলছে, ইন্টার-কানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের দুর্বলতার কারণেও কলড্রপ হচ্ছে। এর বাইরে ফাঁকা স্থানে হঠাৎ উঁচু ভবন নির্মাণ এবং থ্রি-জি নেটওয়ার্ক কার্পেটিংয়ের কারণেও কলড্রপ হচ্ছে। কলড্রপ একদম হবে না এ কথা বলা যাবে না। নেটওয়ার্কের কারিগরি ত্রুটি কখন দেখা দেবে তা বলা যাবে না। যে কোন সময় এই ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তখন কমবেশি কলড্রপ হবে। আইটিইউয়ের বেঁধে দেয়া নিয়মেও কলড্রপ স্বীকৃত। বিটিআরসি বলছে, কলড্রপ হতে পারে। তবে এটা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কলড্রপ হলে গ্রাহক টাকা বা সমপরিমাণ টকটাইম ফেরত পান। বিশ্বের অনেক দেশেই এই নিয়ম চালু আছে। আমরা কলড্রপের টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে অপারেটরদের বলে যাচ্ছি। কিন্তু তারা নানা কারণ দেখিয়ে এটা বাস্তবায়ন করছে না। বিটিআরসি বলছে অপারেটরদের দেয়া হিসাবের বাইরে অনেক বেশি কলড্রপ হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি আইটিইউয়ের (আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) নীতিমালার বাইরে কতগুলো কলড্রপ হয় তা মনিটর করবে। যদি আইটিইউয়ের নীতিমালার বাইরে কলড্রপ হয় তাহলে অপারেটরকে ওই টাকা বা টকটাইম গ্রাহককে দিতে হবে। কলড্রপের বিষয়ে মোবাইল গ্রাহকরা সিরিয়াস, মন্ত্রণালয়ও সিরিয়াস। বিটিআরসির কোয়ালিটি অব সার্ভিসের ওপর সজাগ থাকতে হবে। যে কোন গ্রাহক কলড্রপের বিষয়ে বিটিআরসিতে মোবাইল ফোন, টেলিফোন, ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়টি অপারেটররা কোনভাবেই মেনে নেয়নি। পরে প্রতি কলড্রপে এক মিনিট করে ক্ষতিপূরণ দিতে অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। এতেও কোন কাজ হয়নি। কলড্রপ নিয়ে মোবাইল অপারেটররা বলছে, নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রতিবন্ধকতাই কলড্রপের বড় কারণ। যেমন ঢাকার একটি স্থানে গ্রাহক বেড়ে গেছে কিংবা বড় বড় উঁচু দালান ওঠার কারণে উন্নত সেবা ধরে রাখতে সেখানে আরও বেশি বেস ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) বসানো প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে বিটিএস বসানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যায় না। এখন বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা, এমনকি সরকারী অফিসের কর্মকর্তারাও বিটিএস বসানোর জন্য ভবনের ছাদ ব্যবহার করতে দিতে চান না। আবার যেখানে স্থান পাওয়া যায়, সেখান থেকে পুরো এলাকায় বৃত্তাকারে সমমানের নেটওয়ার্ক সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে কলড্রপ হচ্ছে। আবার ইন্টার-কানেকশন এক্সচেঞ্জে ত্রুটির কারণে কলড্রপ হয়। এই এক্সচেঞ্জ পৃথক লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে ট্রান্সমিশন কেবল একবার কাটা পড়লে সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সেই নেটওয়ার্ক ঠিক করতে দু-তিনদিন পর্যন্ত সময় নেয়।
×