স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের কারাগার ব্যবস্থাপনা এখন বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অনেক উন্নত বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বৃহস্পতিবার কারা নিরাপত্তা ও মানবিক চাহিদার ভারসাম্য শিরোনামে চতুর্থ এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৫টি দেশের সংশোধনাগার ব্যবস্থাপক তথা কারা বিভাগের প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত আঞ্চলিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে তিনি এ কথা বলেন। ‘কারা নিরাপত্তা ও মানবিক চাহিদার ভারসাম্য প্রতিপাদ্যে’ প্রথমবারের মতো বিশ্বের এত সংখ্যক কারা বিভাগের প্রধানদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করায় তিনি কারা বিভাগ ও তার সঙ্গে সহযোগিতাকারী কারা বিভাগের সব সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইশবাল হাসান, সব উপ-কারা মহাপরিদর্শক, সহকারী কারা মহাপরিদর্শকসহ উর্ধতন কারা কর্মকর্তাগণ ও আইসিআরসির কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। দেশে প্রথমবারের মতো ১৬ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চার দিনব্যাপী রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে কারা অধিদফতর ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) কর্তৃক এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এইচ টি ইমাম বলেন, এক সময় বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে কোন বাতি ছিল না, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ছিল না, গরমে কষ্ট করতে হতো। কারণ কোন প্রকার পাখার ব্যবস্থাও ছিল না। আটক বন্দীকে স্বাস্থ্যসেবাও ঠিকমতো প্রদান করা সম্ভব হতো না। বিনোদনের জন্য কোন প্রকার ব্যবস্থাও ছিল না। এমনকি কোন টেলিভিশন পর্যন্ত ছিল না। বর্তমানে এর চেহারা পাল্টেছে। বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সাল থেকেই কারা উন্নয়নে বেশ মনোযোগ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার কারণে কারাবন্দীর মানবিক চাহিদা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতিতে অকল্পনীয় উন্নতি সাধন করেছেন। বর্তমানে কারা বিভাগের উন্নয়নের জন্য কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারাগার ভিজিট করছেন। এর ফলে কারাবন্দীর উন্নতিতে তা কাজে লাগছে। এছাড়া কারা ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। এজন্য ট্রেডভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এক সময় প্রায় সব বন্দীকেই এক রকম শ্রেণীতে রাখা হতো। বর্তমানে রাজনৈতিক নেতা, এমপি-মন্ত্রী, সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন পদবির লোকদের প্রথম শ্রেণীর বন্দীর মর্যাদা প্রদান করা হচ্ছে। বন্দীর শ্রেণী বিন্যাসের বিষয়েও কাজ চলমান রয়েছে। কারাগারসহ নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ’৭৬ সাল পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশীদের সহায়তায় অনেক কাজ করেছে। এরপর তারা চলে গেলেও নতুন করে আবার বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছে। প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অয়োজনে সহায়তা করায় তিনি আইসিআরসিকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ বেসরকারী সংস্থাটি অত্যন্ত উদার। বর্তমানে বিভিন্ন কারাবন্দীর স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে বিদেশে আটক যেসব বাংলাদেশী বন্দী বিশ্বের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করছে ও দেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করছে। তিনি ভবিষ্যতেও সহযোগিতার এ ধারা অব্যহত রাখার আহ্বান জানান।
এইচ টি ইমাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারা বিভাগের উন্নয়ন নিয়ে বেশ চিন্তিত। কারণ তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন কারাগারে অন্যায়ভাবে দীর্ঘ বছর বন্দী ছিলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজেও কিছুদিন কারাবন্দী ছিলেন। তিনি কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীনকে উদ্দেশ করে বলেন, আশা করি এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উঠে আসা বিভিন্ন মতামত কারা ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগাবেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের কারা বিভাগের প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ প্রদান করেন। অনুষ্ঠান শেষে শতাধিক শিল্পীর সমন্বয়ে সম্মেলনে আসা ১৫ দেশের মোট ৫৩ ডেলিগেটকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরতে এক আড়ম্বরপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ সম্মেলনের শেষ দিন উপলক্ষে অতিথিগণ কারাগার পরিদর্শনের অংশ হিসেবে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীন, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ভানুয়াতু। ঢাকায় সম্মেলনের আগে ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কায়, ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার এবং ২০১৪ সালে ফিলিপিন্সে পূর্ববর্তী সম্মেলনগুলো অনুষ্ঠিত হয়।