ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাঁখাশিল্পে জীবিকা

বিবাহিত নারীর গৌরব কানের টপ, খোঁপার কাঁটা, ক্লিপ ও মালা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৫ মে ২০১৭

বিবাহিত নারীর গৌরব কানের টপ, খোঁপার কাঁটা, ক্লিপ ও মালা

সাজেদ রহমান ॥ বিবাহিত হিন্দু নারীর গৌরবের প্রতীক হাতের শাঁখা। হাতে হরেক রকমের চুড়ির সঙ্গে শঙ্খবলয় না থাকাাঁ কোন রমণীই ভাবতে পারেন না। বিষয়টি একেবারেই ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত। আর এ শাঁখা তৈরিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শাঁখাশিল্প। দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায়ও অনেক আগে থেকে গড়ে উঠেছে শাঁখাশিল্প। তবে বর্তমানে মাত্র একটি গ্রামের কয়েকটি পরিবার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে ধরে রেখেছে। বংশপরম্পরায় এ শিল্পের ওপর ভর করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছে উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের মানিকদাহ গ্রামের বারোটি পরিবার। বাঘারপাড়া উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার পূর্বে মানিকদাহ গ্রাম। মানিকদাহ বাঁওড়ের দক্ষিণ পাড়ে বেলেডাঙ্গা বাজারসংলগ্ন ছোট্ট এ গ্রামটি। দ্বীনবন্ধু দত্তের ছেলে দিলীপ দত্ত (৪৪) পিতার কাছেই এ কাজ শিখেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি এ পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, তার দাদাও শাঁখার কাজ করতেন। বংশপরম্পরায় চলে আসছে তাদের এ কাজ। তার পিতা-মাতার বয়স হয়ে গেছে। তারা এখন আর কাজ করেন না। স্ত্রী রীতা দত্ত ও ছোট ভাই পরিমল মিলেই এখন সব কাজ করেন। একই রকম আরও এগারোটি পরিবার আছে ওই গ্রামে, যারা পরিবারের সবাই মিলে এ শিল্পের কাজ করে থাকেন। শঙ্খ সংগ্রহ এবং কিভাবে তৈরি করা হয় শাঁখা- এ নিয়ে কথা হয় দিলীপ দত্তের সঙ্গে। তিনি জানান, খুলনার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শঙ্খ কেনা হয়। সেখান থেকেই শঙ্খ কাটিয়ে আনা হয়। আমরা শুধু পালিশ ও নক্সার কাজ করি। প্রতিটি শঙ্খের প্রকার ও আকার ভেদে ২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যায়। বড় আকৃতির একটি শঙ্খ থেকে ৫-৬টি শাঁখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুটি শাখা হয় ভাল মানের, যার ওপর সোনা-রুপার কাজ করা হয়। একে বলে বাঁধানো শাঁখা। এর এক জোড়া এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বাকিগুলোর প্রতিটি ২ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। দিলীপ আরও বলেন, পাইকাররা শ্রীলঙ্কা থেকে শঙ্খ আমদানি করেন। সম্প্রতি ভারত থেকেও তা আমদানি হচ্ছে। হাতেগোনা মাত্র কয়েক ব্যক্তি এসবের আমদানিকারক। তারা নানান অজুহাতে বেশি দাম নিচ্ছেন। খুলনার পাইকারি ব্যবসায়ী জীবন দাসের সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি বলেন, আগে সরকার আমদানি করা শঙ্খের ওপর ৩৩ ভাগ শুল্ক নিত। এখন নিচ্ছে ২৩ ভাগ। তার পরেও ব্যবসা আগের মতো চলছে না। আগে বছরে তিন থেকে চারবার শঙ্খ আমদানি করতে হতো। এখন বছরে একবার করলেই চলে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে জীবন দাস বলেন, ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে নিম্নমানের শঙ্খের চুড়ি (বালা) আমদানি হচ্ছে। চোরাই পথেও তা ঢুকে পড়ছে। সে কারণে শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করা শঙ্খের ব্যবসায় ভাটা পড়ছে। হাতের শাঁখা তৈরির জন্য যেসব শঙ্খ ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে তিতকৌড়ি, গৌরী, ঝাঁজি, কাচ্চাম্বর, পাটি, দোয়ানি ও রামেশ্বরী উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে তিতকৌড়ি শঙ্খের দাম সবচেয়ে বেশি। জীবন দাস আরও বলেন, হাতের শাঁখা হলো শঙ্খশিল্পের প্রধান দিক। এ বাদেও শঙ্খ দিয়ে নানান জিনিস তৈরি করা হচ্ছে ইদানীং। যেমন কানের টপ, খোঁপার কাঁটা, চুলের ক্লিপ, মালা, আংটি, বোতাম, আতরদানি, এ্যাশট্রে ও পেপারওয়েট। এছাড়াও শঙ্খের গুঁড়া প্রসাধনী ও সিঁদুর তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের বিশেষ ভূমিকার প্রয়োজন রয়েছে।
×