ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ১৩শ’ মানুষ শেয়াল-কুকুরের খাবার হয়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৫ মে ২০১৭

সাড়ে ১৩শ’ মানুষ শেয়াল-কুকুরের খাবার হয়

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ আজ পহেলা জ্যৈষ্ঠ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে বরিশালের উত্তর জনপদের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ও রাংতা গ্রামের অংশের কেতনার বিলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে জীবন দিতে হয়েছে পার্শ্ববর্তী আট গ্রামের নিরীহ দেড় সহস্রাধিক লোককে। সেদিন রাজিহার গ্রামের ‘পাত্র’ বংশেরই কাশী নাথ পাত্র, বিনোদ পাত্র, বিনোদের স্ত্রী সোনেকা পাত্র, কন্যা গীতা পাত্র, কানন পাত্র, মঙ্গল পাত্র, মঙ্গলের মা হরিদাসী পাত্র, কন্যা অঞ্জলি পাত্র, দেবু পাত্রের স্ত্রী গীতা পাত্র, মোহন পাত্র, কন্যা ক্ষ্যান্তি পাত্র, কার্ত্তিক পাত্রর স্ত্রী শ্যামলী পাত্র তার ১২ দিনের শিশুপুত্র অমৃত পাত্র, কন্যা মঞ্জু পাত্র, মতি পাত্র, লক্ষ্মী কান্তর স্ত্রী সুমালা পাত্র, নিবারনসহ একই বাড়ির ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরমধ্যে ১২ দিনের শিশু অমৃতকে বুটের তলায় পৃষ্ট করে ও নিবারনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে নরপশু পাক সেনারা। দেশ স্বাধীনের পর স্বজন হারানো পরিবারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির মুখেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ গণহত্যার স্থানে শহীদদের স্মরণে আজও নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। আজও দেয়া হয়নি নিহতদের কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘ ৪৬ বছরে কেতনার বিলের শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সর্বত্র তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজিহার গ্রামের কাশী নাথ পাত্রের পুত্র অমূল্য পাত্র জানান, ৭১ সালের ১৪ মে রবিবার মোতাবেক ১৩৭৮ সালের ১ জ্যৈষ্ঠ স্থানীয় লোকজন ঢাল-সড়কি নিয়ে বাঁকাই গ্রামে পাক হানাদারদের চার সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে গৌরনদী কলেজের পাক শিবিরে। তারা স্থানীয় আলবদর ও রাজাকারদের সহযোগিতায় গৌরনদী ক্যাম্প থেকে পশ্চিম দিকে চাঁদশীর বাজার হয়ে বাকাই গ্রামের দিকে ছুটে জনতার ওপর এলএমজির ব্রাশ-ফায়ার শুরু করে। পাক সেনাদের ভয়ে সেদিন চাঁদশী, রাংতা, রাজিহার, চেঙ্গুটিয়া, টরকী, কান্দিরপাড়সহ আটটি গ্রামের নিরীহ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেয় রাংতা গ্রামের কেতনার বিলের ধান ও পাট ক্ষেতে। সূত্রমতে, স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী সৈন্যরা কেতনার বিলে লুকিয়ে থাকা নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর গুলি করে অন্তত দেড় সহস্রাধিক নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এরপর রাজিহার গ্রামের হিন্দুপাড়ায় আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় বাড়িঘর। চলে লুটপাট। অমূল্য পাত্র আরও জানান, ওই সময় প্রাণ বাঁচাতে পালানো মানুষের ভিড়ে বিভৎস লাশ সৎকার বা কবর দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পরেও মৃত্যুপুরী থেকে পাত্র বাড়ির বেঁচে যাওয়া হরলাল পাত্র ও অমূল্য পাত্রর নেতৃত্বে হরলালের পুত্র সুশীল পাত্র, কেষ্ট পাত্র, রাধা কান্ত পাত্রসহ কয়েকজনে পরেরদিন তাদের হারানো স্বজনসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোকের লাশ এনে তাদের পাত্র বাড়ির পার্শে¦র কয়েকটি স্থানে বড় বড় ছয়টি গর্ত করে একত্রে মাটি চাঁপা দিয়ে রাখেন। বাকি লাশগুলো কেতনার বিলে শেয়াল, কুকুরের খাবার হয়ে যায়।
×