ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে তেলেসমাতি- বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৪ মে ২০১৭

ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে তেলেসমাতি- বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পবিত্র রমজান আসন্ন। প্রতিবছরের মতো এবারও ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে ছোলার মূল্য টনপ্রতি ৭০ হাজার টাকা থেকে ৭৬ হাজার টাকায় উন্নীত হওয়ার পর শনিবার তা আবার ৭২ থেকে ৭৩ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। ভোগ্যপণ্যের মধ্যে মূলত ছোলার বাজার মূল্য নিয়েই আলোচনা বেশি। অনুরূপভাবে ভোজ্য তেলের (পাম ও সয়াবিন) বাজার মূল্য শনিবার মণপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশজুড়ে তিনটি ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেল বিক্রি অনেকটা বন্ধই রেখেছে। বাজার বৃদ্ধি ঘটানোর লক্ষ্য এ পরিকল্পনা বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চিনির বাজারও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ডালের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের বাজার মূল্য ঢাকার বাজার মূল্যের চেয়ে কমে রয়েছে। ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার যে একটি পাঁয়তারা হয়েছিল তা সফল হয়নি বলে ধারণা পাওয়া গেছে। ছোলার মূল্য আকস্মিকভাবে কেন বৃদ্ধি পেল। এ ব্যাপারে যদিও আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির এ ঘটনা। পক্ষান্তরে পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, ঘটনাটি আমদানিকারকদের কারসাজি। এর সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গেল সপ্তাহে মূল্য বেঁধে দেয়ার একটি অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় ছোলা ও চিনির বাজার মূল্যকে উর্ধমুখী করে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। কেননা জেলা প্রশাসন ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার অধিকার রাখে কিনা তা নিয়ে। তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে পুরো ঘটনাটি বিপুল অঙ্কের বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটি পরিকল্পিত ঘটনা থাকলেও তা সম্পূর্ণভাবে সফল হয়নি। পরিকল্পনাকারীরা সকলেই চিহ্নিত। তবে তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের আগ বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে দেয়ার ঘটনাটি এবার নতুন সংযোজন। গেল সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আমদানিকারকদের সঙ্গে একটি বৈঠক আহ্বান করে। ছোলার মূল্য কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় নির্ধারণ করে দেয়। ফলে টনপ্রতি ৭০ হাজার টাকার ছোলা খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ৭৬ হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে দায়ী করার পর আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। প্রচার মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় শনিবার সপ্তাহের প্রথম দিন ছোলার মূল্য টনপ্রতি ৭২ থেকে ৭৩ হাজার টাকায় নেমে আসে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি কি হয় এ নিয়ে উৎকণ্ঠিত ক্রেতারা ছোলা নিয়ে ধীরগতির পথ বেছে নিয়েছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার। ভোগ্যপণ্য নিয়ে আমদানিকারকদের অলিখিত একটি সিন্ডিকেটও রয়েছে। এছাড়া প্রায় দুই মাস সময় ধরে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়ে এসেছে চাহিদার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। সবকিছু ঠিকভাবে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ছোলার মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে গেল। তার ওপর জেলা প্রশাসনের একটি রহস্যজনক সিদ্ধান্ত ছোলার মূল্যকে এক লাফে টনপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশিতে উন্নীত করে দিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে দুই আমদানিকারকের গোপন আঁতাত। এ আমদানিকারকদের নাম ব্যবসায়ীদের মুখে মুখে। এরা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বেও আসীন। গোপনে জেলা প্রশাসকের (বদলি হওয়া) সঙ্গে এক ধরনের আঁতাত করে ছোলার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে নিজেরা ফায়দা হাসিল করেছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, রমজান এলেই বিশেষ করে ছোলা, চিনি এবং তেলের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলে। এবার ছোলার মূল্য বেড়ে যাওয়ার ঘটনাটিও অনুরূপ একটি বিষয়। এ কারণেই ছোলার বাজার উর্ধমুখী হয়ে যায়। তেল এবং চিনির দামও বাড়ানোর অপচেষ্টা চলেছে। কিন্তু এতে সফলতা আসেনি। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের তথ্যানুযায়ী গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বিদেশ থেকে ছোলা আমদানি হয়ে এসেছে প্রায় আড়াই লাখ টন। অথচ বছরে ছোলার চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ টন। আবার এর মধ্যে মার্চ মাস পর্যন্ত আমদানি হয়ে এসেছে আরও ৫৬ হাজার টন। বর্তমানে আমদানির এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে যা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাসে খোলা এলসির বিপরীতে ঐ সময়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ছিল ৮১ টাকা।
×