ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বেগম জিয়ার ‘ভিশন’

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৪ মে ২০১৭

বেগম জিয়ার ‘ভিশন’

রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখবে, সেই আকাক্সক্ষা থেকে তাদের কর্মপরিকল্পনার কথাও সবিস্তারে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেÑ তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই দল কোন্টি? ভাল ভাল আশার কথা শোনাতেই পারে একটি দল, কিন্তু সে দলটির অতীত বিশ্লেষণ করে যদি মনে হয় এসব কেবল বাৎ কি বাৎÑ তাহলে ঘটনাটি কিছুটা কৌতুক মিশ্রিত বিনোদনের যোগান দেয় বৈকি! বুধবার বিকেলে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন অনেকটা সেরকমই অভিজ্ঞতা দিয়েছে দেশবাসীকে। নেত্রীর নিজ দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ ওই সংবাদ সম্মেলনে ঘুমিয়েও পড়েন। অন্যরা বিরক্তি চেপে ঘন ঘন ঘড়ি দেখতে থাকেন। এ থেকেও তড়িঘড়ি ‘ভিশন’ ঘোষণার আন্তরিকতা ও গভীরতা সম্বন্ধে অনুমান করা সম্ভব। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষে শেখ হাসিনা দেশবাসীর সামনে ‘ভিশন-২০২১’ তথা রূপকল্প-২০২১ উপস্থাপন করেছিলেন। ইতোপূর্বে কোন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এ জাতীয় রোডম্যাপ উপস্থাপন করেনি। অনুরূপ আদলে বিএনপির এক ধরনের ‘ইশতেহার’ ঘোষণা তাই দলটির আইডিয়ার দেউলিয়াত্বেরই উদাহরণ। যদিও নতুনত্বহীন এই পরিকল্পনাপত্রটিকে আমরা নেতিবাচক বলছি না। ভাল ভাল কথার ফুলঝুরিতে ভরপুর এ রূপকল্পটিতে সংবিধান সংশোধনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টার বক্তব্যে ৩৩৫ বার ‘করা হবে’ শব্দের সংযোজন থেকে ড্রাফটির ভাষাগত ও চিন্তা সংক্রান্ত দুর্বলতা অবশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া থেকে দেখা যাচ্ছে, বেগম জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ প্রকৃত প্রস্তাবে একজন নেত্রীর ‘ভিশন বিলাস’ হয়ে উঠেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ একটি মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য, দ্বিচারিতাপূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। বেগম জিয়ার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার এই ভিশন-২০৩০ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন; এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। এই ভিশন জাতির সঙ্গে একটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন। তাদের ভিশন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ভিশন, সন্ত্রাসবাদ কায়েমের ভিশন, দেশ বিক্রির ভিশন’। ক্ষমতার ভারসাম্য আনা সংক্রান্ত প্রস্তাবটির যথাযথ সমালোচনা করেছেন প্রবীণ রাজনীতিক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। জনকণ্ঠকে প্রদত্ত প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের কোথাও এটি নেই। ভারত, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ কোথাও তা নেই। আর প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীই। দেশের নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ওপরই বর্তায়। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তার প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০-কে ‘ভ্রান্তিবিলাস’ উল্লেখ করে নেত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেনÑ তিনি যেসব ভাল কথা বলেছেন, ক্ষমতায় থাকতে তার কতটুকু পালন করেছেন? ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে আসা। ইতোপূর্বে জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে এবং প্রতিহত না করার ব্যর্থতায় বিএনপি দেশের মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদী আগুন সন্ত্রাসের সূচনা করেছিল। কোন সন্ত্রাসী দলের গালভরা বুলিতে দেশের মানুষ কতটা সাড়া দেয় সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
×