ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণভোট ফের চালু করার ঘোষণা ॥ ৩৭ দফা প্রতিশ্রুতি

বেগম জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ সংবিধান সংশোধনের ওয়াদা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১১ মে ২০১৭

বেগম জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ সংবিধান সংশোধনের ওয়াদা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষমতায় গেলে সুশাসনের অঙ্গীকার নিয়ে দলের রূপকল্প ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকেলে গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি তা ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করবে এবং জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। রাষ্ট্রের মালিকানা এখন জনগণের হাতে নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। আমরা ওয়ান ডে ডেমোক্র্যাসিতে বিশ্বাসী নই। তাই জনগণের ক্ষমতাকে কেবল ভোট দেয়ার দিনে আবদ্ধ রাখতে চাই না। খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’-এর ৩৭ দফায় রয়েছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গণভোট চালু করা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালুর বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সকল কালাকানুন বাতিল, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ, শিক্ষা টিভি চ্যানেল চালু, মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়া, রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি, গ্রাম আদালত কার্যকর করা, ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ বাতিল ও দুর্নীতি বন্ধ করার অঙ্গীকারও। এ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া তার প্রায় ২ ঘণ্টার বক্তব্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ভিত্তিক-ভিশন তুলে ধরেন। এদিকে শেষ পর্যন্ত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালুর অবস্থান থেকে সরে আসায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি। কারণ, এর আগে গত বছর ১৯ জানুয়ারি বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে সংক্ষিপ্ত আকারে ‘ভিশন-২০৩০’ প্রকাশ করতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন তার দল ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালু করবে। কিন্তু বুধবার ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণাকালে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালুর বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে। তার মুখে এ কথা শুনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ব্যাপক সমালোচনা করে। উল্লেখ্য, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালুর বিষয়টি ‘ভিশন ২০৩০’ এ থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে ২ দিনব্যাপী বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ব্যাপক বাগ্বিত-া চলে। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ চালুর বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ও একনায়কতান্ত্রিক শাসন চলছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার পরিবর্তে নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা প্রবর্তন করা হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণমুক্ত করা হবে। দেশে ন্যায়পাল ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন শ্রেয় এই ধারণা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধান যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনা করা বিএনপির লক্ষ্য। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র নির্বাসনকে প্রতিহত করবে। সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিচার বিভাগ ও পুলিশ বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করতে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও গুম-খুন বন্ধ করা হবে। জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও কারাগার সংস্কার করা হবে। দলীয় বিবেচনার উর্ধ্বে উঠে বিচারক নিয়োগ করতে বাছাই কমিটি ও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কমিটির মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ করা হবে। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। নিম্ন আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা হবে। গ্রাম আদালত কার্যকর করা হবে। উচ্চ পর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিটি গঠন করা হবে। সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে। চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা বাদে সকল কোটা বাতিল করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক করা হবে। জনগণের জন্য সকল সেবার মান উন্নত করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও জোরদার করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করবে। এ ছাড়া বেসরকারী চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন চালু করা হবে। সকল মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান ও ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত সকল স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করা হবে। দেশে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি জোরদার করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ করতে মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলারে উন্নত করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে শিক্ষা টিভি চ্যানেল চালু ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া তার ভিশন-২০৩০ কে সমর্থন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালীব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, যে কোন দেশের জনগণ বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়া এগুতে পারে না। দেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের। পরিকল্পনা দ্বারা জাতি পায় কর্মস্পৃহা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রচনা করতে পারে একটি সুখ ও শান্তির নীড়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে জাতিকে উন্নত সোপানের পথে পরিচালিত করা। এ পথ বাধা-বিঘœ মুক্ত নয়। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ১৯ মার্চ, ২০১৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যে সভাপতির ভাষণ দিয়েছিলামÑ তাতে বিএনপির ভিশন টুয়েন্টি-থার্টির একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরেছিলাম। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষজ্ঞ ও দলীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা প্রস্তুত করেছি। আপনাদের মতামত ও পরামর্শ সাপেক্ষে এটি আরও পরিশীলিত করার সুযোগ রয়েছে। আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এই সব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার অর্থাৎ একটি যর্থাথই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে আমাদের এই ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। মহান সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম দয়া ও ইচ্ছায় এই ভিশন বাস্তবায়ন সম্ভব হলে আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সুখী, সমৃদ্ধশালী, শোষণ ও নিপীড়নমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণমূলক আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র। এমন রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে আমরা গর্ব বোধ করব। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই হবে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। যে সব বাধা জনগণের মেধা, শ্রম, উদ্যোগ এবং উৎসাহকে দমিয়ে দেয় সেগুলো দূর করে বিএনপি বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃৃদ্ধ, আধুনিক ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ভিশন- ২০৩০ প্রণয়ন করেছে। বিএনপি মনে করে দেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল আজ সে রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। তাই দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি এমন এক উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করে যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। যত সংখ্যালঘিষ্ঠই হোক না কেন, কোন মত ও বিশ্বাসকে অমর্যাদা না করার নীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে। সুধী সমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনা করা বিএনপির লক্ষ্য। কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়এ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি প্রতিহত করবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত। এরূপ ব্যবস্থা সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্বীকৃত রীতির পরিপন্থী। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। বিদ্যমান অবস্থার অবসানকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা বাতিল, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, সংসদ বহাল রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তন, সংবিধানের কিছু বিষয় সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ এবং সংবিধানের কতিপয় ধারা-উপধারা সংশোধনের অযোগ্য করার বিধান প্রবর্তন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যাস্তকরণের বিধানসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে। বিএনপি এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলী পর্যালোচনা ও পুনঃপরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে। খালেদা জিয়া বলেন, জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে বিরোধী দলসমূহের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাবলিক এ্যাকাউন্টস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর অর্পণ করা হবে। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে জাতিকে পৌঁছাতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। এ জন্য দুর্নীতি, সুশাসন এবং সু-সরকারের সমন্বয় ঘটাবে বিএনপি। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়। সকল জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ইনক্লুসিভ সোসাইটি গড়ে তোলার মহৎ লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়াই বিএনপির নীতি। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যতমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এ জন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থপরতা ও দলীয়তার কালিমা মুক্ত করে এগুলোর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আইনী ও প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নেবে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বিগত দিনগুলোতে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। এ কারণেই ব্যক্তির বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং দলীয় আনুগত্যকে বিবেচনায় না নিয়ে কেবলমাত্র সততা, দক্ষতা, মেধা, যোগ্যতা, দেশপ্রেম ও বিচার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের প্রশাসন-যন্ত্র, পুলিশ এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে বিএনপি। প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, সততা, মেধার উৎকর্ষ এবং সৃজনশীলতাকে বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। দলীয় ও সকল প্রকার আইনবহির্ভূত হস্তক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর আইনানুগভাবে কর্তব্য পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে কোন আপোস করবে না। সমাজের সর্বস্তরে দুষ্টক্ষতের মতো ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ এর অফিস কার্যকর করা হবে। দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ ও কারাগার এ চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। বিএনপি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাসী; আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। আইনের শাসনের নামে কোন প্রকার কালা-কানুনের শাসন গ্রহণযোগ্য হবে না। সকল প্রকার কালা-কানুন বাতিল করা হবে। সকল প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে। মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধে উঠে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, দেশপ্রেম, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদ-ে যাচাই করে সকল আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। যোগ্যতা, মেধা ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদ- সম্বলিত আইন প্রণয়ন করে বাছাই কমিটি ও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত-সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদ বিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করে জনগণের জন্য ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা হবে। অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রীমকোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার জট কমিয়ে আনা হবে। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, দ্রুত ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সমাজে বিতর্কের ঊর্ধে থাকা সম্মানীয়, নীতিবান, যোগ্য ও আদর্শ মানুষদের দিয়ে পাইলট ভিত্তিতে ‘জুরি’ ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। আদালতে মামলার বোঝা কমানো এবং স্থানীয় বিচার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গ্রাম-আদালতকে উপযুক্ত সংস্কারের মাধ্যমে কার্যকর আদালত হিসেবে রূপান্তর করা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান ইউনিয়ন কাউন্সিল ব্যবস্থায় গ্রাম-আদালতের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী অনানুষ্ঠানিক সালিশী আদালত পুনঃপ্রবর্তন করা যায় কিনা তা’ পরীক্ষা করে দেখা হবে। বর্তমান বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমানে থানায় গেলে অনেক সময় পুলিশ মামলা নেয় না। এটা ডিনায়েল অব জাস্টিস। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দেশব্যাপী থানাগুলোতে অন-লাইন পদ্ধতি ও মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করে ফৌজদারি বিচার প্রার্থীদের আইনের নিরাপত্তা পাওয়ার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশ বাহিনীকে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশের মোটিভেশন, ট্রেইনিং ও নৈতিক উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী পুলিশের ওপর বিচার বিভাগীয় তদারকি নিশ্চিত করে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুলিশ বাহিনীকে দক্ষতাসম্পন্ন যুগোপযোগী সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জনগণের জান-মাল ও সম্ভ্রম রক্ষা এবং সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি চৌকস, দক্ষ, নিরপেক্ষ, জনকল্যাণমুখী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অনাকাঙ্খিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। পুলিশের কনস্টেবল-ট্রাফিক পুলিশ এবং এএসআই পর্যন্ত নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে একটানা ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য ঝুঁকিভাতা এবং ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা হারে যুক্তিসঙ্গত ওভার-টাইম ভাতা প্রদান করা হবে। এএসআই থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত পুলিশের আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী, জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সংস্কার করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও প্রান্তিক নৃ-গোষ্ঠী কোটা ব্যতিরেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে। গতিশীল বিশ্বায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধানের আলোকে একটি যথোপযুক্ত সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে। সকল পর্যায়ে ই-গবর্ন্যান্স চালু করা হবে। জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখ-তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে। জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকা- ও আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে বিএনপি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিএনপি অন্য কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোন রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপি দৃঢ় অঙ্গীকার করছে যে অন্য কোন রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোন প্রভু নেই। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বিশেষ স¤পর্ক গড়ে তোলা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে। বিএনপি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করবে। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। বিএনপি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি করা হবে এবং এই ভাতা ব্যবস্থাপনাকে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে। আগ্রহী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হবে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় যোগ্য ও দক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়Ñ দুঃখের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। বিএনপি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবে। মূল্যস্ফীতির নিরিখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাস-ট্রেনে-লঞ্চে যাতায়াতে নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক মূল্যে যাতায়াতের বিধান করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদ জাতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এ দেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারে অন্যতম কারণ। এ সমস্যার সমাধান না করতে পারলে জাতীয় উন্নয়নে সকল প্রয়াসই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। জাতি এক ভয়াবহ অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়বে। এ জন্য বিএনপি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদ সকল রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ। এ কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূ-খ-ের মধ্যে কোন রকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না এবং সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণে এসব গণবিরোধী চক্র নির্মূল করা হবে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকৌশল হিসেবে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতির মূল্যবোধ শক্তিশালী করা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করা হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিএনপি দরিদ্রবান্ধব ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বাসী। প্রবৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করে এবং এর সুফলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বিএনপি ধনী দরিদ্রের বৈষম্যের সমস্যাকে মোকাবেলা করবে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। এ সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ডবল ডিজিটে উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশে ভূমির অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করে শিল্প স্থাপন করার এবং ভূমির সীমিত ব্যবহারভিত্তিক আধুনিক সেবা খাত যেমন- ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আইটি ইন্ডাস্ট্রি, বিনোদন শিল্প, পর্যটন শিল্প, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, দূর-শিক্ষণ, এয়ার-হাব, ওয়াটার হাব, সিকিউরিটি সার্ভিস, বন্দর ও জাহাজ, টেলি- মেডিসিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ করার উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন, ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। শেয়ারমার্কেট এবং ব্যাংক লুটের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতে যাতে কেউ এমন দুর্নীতি-অনাচার করতে না পারে সেই লক্ষ্যে সিকিউরিটি এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে। বিএনপি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাকে সব সময় স্বাগত জানায়। সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচকের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে বিএনপি সর্বদা স্বচেষ্ট। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবাদমাধ্যমের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করবে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে।
×