ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নানা সঙ্কটেও হার মানেনি নিলা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১০ মে ২০১৭

নানা সঙ্কটেও হার মানেনি নিলা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ জীবনের নানা সঙ্কট মোকাবেলা করেই অদম্য নিলা এবারের এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। নিলার বর্তমান আবাস নগরীর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। তার জন্ম দুর্গাপুর উপজেলার বখতিয়ারপুর গ্রামে। এক ভাই এক বোনের সংসারে বাবা ছিলেন দিনমজুর। তার বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা মারা যায়। কিছুদিন পর মা দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর নিলার মা তাদের জায়গা-জমি সব বিক্রি করে দেয়। একপর্যায়ে নিলার সৎ বাবা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। জীবনের চরম সঙ্কটের পড়ালেখা থেকে দমেনি নিলা। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেক বড় হতে চায় সে। এই নিলার বেড়ে উঠার গল্পটা অনেকটাই আলাদা। জানা যায়, সৎ বাবার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পাঁচ বছরের নিলা তার ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে রাজশাহী শহরে চলে আসে। নিলার ভাই তার চাইতে এক বছরের বড়। রাজশাহী বাসস্ট্যান্ড থেকে এএসডি সংস্থা পরিচালিত পিকার প্রকল্পের এক চাইল্ড এক্সপার্ট নিলা ও তার ভাইকে ডিআইসি (ড্রপ ইন সেন্টার) নিয়ে যায়। নিলা সেখানে প্রায় সাত বছর অতিবাহিত করে। একপর্যায়ে পিকার প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর নিলাকে তার মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয়। কিছুদিন নিলা তার মায়ের কাছে থাকলেও পড়ে চরম ঝুঁকিতে। পরে তার ভাই তাকে এসিডি পরিচালিত শেল্টার হোমে রাখে। সেখান থেকে ইউসেপ স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। এ সময় পড়াশুনার পাশাপাশি নিলা হাতের কাজ শেখে। হাতের কাজ করে যে টাকা পেত তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাত নিলা। তবে এসিডির প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে নিলা আবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। নিলার ভাই একটি কম্পিউটারের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। সে স্বল্প আয়ের কারণে কম টাকায় বস্তি এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নেয়। সেই বস্তিতেই লেখাপড়া শুরু করে নিলা। নিলার ভাই প্রতিদিন সকালে কাজে যায় আর অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরে। ভাইয়ের অনুপস্থিতে তাদের প্রতিবেশী দুষ্ট ও বখাটে প্রকৃতির লোকেরা তাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। নিলা তার ভাইকে ব্যাপারটি জানালে তার ভাইও ভয় পেয়ে যায়। নিলা আবার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এবং অসহায়ভাবে দিনযাপন করতে থাকে। তবে পিছপা হয়নি লেখাপড়ায়। অবশেষে সমাজসেবা দফতর পরিচালিত নগরীর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে সুবিধাভোগী আরেক শিশু রকির মাধ্যমে নিলার ভাই তাকে এখানে রেখে যায়। সেন্টারের নিয়মানুযায়ী তাকে ক্রাইসিস পিরিয়ডে রেখে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নেয়। তার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে নিবন্ধনও করা হয় সেখানে। ২০১৫ সালের মে মাস থেকে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রাজশাহীতে রয়েছে নিলা। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বিভিন্ন ঝুঁকিতে থাকা শিশুরা অবস্থান করে এবং সরকারী অর্থায়নে নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করে। সেন্টারে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের ছয় মাস সময় অবস্থান করার কথা থাকলেও জেলা স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে সে নিয়মিতভাবে সেন্টারে থাকার সুযোগ পায় এবং ইউসেপ স্কুলে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। শান্ত ও ভদ্র প্রকৃতির মেয়ে নিলা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। লেখাপড়ার প্রতি তার দারুণ ঝোঁক। সে বরাবর ভাল ফল করে আসছিল। নিলা ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তবে আগামীতে তার পড়ালেখা কত দূর এগুবে এ নিয়ে চিন্তিত নিলা। তারপরেও জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেক বড় হতে চায় নিলা। বুশরার দারিদ্র্য জয় দারিদ্র্য রুখতে পারেনি বুশরাকে। বাবাহীন সংসারে নিত্য অভাব তাড়িয়ে বেড়ালেও কঠোর অনুশীলন ও অধ্যবসায়ের ফলেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সখিনা গার্লস হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে যশোরের কানিজ ফাতেমা বুশরা। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে বুশরার ইজিবাইকচালক বাবা সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দারিদ্র্যপীড়িত সংসারে নতুন করে শুরু হয় দারিদ্র্য। সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় নানা-নানি এবং মামাদের অতি সামান্য সাহায্যে কোন রকমে টেনেটুনে সংসার চলতে থাকে। ঠিকমতো তিন বেলা খাবারও জোটেনি সবসময়। সংসার চালাতে শেষ পর্যন্ত বুশরার মা, মাকসুদা খাতুন স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ নেন। কিন্তু এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ঘুরে পণ্য বিক্রির বিনিময়ে যে সামান্য পরিমাণ বেতন পান, তা দিয়ে সংসার চলে না কোনভাবেই। তাই প্রতিমুহূর্তে বুশরার শিক্ষাজীবন বন্ধ হওয়ার হুমকিতে পড়তে থাকে। এ রকম বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এ প্লাস পাওয়াতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মা ও মেয়ে। বুশরা ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে চায়। Ñবিজ্ঞপ্তি
×