ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিএস কারনানের ছয় মাসের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১০ মে ২০১৭

 কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিএস কারনানের ছয়  মাসের কারাদণ্ড

আদালত অবমাননার দায়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনানকে (সিএস কারনান) মঙ্গলবার ছয় মাসের কারাদ- দিয়েছে দেশটির সুপ্রীমকোর্ট। সাত সদস্যের একটি বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক সিএস কারনানকে ওই সাজা পড়ে শুনিয়েছে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মহাপরিদর্শককে আদেশ দেয়া হয়েছে অবিলম্বে কারনানকে গ্রেফতার করার জন্য। মঙ্গলবার বিচারপতি কারনানকে দেয়া ছয় মাসের কারাদ-ের আগের দিন সোমবার কারনান এক অভূতপূর্ব সাজা ঘোষণা করেন। সাজায় তিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরসহ সুপ্রীমকোর্টের আট জন বিচারকের পাঁচ বছরের কারাদ- ঘোষণা করেন, সঙ্গে এক লাখ টাকা করে জরিমানা। এমনকি তাদের পাসপোর্টও জমা রাখতে বলা হয় দিল্লীর পুলিশ কমিশনারের কাছে। খবর বিবিসি ও এনডিটিভির। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের বিচার বিভাগে নজিরবিহীন এই জটিলতার শুরু চলতি বছরের প্রথমদিকে। ওই সময় মাদ্রাজ হাইকোর্টের ৬১ বছর বয়সী বিচারপতি কারনান ভারতের ২০ জন ‘দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকের’ নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি পাঠান। এ ঘটনার পর তাকে বদলি করে কলকাতা হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এতে তিনি অভিযোগ করেন, দলিত শ্রেণীর মানুষ হওয়ায় তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা, আদালত অবমাননা মানহানির অভিযোগে দেয়া সর্বোচ্চ আদালতের সবগুলো আদেশ খারিজ করেছেন বিচারপতি কারনান। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে পাল্টা আদেশগুলো নিজের বাসায় বসেই সোমবার জারি করেছেন তিনি। তখন তিনি নিজের বাসাকে ‘হোম কোর্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। মানসিক সুস্থতা পরীক্ষার জন্য আসা চিকিৎসকদের ফিরিয়ে দিয়েছেন কারনান। জাতপাতের ভিত্তিতে বৈষম্য, ষড়যন্ত্র, হয়রানি ও অবমাননা মামলার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারপতি কারনান ভারতের প্রধান বিচারপতিসহ বিচারকদের ওই ‘সাজার আদেশ’ দেন। অবশ্য বিচারপতি কারনানের বিচারিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আগেই কেড়ে নিয়েছে সুপ্রীমকোর্র্ট। ফলে তার এসব নির্দেশের কোন আইনী বৈধতা নেই বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। গত বুধবার ওই বিচারকদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন বিচারপতি কারনান। পরদিন বিচারপতি কারনানের মানসিক সুস্থতা পরীক্ষার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠিয়েছিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু কারনান তাদের নিজ বাড়ির দরজা থেকেই বিদায় করে দেন। এ সময় তিনি নিজে ‘মানসিকভাবে সুস্থ’ আছেন বলে দাবি করেন এবং ‘একজন অভিভাবকের উপস্থিতি ছাড়া’ মেডিক্যাল টিমটি তাকে পরীক্ষা করতে পারবে না বলে যুক্তি দেখান। সর্বোচ্চ আদালত কারনানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনলে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন বিচারপতি কারনান। এরপর কথার লড়াইয়ের মধ্যে ভারতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহারের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ ১ মে বিচারপতি কারনানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল। উল্লেখ্য, আগামী এক মাসের মধ্যে বিচারপতি কারনানের অবসরে যাওয়ার কথা। এ দ্বন্দ্বের অবসানের জন্য সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেই ভারতের আইনবিদদের ধারণা।
×