ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামীণ মেলা আর উৎসবে মেতে উঠবে কবিগুরুর শিলাইদহ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ মে ২০১৭

গ্রামীণ মেলা আর উৎসবে মেতে উঠবে কবিগুরুর শিলাইদহ

এমএ রকিব ॥ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত সাংবাদিক সাহিত্যিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, অমর কথা সাহিত্যিক ‘বিষাদ সিন্ধু’র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন, বিপ্লবী বাঘা যতীন, বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান, জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক আকবর হোসেন এবং মহিলা সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ জোবেদা খানমসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক জন্ম নিয়েছেন বাংলার সাংস্কৃতিক অঞ্চল হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়ার মাটিতে। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের দেশ এই কুষ্টিয়া। তাদের পদচারণায় আউল-বাউল ও পীর-ফকিরের একতারার সুর-মূর্চ্ছনা আর পদ্মা-গড়াই বিধৌত এ জেলার মাটি হয়েছে ধন্য। এ মাটির সোঁদা গন্ধ মুগ্ধ করেছে সবাইকে। প্রাণে জাগিয়েছে অপূর্ব সাড়া। বোধকরি তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় করেছিলেন নীড় রচনা। কবি একসময় কুষ্টিয়ার যে গ্রামে বসবাস করেছিলেন সেই গ্রামটির নাম ‘শিলাইদহ’। তিনি যে লেখার জন্য নোবেল পুরস্কারে বিশ্বখ্যাত হয়েছিলেন; সেই গীতাঞ্জলীর কাব্যরস যে তিনি শিলাইদহ থেকেই পেয়েছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিলাইদহ কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে। এ গ্রামেই রয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিমাখা ঐতিহসিক ‘কুঠিবাড়ি’। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের রস অন্বেষণে বারবার ছুটে এসেছেন এই শিলাইদহে। এখানে বসে লিখেছেন, সোনার তরী, দুই বোন, চিরকুমার, চিত্রাঙ্গদা, অচলায়তন, রাজা, ক্ষুধিত পাষাণসহ বহু কবিতা-গল্প-উপন্যাস। লিখেছেন, ‘অন্তরমম বিকশিত কর অন্তর তর হে’, ‘জগতে আনন্দ যজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’, ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’সহ অসংখ্য গান। কিন্তু কবির স্মৃতিধন্য এই কুঠিবাড়িটি দেখে আজ মনে হয় নিতান্তই ঠেকায় পড়ে এটিকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল শিলাইদহে দ্বিতীয় ‘শান্তিনিকেতন’ আদলে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নও পূরণ হয়নি। পদ্মার ঢেউ খেলানো প্রাচীর ঘেরা ৩৩ বিঘা জমির ওপর তিনতলা এই কুঠিবাড়িই আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে শিলাইদহের বুকে। চারদিকে আমবাগানের ছায়াঘেরা স্নিগ্ধ পরিবেশ। কাছেই পদ্মা। সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ। স্বয়ং ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি কবিগুরুর স্মৃতিধন্য কুঠিবাড়ি পরিদর্শন করে শিলাইদহের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন আরও। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ তিনি কুঠিবাড়ি পরিদর্শন করেন। বিশ্বকবির এ স্মৃতিকে ঘিরে প্রতিবছর ২৫ বৈশাখ এখানে জমে উঠে উৎসব, বসে বিরাট গ্রামীণ মেলা। নামে মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ কয়েক হাজার দর্শনার্থীর। এবারও ২৫ বৈশাখ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিলাইদহে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। সোমবার এই অুনষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি। বিশ্বজিৎ মনি নওগাঁ থেকে জানান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নওগাঁর পতিসরে এবারেই প্রথম জাতীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে। এই রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উৎসব উদ্বোধন করতে আসছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। একে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তীর উৎসব, তার ওপর আসছেন রাষ্ট্রপতি। এতে উৎসবের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যেহেতু এ বছর পতিসরে মূল কর্মসূচী উদযাপিত হচ্ছে এবং প্রধান অতিথি থাকছেন রাষ্ট্রপতি স্বয়ং। এ জন্য এবারের রবীন্দ্র উৎসবে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যায় ২৫ শে বৈশাখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের পদচারণার মাধ্যমে একমাত্র রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি পর্যটক আকর্ষণ গড়ে তোলা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×