ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

কবিগুরুর জন্মদিনে শিল্পীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৮ মে ২০১৭

কবিগুরুর জন্মদিনে শিল্পীদের ভাবনা

বিশ্ববোধের কবি, বাঙ্গালির আত্মার মুক্তি, সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মদিন আজ পঁচিশে বৈশাখ। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষাভাষী কবির জন্মবার্ষিকীর দিবসটি পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও শ্রদ্ধায়। জাতীয় পর্যায়ে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁর পতিসরে। জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানুষের ধর্ম: রবীন্দ্রনাথ ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা’। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের ভাবনা জানতে চেয়ে এ আয়োজনটি করেছেন গৌতম পা-ে। পাপিয়া সারোয়ার : সব সময়ই রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ গানটির মূল তাৎপর্য হলো হে প্রভু তুমি আমাকে শান্ত করে দাও। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম দুরাবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথকে আরও সুগম করে তোলে। তাঁর গান আমাদের শান্তি দিতে পারে। শুধু গান নয়, তার কবিতা ও বিভিন্ন লেখা সব সময়ই আমাদের পথ চলার সাথী। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে বাঙালি চেতনাকে আবারও নতুন করে উজ্জীবিত করে। স্বপন দত্ত : আমরা যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত করি তাদের কাছে মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে জাড়িয়ে আছে। তাঁর গান ছাড়া অন্য কিছু ভাবা আমাদের কাছে কঠিন। সব সময়ই রবীন্দ্রনাথ আমাদের সঙ্গে আছেন। মিতা হক : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম শুভ জন্মবার্ষিকীতে পদার্পণ বাঙালির ইতিহাসে এমনই একটি অধ্যায় যার মূল্য অপরীসিম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য-সঙ্গীতের মাধ্যমে সকল দীনতা হীনতার অবসান ঘটিয়ে সুন্দর স্নিগ্ধ শান্তিময় এক পৃথিবীর কামনা করেছেন যা সকলের জন্য মঙ্গলময় এবং সুখকর। আমরা বাঙালিরা ধন্য এবং গর্বিত একারণে যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত একজন মহামানব বাঙালির ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। বাঙালিকে বিশ্বের কাছে স্বমহিমায় পরিচিত করানোর দায়িত্ব তিনিই প্রথম নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্মের মধ্যে গানই সর্বশ্রেষ্ঠ। একথা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিভিন্ন লেখনীতে তুলে ধরেছেন। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের বিশাল ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতায় বাঙালির চিরায়ত সঙ্গীত রচনা করে গেছেন। সমসাময়িক সংকটময় জীবনের বিপর্যয় কাটিয়ে মানুষের কলাণের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা তাঁর গান। তপন মাহমুদ : প্রতি বছর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আসে। তবে আজ দেড়শ বছর পেরিয়েও রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে বিশেষকরে বাঙালিদের কাছে অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক। শুধুমাত্র তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে নয়, প্রতি দিনে, প্রতিক্ষণে রবীন্দ্রনাথ আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। তবে এই দিনকে কেন্দ্র করে যেহেতু অনেক কিছুই আবর্তিত হয়ে থাকে তাই এদিনেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সকল সচেতন বাঙালি সমাজ। বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করে বিশ্বে পরিচিতি ঘটানোর মত যে দুরহ কাজকে তিনি জয় করেছেন, যতদিন বাঙালি থাকবে ততোদিন স্মরণ করবে এই অসারণ ব্যাক্তিত্বকে। আমাদের হৃদয়ের অস্তিত্বে রবীন্দ্রনাথ সবসময় মিশে আছেন, এ উপলদ্বি কেউ বুঝতে পারে কেউ পারে না। অণিমা রায় : রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে অনেকেই আরও বেশি করে তাঁকে জানার সুযোগ পায়। আমরা যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করি তাদের জন্য এ দিনটি আলাদা কিছু নয়। আমরাতো সব সময়ই তাঁকে ধারণ করি। রবীন্দ্রনাথ সকল প্রেরণা ও শক্তির উৎস মনে করি। শুধুমাত্র শহরে নয়, গ্রামে গঞ্জেও এখন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখছে অনেকে। এটা নিশ্চয়ই একটা আশার বাণী বয়ে আনে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে কেন্দ্র করে এর পরিবেশনা হয়, এটা উচিত নয়। সমাজে ভাঙা-গড়ার খেলা চলতে থাকবে, এরমধ্যেও রবীন্দ্রসঙ্গীত টিকে থাকবে। যারা জেনে-বুঝে গান করবে তাদের শক্তি বেশী, তারাই টিকে থাকবে।
×