ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে বিপাকে চাষী

চিংড়ি ঘেরে মড়ক

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৭ মে ২০১৭

চিংড়ি ঘেরে মড়ক

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ মড়কে শত শত ঘেরের চিংড়ি উজাড় হচ্ছে। অজ্ঞাত রোগে চিংড়ির মড়কে চাষীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিকারের আশায় ছোটাছুটি করেও তারা কোন প্রতিকার করতে পারছেন না। ফলে মারাত্মক ক্ষতির কবলে পড়ে ঋণগ্রস্ত চাষীরা হাঁসফাঁস করছেন। চিংড়িচাষীরা জানান, গত দুই সপ্তাহে জেলার অধিকাংশ ঘেরে হঠাৎ চিংড়ির মড়ক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ঘেরের সংখ্যা বাড়ছে। ঘেরের চিংড়িতে মড়ক দেখা দিলেও তার প্রতিকার মিলছে না। মৎস্য বিভাগ থেকেও কার্যকর সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে চাষীরা অভিযোগ করেন। কী রোগে এভাবে চিংড়ি মরছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। তারা আক্রান্ত চিংড়ি সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া, ডেমা, খোন্তাকাটা, শশীখালী এবং রামপালের পিপুলবুনিয়া, কাঁকড়াবুনিয়া, ঝরঝনিয়া, বাবুরবাড়ি এলাকার বিল ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে রয়েছে। কোন কোন চাষী তার ঘেরের পানিতে নেমে মরা চিংড়ি তুলে ফেলে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষোভে ঘেরে নামছেনই না। মরে যাওয়া চিংড়ি লালচে বর্ণ ধারণ করছে। শশীখালী ও খোন্তাকাটা বিলের চাষী আসাদুজ্জামান রিপন ও শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, এ বছর চিংড়ি ঘেরে মারত্মক মড়ক লেগেছে, ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জেলার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশীল। ফলে সবাই বিপাকে পড়েছেন। চিংড়িচাষী শেখ বজলুর রহমান জানান, তিনি গত তিন দশক ধরে রামপালের বাবুরবাড়ি এলাকায় প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে চিংড়ি ঘের করছেন। গত বছর মড়কে মারাত্মক লোকসানের কারণে এবার শেয়ারে (ভাগে) ১৮-২০ লাখ টাকা ব্যয় করে ঘের করেন। কিন্তু এ বছরও সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর ধরে মোরেলগঞ্জের বহরবুনিয়া এলাকায় আড়াই শ’ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করছেন। চলতি মৌসুমে ফাল্গুন মাসের শেষদিকে নদীর ও হ্যাচারির মিলিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ পোনা ছাড়েন। ঘেরের বাগদা চিংড়ি ৬৬ গ্রেড হলেও পাঁচ দিন আগে হঠাৎ দেখেন মড়কে সব শেষ। ঘেরের পানিতে নেমে হাজার হাজার মরা চিংড়ি পাওয়া গেলেও তার একটিও বিক্রি করার মতো নেই। লাখ লাখ টাকা ক্ষতিতে তিনি বিপন্নবোধ করছেন। চিংড়িচাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, সদর, রামপাল, মংলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ঘেরের বাগদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। সব মাছ মরে যাচ্ছে। প্রতি বছরই কমবেশি ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে চিংড়ি মরে থাকে। তবে এ বছর মড়ক মহামারী রূপ ধারণ করেছে। এতে হাজার হাজার চাষী মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অধিকাংশ চাষী চড়া সুদ ও ব্যাংকের ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেন। এমন বিপর্যয়ে চাষীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরি করে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার দাবি জানান তিনি। বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচএম রাকিবুল ইসলাম বলেন, চিংড়িচাষীরা যে পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করেন তা পরিকল্পিত নয়। তাদের ঘের প্রস্তুতিতে সমস্যা রয়েছে, যার কারণে মৌসুমের শুরুতেই বাগদা ও গলদা চিংড়িতে মড়ক লেগেছে। ‘ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে চিংড়ি মারা যাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা মরা চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। পরীক্ষার পর কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর তাদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হবে। যথাযথ সহযোগিতা না করার অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের ডিএফও জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৭০ হাজার ঘেরে চিংড়ির চাষ করা হয়েছে। চিংড়ির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ২৭১ টন। ঘেরে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় এবং প্রচ- দাবদাহের পর হঠাৎ বৃষ্টির কারণে চিংড়ি ঘেরে মড়ক লেগেছে। তবে পরীক্ষা ছাড়া কী কারণে চিংড়িতে মড়ক লেগেছে তা এখনই সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা করতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে চাষীদের ঘের পরিদর্শন করে পরামর্শ দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×