ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্য ও কুসংস্কার পায়ে মাড়িয়ে ওরা এগিয়ে চলেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৬ মে ২০১৭

দারিদ্র্য ও কুসংস্কার পায়ে মাড়িয়ে ওরা এগিয়ে চলেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চরম দারিদ্র্য ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে এদেশের নারীদের এগিয়ে চলার পথ মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তবুও দেশের আনাচে-কানাচে থাকা এমন অনেক নারী আছেন যাদের জন্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের পরিবর্তন হচ্ছে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার জন্য সমাজের সঙ্গে তাদের লড়াই, এমনকি পরিবারের সঙ্গেও। এবছর এসএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে পাস করেছে ১৫ লাখ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অনেক নারী শিক্ষার্থী আছে যারা বিভিন্ন সমাস্যার সম্মুখীন হয়েও পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন। তারা অনেকেই সমাজের মানুষের চোখে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠেছে। সমাজ ও জীবনের অনেক প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে তারা মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তারাও পারে সাফল্য বয়ে আনতে। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শারমিন আক্তার। ২০১৫ সালে স্বর্ণকিশোরী পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বেশ কিছু গণমাধ্যমের শিরোনামে ছিল সে। মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে লেখাপড়ার পথে অটল থাকা এই সাহসী শিক্ষার্থী এসএসসিতে কৃতিত্বপূর্ণ ফল করেছে। দাদির সঙ্গে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সে। অনেক প্রতিকূলতা ও বাধার মুখে পড়েও শারমিন দমে যায়নি। সে মানবিক বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ চার দশমিক ৩২ পেয়েছে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কালেজ (আইডব্লিউসি) ২০১৭ পুরস্কারপ্রাপ্ত শারমিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন,‘এত বড় ঝড় না এলে ঠিকই আমি জিপিএ-৫ পেয়ে আরও কৃতিত্বপূর্ণ ফল উপহার দিতে পারতাম। একজন আইনজীবী হওয়া আমার জীবনের লক্ষ্য।’ আরেক শিক্ষার্থী বিউটি আক্তার। একে তো অভাবের সংসার, আরেক দিকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের বায়েজিদ হোসেনের মেয়ে বিউটি আক্তারের ভাগ্যে এমনটিই ঘটেছে। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম দমাতে পারেনি তাকে। ভাগ্যের ওপর দোষ না দিয়ে থেমে থাকেনি সে। সে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এখন সে ওই গ্রামের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিবন্ধী হলেও ক্লাসের সবচেয়ে মনোযোগী এই মেয়েটি পা দিয়ে লিখে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। টাঙ্গাইলের কালীহাতি উপজেলার তাসলিমা খাতুনের কথা হয়তো অনেকেরই মনে রয়েছে। ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফিয়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ টাকা দিতে না পারায় দরিদ্র ঘরের সন্তান তাসলিমাকে ফরম পূরণ করতে দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এতে দমে যায়নি সে। স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও স্থানীয়দের সহায়তায় এসএসসিতে অংশ নেয় তাসলিমা। উপজেলার নরদহি উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে সে ‘এ-’ পেয়ে পাস করেছে। নাটোরের বাগাতিপাড়ার মলি রানী। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবা-মা বিয়ে দেয় তাকে। পারিবারিক ব্যস্ততায় আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি তার। কিন্তু ছেলেদের পড়ানোর সময় বুঝতে পারেন পড়াশোনা তারও করা প্রয়োজন। এরপর নিজ সিদ্ধান্তে আবার পড়াশোনা করা শুরু করেন তিনি। স্বামীরও অমত ছিল না এতে। শুরু করে দেন ছেলের সঙ্গে পড়াশোনা। সেই মলি রানী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ চার দশমিক ৫৩ পেয়েছেন এবং ছেলে মৃন্ময় পেয়েছে জিপিএ চার দশমিক ৪৩। ইচ্ছে থাকলে জগতের অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় এমনটিই দেখিয়ে দিয়েছে বগুড়ার ধুনটের নাইস খাতুন। জন্ম থেকেই দুই পা অকেজো। কাজ করে না ডান হাতও। তাতে কি? অদম্য ইচ্ছে শক্তির ওপর ভর করেই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় নাইস। বাবা নজরুল ইসলামের কোলে চড়ে পরীক্ষার হলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল সে। সেই নাইস এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ তিন দশমিক ৫৫ পেয়েছে।
×