ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখীর তা-ব ॥ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, আম ও লিচু বাগান লণ্ডভণ্ড

রাজশাহীতে নৌকাডুবি, ঝড় ॥ শিশু ও নারীসহ ৯ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ মে ২০১৭

রাজশাহীতে নৌকাডুবি, ঝড় ॥ শিশু ও নারীসহ ৯ জনের মৃত্যু

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে কালবৈশাখীর তা-বে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়ের কবলে পড়ে পদ্মায় নৌকা ডুবিতে ৫ জনসহ বিভিন্ন স্থানে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ হওয়া ৫ জনের লাশ মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে। এরা হলোÑ নগরীর দরগাপাড়া এলাকার সারোয়ার হোসেন রফিক (৪৫), রবিন (২৮), খানপুরের আসাদুল (৪৫) এবং শাহমুখদুম জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র আবুল আহাদ (৯) ও তামিম (৯)। এছাড়া বিভিন্নস্থানে নিহতরা হলোÑ রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার সপুরা এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (৪৮), মতিহার থানার বেলঘরিয়া এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে মুনছুর রহমান (৪০), চারঘাট উপজেলার বেলঘরিয়া শ্যামপুর গ্রামের আনসার আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৪৫) ও গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার কলাবাগান এলাকার আলম আলী মুন্সি (৫০)। এদের মধ্যে তিনজন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। ঝড়ের সময় আহত হয়ে তাদের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির খাতায় উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে ঘণ্টায় ৯৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ের তা-বে রাজশাহীর মাঠে মাঠে উঠতি বোরো ধান ও বাগানের আম-লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে হাজারো গাছপালা। রাজশাহী জেলা ত্রাণ অফিস জানায়, ঝড়ের কবলে পদ্মায় নৌকা ডুবিতে নিহত ৫ জনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ৩০৮ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন বলেন, কালবৈশাখীতে রাজশাহীতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। পর্যাক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ত্রাণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ি ও ওয়ার্ড মাস্টার দফতর সূত্র জানায়, ঝড়ের সময় গাছের ডাল পড়ে আছিয়া বেগম আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে ঝড়ের সময় দৌড়ে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার উপর পড়ে গিয়ে আহত হন মুনছুর রহমান। হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, বজ্রপাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদুল ইসলাম। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। এদিকে, গোদাগাড়ী থানার পুলিশ জানায়, ঝড়ের সময় গাছে ডাল ভেঙ্গে পড়ে আহত হন গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাট পৌরসভার কলাবাগান এলাকার আলম আলী মুন্সি। পরে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রাজশাহীর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী হানা দেয়। এ ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। এতে ল-ভ- হয়ে যায় রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। কাঁচা বাড়ি-ঘর, গাছ-পালা এবং আম ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার চারঘাটা, বাঘা, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, বাগমারা, পুঠিয়া, তানোর, মোহনপুর, পবা ও মোহনপুরে উঠতি বোরো ধান, বাগানের আম ও লিচুর ব্যাপক্ষ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না হলেও মাঠপর্যায়ের কৃষকরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম ও লিচুর। বাড়ন্ত আমের ক্ষতির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা। এসব আম এখন এক টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, আম, লিচু, ধান, পেঁপে, কলা, ভুট্টার ব্যাপক্ষ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। উপজেলা কৃষি অফিসারদের এ বিষয়ে দ্রুত পর্যবেক্ষণের পর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চারঘাট বাঘা আমচাষী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নাফ জানান, ঝড়ে দুই উপজেলার সিংহভাগ বাগানের কয়েক কোটি টাকার আম ঝরে পড়েছে। অনেকে ঋণ নিয়ে বাগান কিনেছিলেন, তাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া উঠতি বোরোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাকা ধান ঝরে পড়েছে। আধাপাকা ধানের পরাগায়নের আগে ঝরের কারণে নুইয়ে পড়ে এখন চিটায় পরিণত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া জেলায় অন্তত ১০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অনুদান বিতরণ শুরু ॥ এদিকে কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাৎক্ষণিক অনুদান বিতরণ শুরু করেছে প্রশাসন। পবা উপজেলার কাটাখালি পৌর এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। এছাড়া শ্যামপুর নগরপাড়া, চরপাড়া, কাপাসিয়া, তালুকদারপাড়া এবং ইমাদপুর হিন্দুপাড়া এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিদর্শন শেষে ও ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ পরিবার প্রতি দুই হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
×