ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি সমর্থিত গ্রুপ সমর্থন করল প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে কথা বলা

সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ মে ২০১৭

সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণ। মঙ্গলবার উভয়ই পক্ষই সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে দুপুরে আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশে আজ আইনের শাসন বলে কিছুই নেই। সুশাসন নেই, মানবাধিকার নেই, বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করুক। প্রশাসন বা অন্য বিভাগ তা চায় না। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোঃ অজিউল্লাহ বলেন, সরকার কখনই বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করেনি। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের এ রকম প্রতিক্রিয়া জনগণের মাঝে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। এবং রাষ্ট্রের দুই বিভাগ বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মাঝে বিরাজমান সম্প্রীতির মধ্যে ফাটল ধরাতে পারে। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে বিএনপিপন্থীরা সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। অপরদিকে বারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে বারের অপর অংশ (আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা) তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। মঙ্গলবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে শুরুতে বিএনপিপন্থীরা বারের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন। এদিন সকালে সমিতির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বক্তব্য দেন তারা। পরে বারের পক্ষ থেকে আওয়ামীপন্থীরা ভিন্নমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন। দুপুর সোয়া একটার দিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিচার বিভাগ সম্পর্কে দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রের আইন বিভাগ স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারছে কি না, শাসন বিভাগ আইন যথাযথভাবে পালন করছেন কি না সেসব বিষয় দেখার এখতিয়ার এবং দায়িত্ব বিচার বিভাগের। এখানে আমরা বলতে চাই বিচারিক দায়িত্ব কোন গোপন বিষয় নয়। মাসদার হোসেন মামলার পরে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অনেক কথা হয়েছে। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা, বিধি প্রণয়নের জন্য সর্বোচ্চ আদালত থেকে অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও চাকরির বিধি-বিধান, গেজেট আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। সরকার এজন্য মোট ৬৭ বার সময় নিয়েছে। সুতরাং প্রধান বিচারপতির গোপনে কিছু বলার নেই। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক তা চায় না, সময়ক্ষেপণ তারই প্রমাণ। সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সুপ্রীমকোর্ট আইন প্রণয়নে সংবিধান মানা হয় কি না এবং নির্বাহী বিভাগের কাজ সংবিধান অনুযায়ী হয় কি না, তা দেখার দায়িত্ব। অন্য দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আছে বলেই তাদের কথা বলতে হয় না বলে দাবি বার সভাপতির। জয়নুল আবেদীন বলেন, যদি আইন বিভাগ সংবিধান মোতাবেক আইন প্রণয়ন না করেন বা সংবিধান পরিবর্তন করেন, সুপ্রীমকোর্টের এখতিয়ার রয়েছে সেই আইনকে বাতিল করার। রাষ্ট্রের আইন বিভাগ স্বাধীনভাবে আইন প্রণয়ন করতে পারছে কি না, শাসন বিভাগ আইন যথাযথভাবে পালন করছেন কি না সেসব বিষয় দেখার এখতিয়ার এবং দায়িত্ব বিচার বিভাগের। তাই আমরা সব মহলকে বিচার বিভাগ সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য করার অনুরোধ করছি। এ সময় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, সহ-সম্পাদক শামীমা সুলতানা দীপ্তি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য মোঃ হাসিবুর রহমান, মহসিনা আক্তার ও শেখ তাহসিন আলী উপস্থিত ছিলেন। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট অজিউল্লাহ বলেন, সরকার কখনই বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করেনি। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের কেউই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় কিংবা বিচার বিভাগের কোন ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় এম কোন বক্তব্য প্রদান করেননি; যাতে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক মহোদয়ের এই সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক মহোদয় সমিতির কার্যকরী অন্য সদস্যের সঙ্গে কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করেন। আমরা তাদের সম্মেলনের তীব্র নিন্দা জানাই। একই ভেন্যুতে আওয়ামীপন্থী অংশের সদস্যদের পক্ষে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ অজিউল্লাহ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। বারে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় রেজুলেশনকে বিভক্ত দাবি করে তাদের এ মতামত দেন। লিখিত বক্তব্যে এ্যাডভোকেট অজিউল্লাহ বলেন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক মহোদয়ের উদ্যোগে যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। কারণ, যেসব তুচ্ছ অজুহাতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, তাতে বিচার বিভাগেরই মর্যাদাহানি হয়েছে। এ সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বার কিংবা বিচার বিভাগের কোন স্বার্থ রক্ষা হয়নি বা হবেও না। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করলেও সুপ্রীমকোর্ট বারে কোন বিভক্তি নেই বলেও দাবি করেন মোঃ অজিউল্লাহ। আইনজীবীদের পেশাগত বিষয়ে তারা এক বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হওয়ায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এ সময় কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম হিরু, সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম এবং কার্যনির্বাহী সদস্য নূরে আলম উজ্জ্বল, কুমার দেবুল দে ও হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
×