ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিভাগীয় শহরেও বাড়ছে শব্দ দূষণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

বিভাগীয় শহরেও বাড়ছে শব্দ দূষণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শব্দ দূষণ। শুধু রাজধানী নয়, সমান্তরালে রয়েছে বিভাগীয় শহরগুলোও। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য বলছে, মানুষের সহনীয় মাত্রার চেয়ে তা দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। যা শ্রবণ শক্তির ক্ষতি থেকে শুরু করে বধিরতা, উচ্চ রক্তচাপ, খিটখিটে মেজাজ, মনযোগহীনতাসহ নানা মানসিক সমস্যারও কারণ। কারখানায় লোহা স্টিল ঝালাই, রাস্তায় গাড়ির হর্ন ইত্যাদি। এসব দৃশ্যে কী সবচেয়ে বেশি অসহনীয় হয়ে উঠেছে? পথচারী বলছেন, এত শব্দ ভাল লাগে না। কেউ কেউ বলেন, ‘এত শব্দে বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে হয়।’ আর কেউ কেউ বলেন, ‘এত শব্দে মনে হয় কানের পর্দা ফেটে যায়।’ শহরের যে কোন মহল্লায় খুঁজে পাওয়া যাবে এ দৃশ্য। অভ্যস্থ হলেও এমন বিকট শব্দ কারও জন্যই সহনীয় না। এদিকে পরিবেশ অধিদফতর এলাকাভেদে শব্দের সহনীয় মাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। নীরব এলাকায় রাত দিন ভেদে এ মাত্রা ৩৫ থেকে ৪৫ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকার জন্য ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবেল। মিশ্র এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ এবং শিল্পাঞ্চলে ৭০ ডেসিবেল। নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই কারই। যানজটে দাঁড়িয়ে অযথা হর্ন দিয়ে যাচ্ছেন চালকেরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের সামনে শব্দের কমতি নেই। হর্ণ বাজাবেন না সাইনবোর্ডই যেন হর্ন বাজানোর স্থান হয়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদফতর প্রথমবারের মতো ২০১৬ সালে ৫ বিভাগীয় শহরের শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। সেই গবেষণায় উঠে আসে ঢাকা শহরের শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ফার্মগেট এলাকায়, ১৩৫ দশমিক ৬। সেখানে, চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় দেশের সর্বোচ্চ মাত্রা ১৩৯ দশমিক ৬। আর, বিভাগীয় শহরগুলোর শব্দের মাত্রা খুবই কাছাকাছি। ২০১৭ সালে সংখ্যা বাড়িয়ে ৮ বিভাগীয় শহরের শব্দের মাত্রা পরিমাণ করা হয়েছে। শীঘ্রই তার ফলাফল প্রকাশ করা হবে। সেই গবেষণায় প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য সম্পর্কে জানালেন, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত এবং অংশীদারিত্বমূলক কর্মসূচীর পরিচালক। পরিবেশ অধিদফতর শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘শব্দের যে মাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছে সব শহরের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।’ চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে এক ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের ভয়াবহ ভবিষ্যতের চিত্র। নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল বলেন, ‘শব্দ দূষণ খুব নীরব ঘাতক। ৮৫-৯০ ডেসিবল শব্দ দূষণ আমাদের কানের জন্য ক্ষতিকারক।’ জনসংখ্যার আধিক্য বাংলাদেশের নগরগুলোতে তৈরি করেছে নানা রকম চাহিদার। সেই চাহিদা মেটাতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে শব্দ দূষণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নীরবঘাতক শব্দ দূষণ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। তারা বলছেন, বিদ্যমান আইনের সংস্কার প্রয়োজন। তবে তারা যে বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তা হলো জনসচেতনতা।
×