ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন লোকের খুবই অভাব

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

দেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন লোকের খুবই অভাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমাদের দেশে উৎপাদনমুখী কারখানায় ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে দক্ষ ও যোগ্য লোকের প্রকট সঙ্কট রয়েছে। প্রতিবছর পাবলিক, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর ডিগ্রীধারী বের হচ্ছে কিন্তু তাদের মধ্যে দক্ষ লোকের সংখ্যা খুবই কম। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে হলে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) আয়োজিত ‘পেশাদার ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার বিল্ডিংয়ে অবস্থিত বিইএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি এ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুল মঈন। বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিন, ইউএনডিপির বাংলাদেশের এ্যাসিসটেন্ট কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশীদ আলম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারী উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির পরিচালক (গবেষণা) ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। গওহর রিজভী বলেন, আমাদের দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন ডিগ্রী নিয়ে যারা বের হচ্ছে তার বিপরীতে আমাদের চাহিদা কত? এটি নিয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। সরকার ও বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শীঘ্রই এ জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মেধার কোন অভাব নেই। কিন্তু ঠিকমতো তাদের পরিচর্যা করা হয় না। আমাদের দেশে যেসব বিজনেস স্কুল রয়েছে সেখানে গরিব ছাত্ররা পড়তে পারছে না। কারণ সেগুলো খুবই ব্যয়বহুল। মেধাবী কিন্তু গরিব ছাত্রদের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে বৃত্তির ব্যবস্থা রাখা উচিত। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষার্থী ইন্টার্নশিপ করছে সেসব শিক্ষার্থীকে অর্থ দেয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ লোক নিয়োগের ফলে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে। এ কারণে বিদেশী লোক নিয়োগ সীমিত করা উচিত হবে না উল্লেখ করে গওহর রিজভী বলেন, বিদেশী দক্ষ লোক নিয়োগ দেয়া হলে তাদের কাছ থেকে আমরা ব্যবসার নতুন অনেক কিছু শিখতে পারব। নতুন চিন্তার সঙ্গে আমরা পরিচিত হতে পারব। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে আমাদের মধ্যে। বিদেশীদের ওপর থেকে আমাদের নির্ভরশীলতা কমানো দরকার কিন্তু বিশ্বায়নের এ যুগে এটা বন্ধ করে দেয়া উচিত হবে না। ফারুক সোবহান বলেন, ২০২১ ও ২০৪১ সালের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের অবশ্যই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোক তৈরি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের উদাহরণ তুলে বলেন, তাদের উন্নতির পেছনের মূলমন্ত্রই হচ্ছে দক্ষ ও যোগ্যতা সম্পন্ন লোক। আমরা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের আরও অনেক বেশি বিজনেস স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু কেবল প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা অর্জন করলেই চলবে না কমিউনিকেশন স্কিল, লিডারশিপ কোয়ালিটি ইত্যাদি যোগ্যতা থাকতে হবে। আমাদের দক্ষ লোকের চাহিদা থাকলেও সে অনুযায়ী যোগান নেই। দক্ষ লোক গড়ে তোলার জন্য ভাল ইনস্টিটিউট, প্রশিক্ষকও আমাদের নেই। আমাদেরকে আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। বেসরকারী খাতকেও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিন বলেন, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে আমাদের বিদ্যুত, গ্যাসসহ অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদ্যুত সমস্যা অনেকাংশে কমে গেছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে গ্যাসের সমস্যাও কেটে যাবে। কিন্তু আমাদের দক্ষ লোকের যে সঙ্কট সেটি সহজে ঘুচাবার নয়। তবে শুধু আমাদের দেশেই নয়, ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে বিশ্বব্যাপীই দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের অভাব রয়েছে। এজন্য আমাদের বিদেশীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। মোবাইল সেক্টরের মতো বেশ কিছু খাতে আমাদের দেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন লোকের খুবই অভাব। এ জন্য এ সেক্টরে যারা উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত তাদের প্রায় সবাই বিদেশী। আমাদের অবশ্যই সবক্ষেত্রে দক্ষ লোক গড়ে তোলার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট আছে কিন্তু এগুলোর সঙ্গে ব্যবসার যোগসূত্র খুবই কম। এ যোগসূত্র বাড়াতে হবে। মূল প্রবন্ধে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমাদের অনেক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমাদের জিডিপির ২ শতাংশেরও কম ব্যয় করা হচ্ছে শিক্ষা খাতে। এ ব্যয়ের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। বিএএফের মহাসচিব ফারুক আহমেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আতাউর রহমান, এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সাফি আর খান, এ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আরিফ দৌলা।
×