ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা শেষে স্টুটগার্ট ওপেনে লড়াই শুরু আজ এ রাশিয়ান টেনিস তারকার, প্রতিপক্ষ ভিঞ্চির প্রতিবাদ

মাশার দিকেই দৃষ্টি সবার

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

মাশার দিকেই দৃষ্টি সবার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চেরনোবিল, ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল মারাত্মক তেজস্ক্রিয় বিপর্যয় ঘটেছিল। অনেক মৃত্যুর পাশাপাশি এর ভয়ানক প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল আশপাশের স্থানে। ইউরি ও ইয়েলেনা শারাপোভ তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার অধীনে থাকা বেলারুশের গোমেলে বাস করতেন। চেরনোবিলের প্রভাব কাটাতে চলে আসেন সাইবেরিয়া। পরের বছরই জন্ম নিয়েছিলেন তাদের সন্তান মারিয়া শারাপোভা। পরবর্তীতে টেনিস বিশ্বের অন্যতম গ্ল্যামার গার্ল, সুগারপোভা, মডেল ও এক সময়ের বিশ্বসেরা হয়ে ওঠা মাশা এবার নতুন জীবন শুরু করছেন সেই ২৬ এপ্রিল। চেরনোবিলের ভয়াবহতা ভর করেছিল যেন তার ক্যারিয়ারেও। নিষিদ্ধ ড্রাগ মেলডোনিয়াম গ্রহণের জন্য ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন। তা কাটিয়ে স্টুটগার্ট ওপেন দিয়ে আবার ফিরছেন পেশাদার টেনিসে। তার প্রতিপক্ষ ইতালির রবার্টা ভিঞ্চি। এখন কোন র‌্যাঙ্কিং নেই মাশার, তাই পেয়েছেন ওয়াইল্ড কার্ড। সে যাই হোক সোনালী চুলের রূপবতী শারাপোভা বলে কথা। তাই সবার দৃষ্টি এখন তার দিকে নিবদ্ধ। সবাই যখন শারাপোভার ফেরা নিয়ে বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত, সে সময় তার প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা ভিঞ্চিও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন শারাপোভার ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া উচিত হয়নি। ৩৫ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী এ ৩৪ বছর বয়সী ইতালিয়ান তারকা প্রায় ১০ বছর একই লকার রুম ভাগাভাগি করেছেন মাশার সঙ্গে। কিন্তু দাবি করেছেন তার সঙ্গে শারাপোভার কোন সম্পর্কই নেই। এ বিষয়ে ভিঞ্চি বলেন, ‘আমি এখানে, রোমে এবং অন্য যে কোন জায়গায় তার ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার সঙ্গে একমত নই। নিশ্চিতভাবে তিনি ভুল করেছেন এবং সেটার জন্য শাস্তিভোগও করেছেন। আমার মনে হয় তিনি অবশ্যই টেনিসে ফিরতে পারেন। তবে সেটা কোন ধরনের সহায়তা কিংবা ওয়াইল্ড কার্ড ছাড়া নিজ গুণে লড়াই করে। হয়তো তিনি এভাবে ৩টির মতো টুর্নামেন্ট খেলবেন এবং অবশ্যই সেরা ৩০-এর মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে চলে আসবেন। কিন্তু তার ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে আমার বিরোধিতার পক্ষে অবশ্যই অধিকাংশ খেলোয়াড় আছেন।’ শারাপোভা স্টুটগার্টে গিয়ে তেমন একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে নেই। মর্যাদাটাও পাচ্ছেন না অন্য অংশগ্রহণকারীদের মতো। কারণ নিষেধাজ্ঞা উঠবে আজ সকালে। তাই মূল কোর্টে ঢুকে অনুশীলন করতে পারছেন না। স্থানীয় এক টেনিস সেন্টারে আপাতত ট্রেনিং করছেন। যেখানেই যাচ্ছেন ভক্ত, সমর্থক, নিন্দুক, সমালোচক সবাই ভিড় করছেন। মাত্র ৭ দিন আগে ৩০ বছরে পা দিয়েছেন। জন্মদিনের উপহার হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ারে ফিরছেন আজ। শুরু করবেন নতুন জীবন। বিভীষিকাময় ১৫ মাস কাটিয়ে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবেন। এমন বিভীষিকা তার জীবনের সঙ্গেই যেন জড়িয়ে গেছে। জন্মের এক বছর আগে চেরনোবিলে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব কাটাতে তার বাবা-মা এসেছিলেন সাইবেরিয়া। সেখানেই জন্ম মাশার। তার বয়স যখন দুই তখন ইউরি-ইয়েলিনা একবারে চলে আসেন সোচিতে। সেখানে ইউরির বন্ধু আলেকজান্ডার কাফেলনিকভের ছেলে, দুইবার গ্র্যান্ডসøাম জয়ী ইয়েভগেনি কাফেলনিকভের সঙ্গে দেখা হয়। প্রথম রাশিয়ান টেনিস তারকা হিসেবে তখন সবেমাত্র এক নম্বরে উঠেছেন কাফেলনিকভ। ধীরে ধীরে শিশু শারাপোভার সঙ্গে ভাল সখ্যতা গড়ে ওঠে তার এবং ১৯৯১ সালে নিজের একটি টেনিস র‌্যাকেট উপহার দেন ৪ বছর বয়সী মাশাকে। স্থানীয় একটি পার্কে নিয়মিত বাবা ইউরির সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেন নাবালিকা মাশা। ১৯৯৩ সালে ৬ বছর বয়সে তিনি দেখা করেন কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার সঙ্গে মস্কোর এক টেনিস সেন্টারে। নাভ্রাতিলোভা পরামর্শ দেন ফ্লোরিডায় আইএমজি একাডেমিতে শারাপোভাকে ট্রেনিং করার। এই একাডেমিতে অনুশীলন করেছেন আন্দ্রে আগাসী, মনিকা সেলেস ও আনা কুর্নিকোভার মতো বিশ্ব মাতানো তারকারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ইংরেজী ভাষা জানাটা ছিল অপরিহার্য যা ইউরি, ইয়েলিনা বা মাশা কেউ একবিন্দুও পারতেন না। শেষ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় ১৯৯৪ সালে ইউরি ও মাশা আসতে পারলেও দুই বছরের জন্য রাশিয়াতে একাকী পড়ে ছিলেন ইয়েলিনা। একাডেমিতে ভর্তি করানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সঙ্কুলান করার উপায় ছিল না ইউরির। দিনই চলে না, আবার এত অর্থ কিভাবে সম্ভব সঙ্কুলান করা? নিচু পর্যায়ের কিছু ছোটখাটো কাজ করে (যেমন বাসন, মেঝে ধোয়া-মোছা) এবং ধার করে কিছুদিন পর মাশাকে ভর্তি করিয়ে দেন ইউরি। ১৯৯৫ সালে আইএমজি সম্মত হয় বার্ষিক ৩৫ হাজার ডলার টিউশন ফি দিয়ে মাশাকে ট্রেনিংয়ের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৭ বছর বয়সে ২০০৪ সালে উইম্বলডন জেতেন শারাপোভা। তারপর একেএকে বিশ্বের নামিদামি ক্রীড়া, বাণিজ্য ও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো তার সঙ্গে চুক্তি করে। একই সঙ্গে নিপুণ সৌন্দর্য, মোহনীয় চেহারায় তিনি হয়ে ওঠেন সুপার মডেল। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে যাওয়া মাশার জীবনে গত বছর জানুয়ারিতে নেমে আসে নতুন দুঃখ। সবেমাত্র নিষিদ্ধ হওয়া মেলডোনিয়াম গ্রহণের দায়ে নিষিদ্ধ হন ১৫ মাস। সব চুক্তি বাতিল করে প্রতিষ্ঠানগুলো, একেবারে গৃহবন্দী হয়ে পড়েন মাশা। সেটাও কাটিয়ে এসেছেন। এবার নতুন করে জীবন শুরু করার পালা সুন্দরী, স্বর্ণকেশী মাশার। সময় আছে অনেক, লড়াই শুরু আজ।
×