ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিপূরণের আশা- প্রহর গুনছে স্বজনহারা পরিবারগুলো;###;মামলাগুলো থমকে আছে

রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর চারটি বছর

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর চারটি বছর

রহিম শেখ ॥ সাভারের রানা প্লাজা ধসের মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার চার বছর পূর্ণ হলো আজ। শুধু বাংলাদেশ নয়, দিনটির ভয়াবহতার কথা স্মরণ করছে গোটা বিশ্ব। ওই ভবন ধসের ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী নিহত হন। আহত হন আরও কয়েক হাজার। এদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। রানা প্লাজা ধসের পর সেই ভবনের যারা বেঁচে আছেন, তাদের অর্ধেকেরও বেশি আহত শ্রমিক এখনও দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার রয়ে গেছেন। ভয়াবহ এ ভবন ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের পুরো অংশ এখনও হাতে পাননি অনেকেই। ক্ষতিপূরণের আশায় এখনও প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনহারা পরিবারগুলো। ভুক্তভোগীরা বলছেন, প্রতিবছর ২৪ এপ্রিল এলেই এ নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর আর কেউ খবর রাখে না। এদিকে দুর্ঘটনার চার বছর পার হলেও সব মামলার কার্যক্রম থমকে আছে। শুরু করা যায়নি এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। সবচেয়ে হতাশার কথা হলো, এ মামলায় হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণে, হাইকোর্ট যে কমিটি করে দিয়েছিলেন সেই রিপোর্ট চূড়ান্ত হলেও; শুনানিই শুরু হয়নি। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টা। সাভারের নয়তলা ভবন রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানার শ্রমিক দল বেঁধে প্রবেশ করছেন। যে যার মতো করে কাজে যোগ দিচ্ছেন। তখনও তারা জানতেন না কী ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। সকাল সাড়ে ৮টায় একযোগে চালু করা হয় ডজনখানেক জেনারেটর। কেঁপে ওঠে নয়তলা ভবনটি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিশাল এ ভবনটি ধসে পড়ে। হাজারখানেক শ্রমিক প্রাণ হারায় ঘটনাস্থলেই। ভবনে আটকে পড়া ও হাসপাতালে মারা যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩৬ জনে। ঘটনায় আহত হন আরও কয়েক হাজার শ্রমিক। দেশের ইতিহাসে একসঙ্গে এত শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে ২৩ এপ্রিল বিকেলেই ওই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। প্রাণের ভয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে চায়নি ২৪ এপ্রিল সকালে। কিন্তু ভবন মালিক সোহেল রানা জোর করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। ফাটলের কারণে ভবনে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল পোশাক কারখানা। ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনায় প্রাণে দাগ কেটে যায় গোটা বিশ্ববাসীর। উন্মোচিত হয়ে যায় কতটা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করে এদেশের পোশাক শ্রমিকরা। লাভের পেছনে ছুটতে গিয়ে পোশাক শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের কীভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় এ বিষয়টিও উঠে আসে গণমাধ্যমগুলোতে। এ ঘটনায় ওই সময় চরম অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প। স্মরণকালের ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনার ঘটনার চার বছর চলে গেলেও অনেকেই পাননি নিহত স্বজনদের লাশ। এখন পর্যন্ত প্রকৃত নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়নি। তবে হাইকোর্টে দেয়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা বলা হয়েছে, ৩৭৯ জন। উদ্ধারকারীদের নেতৃত্ব দেয়া সেনাবাহিনীর নিখোঁজ তালিকায় বলা হয়েছে, ২৬১ জন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পাওয়া যায় ১৫৭ জনের খোঁজ। দ্বিতীয় দফায় পরিচয় মেলে ৪২ জনের। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তালিকা ধরে এখনও নিখোঁজ ১৬২ জন শ্রমিক। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিখোঁজের তালিকা তৈরিতে সরকার, সেনাবাহিনী, শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে মরদেহের নমুনার সঙ্গে মেলানো হয়। ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, এ পর্যন্ত ১৭৭ জনের ডিএনএ মিলে যাওয়ায় তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর জুরাইন কবরস্থানে ১১৪ জনের কবর দেয়া হয়েছে। যাদের খোঁজ কেউ কোনদিন করেনি। তাদেরও কোন পরিচয় এই তিন বছরেও পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনায় যারা আহত হয়েছিলেন তাদের অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জটিলতা রয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে শ্রম মন্ত্রণালয়, রাজউক, শিল্প, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিজিএমইএ’র একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরমধ্যে দুর্ঘটনার জন্য নয়টি কারণকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিজিএমইএ। ভবন তৈরিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে নয়তলা ভবন নির্মাণ, কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের অসচেতনতা, সাভার পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবহেলা, ইত্যাদি কারণে ভবনটি ধসে পড়ে। তাছাড়া একসঙ্গে সব জেনারেটর চালু করা এবং ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি জনবল থাকাকে দুর্ঘটনার বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেছে বিজিএমইএ’র তদন্ত কমিটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে রানা প্লাজা ভবন ধসের জন্য নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, ইমারত নির্মাণ আইন অনুসরণ না করে ভবন নির্মাণ, মার্কেটের ওপরে অনুমোদিতভাবে ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে গার্মেন্টস স্থাপন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ঝাঁকুনি সৃষ্টির মতো যন্ত্রপাতি ও জেনারেটরসহ সরঞ্জামাদিসহ অতিরিক্ত পোশাককর্মী প্রবেশে বাধ্য করা এ পাঁচটি কারণকে দায়ী করা হয়। প্রতিবেদনে ভবন মালিক সোহেল রানা এবং ওই ভবনের পাঁচ পোশাক কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ যাবজ্জীবন বা ১০ বছরের কারাদ-, অর্থদ- অথবা উভয় দ-ের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ভবন ধসের জন্য ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে’ দায়ী স্থানীয় মেয়র, কাউন্সিলর, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধেও একই সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া রানা প্লাজা ধসের জন্য ২৪ জনকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। রাজউকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনটি নির্মাণে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। ছয়তলা ভবনের নক্সা নিয়ে নয়তলা করা হয়। দুর্ঘটনায় মামলা ও বর্তমান অবস্থা ঘটনার দিনই ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে সাভার মডেল থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটিতে অপরাধজনক প্রাণনাশেরও অভিযোগ আনা হয়। ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ওই মামলায় ২১ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া রাজউকের পক্ষ থেকেও ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারায় সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন রাজউকের দায়িতপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল আহমেদ। এ মামলায় রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগপত্রে যে ১৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৫ জন এখনও পলাতক রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পলাতক আসামিদের গ্রেফতার সম্পর্কিত কোন হালনাগাদ তথ্য দিতে পারেনি। ওই ঘটনায় ৪১ জনের নামে চার্জশীট দেয়া হলেও তার মধ্যে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ মাত্র তিনজন আটক আছে। জামিনে রয়েছেন ১১ জন। সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জুলাইয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলাটির বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামিরা হাইকোর্টে গেলে কার্যক্রম স্থগিত করা হয় মামলাটির। প্রতি মাসে নিয়ম করেই মামলা দুটি শুনানির জন্য আসে আদালতের কার্যতালিকায়। আসেন সাক্ষীরাও। কিন্তু তারিখের পর তারিখ পেছালেও শুরু হয় না কার্যক্রম। বিজ্ঞ আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণা করেছেন আগামী ১৮ মে। ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের প্রায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশ এখনও বেকার রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এ্যাকশনএইড। গত শনিবার ‘অবিস্মরণীয়, অমার্জনীয় : রানা প্লাজা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত এক হাজার ৪০৩ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ চালায় সংস্থাটি। গবেষণায় ৬০৭ জন মৃত শ্রমিকের পরিবারকেও নমুনা হিসেবে নেয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ আহত শ্রমিক বিভিন্ন চাকরি বা আত্মকর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ এখনও বেকার। আহত বেকার এ শ্রমিকদের মধ্যে ২৬ শতাংশ জীবিকার জন্য কোন পরিকল্পনা করতে পারছেন না। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ওই দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ পরে কাজে ফেরেন। ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেকার থেকে যান। পরের বছর ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ কাজে ফিরতে পারেন। ২০১৫ সালে কাজে ফেরা শ্রমিকদের হার দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশ। এর দুই বছর পর ২০১৭ সালে এ হার হয় ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমানে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিক বেকার রয়েছেন। ৩০ শতাংশ শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় ২০১৭ সাল পর্যন্ত আহতদের মধ্যে ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ শারীরিকভাবে সেরে উঠেছেন। মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশের অবস্থা। ১৩ দশমিক ১ শতাংশের শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এছাড়া আহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ মানসিকভাবে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ৩০ দশমিক ৮ শতাংশের মানসিক আঘাত রয়ে গেছে। স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন ১২ শতাংশ মানুষ। এ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, চার বছর পরও এত বিশালসংখ্যক শ্রমিকদের এ অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। আহত ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের চুইয়ে চুইয়ে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি, যা দেয়া হয়েছে তা আর্থিক সহযোগিতা। অনুষ্ঠানে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত দুই শ্রমিক তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। আহত শ্রমিক নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, চিকিৎসার জন্য এখন আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। দুর্ঘটনার পর প্রথম ৬-৮ মাস আমাদের কিছু সহযোগিতা করেছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এখন আর আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। আমরা কিছুই নয়, শুধু ভাল চিকিৎসা চাই। আমরা আমাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চাই। অনুকম্পা চাই না। পাঁচ হাজার অথবা ৫শ’ টাকা এবং একটি বিরানির প্যাকেট আমরা চাই না। আহত অন্য শ্রমিক বাকি বিল্লাহ বলেন, দেড় বছর হাসপাতালে ছিলাম। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিছুটা সুস্থ হয়ে আমি একটি কারখানায় কাজ নিলাম। তবে শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করেছে। আমি এখন কিভাবে চলব? ক্ষতিপূরণ পাননি বহু শ্রমিক ভবন ধসের পর নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে একটি কমিটি গঠন করে দেন উচ্চ আদালত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশের নেতৃত্বের সেই কমিটি, ক্ষতিপূরণের যে সুপারিশ দিয়েছিলেন, এখনও শুরু হয়নি তার শুনানি। তাই অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই কমটির প্রধান বললেন, এই ঘটনার মীমাংসা হোক, এটা কেউ চায় না। তাই এ দশা। এদিকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে আইলওর নেতৃত্বে ৩০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয় (৩২০ কোটি টাকা)। সেখানে প্রায় ২৪ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে। অর্থাৎ এখনও ঘাটতি আছে প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেন সূত্রে জানা যায়, রানা প্লাজার পাঁচ কারখানায় পোশাক তৈরি করতে এমন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯। এর মধ্যে ১৬ প্রতিষ্ঠান তহবিলে অর্থ দেয়নি। আর যেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দিয়েছে, তাদের বেশিরভাগেরই অল্প পরিমাণে। একমাত্র ব্যতিক্রম প্রাইমার্ক, ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতিষ্ঠানটি দিচ্ছে ৯০ লাখ ডলার। এই অর্থ দিয়ে রানা প্লাজার দ্বিতীয় তলায় থাকা নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডের ৫৮০ জন শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন বলেন, শ্রমিকরা এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি এটা সত্য ও সঠিক। হাইকোর্ট একটি প্যানেল গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকরা কে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার স্কেল তৈরি করে। কিন্তু এরপর আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এটা কোনভাবেই ঠিক নয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চার বছর পরও দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া যায়নি। প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের সময় সম্ভবত আমরা পার করে ফেলেছি। আহত শ্রমিকদের ভেঙ্গে ভেঙ্গে সহযোগিতা করা হয়েছে, যেটা তাদেরও কাজে আসেনি। যে হিসাব করে শ্রমিকদের টাকা দেয়া হয়েছে তা খুবই সমান্য। সমস্যা হলো আহত শ্রমিকদের ক্ষতির পরিমাণ ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড. আনোয়ার উল্লাহ্ বলেন, এটা ঠিক যে, দুর্ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ছিল এবং আছে। সমস্যা আছে পরিকল্পনায়। আর রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের যে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত কি-না তা চিন্তার বিষয়। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি স্মরণে নানা কর্মসূচী রানা প্লাজা ভবন ধসের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠন, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, পরিবেশ ও উন্নয়ন ইস্যুতে কর্মরত সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে গঠিত শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে জুরাইন কবরস্থানে ফোরামের নেতারা শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। এরপর সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের সামনে ইন্সটলেশন প্রদর্শন এবং ব্যানার, ফেস্টুন সহকারে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় সাভারের উদ্দেশে যাত্রা ও বিভিন্ন স্থানে যাত্রাবিরতি করে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করবেন নেতা-কর্মীরা। সকাল ১১টায় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাগণ, এ খাতের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং আইএলও প্রতিনিধিগণ নিহতদের কবর জিয়ারত করবেন। বিকেল ৫টায় রানা প্লাজা ভবন ধসের দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের স্মরণে বিজিএমইএ’র উদ্যোগে নিজস্ব ভবনে ভবনে এক দো’য়া মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
×