ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বালাইনাশক অধ্যাদেশ ও আইন বাংলায় হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

বালাইনাশক অধ্যাদেশ ও আইন বাংলায় হচ্ছে

এমদাদুল হক তুহিন ॥ আর্থিক জরিমানা ও কারাদ-সহ বিভিন্ন শাস্তির বিধান রেখে দীর্ঘদিনের ইংরেজীতে তৈরি বালাইনাশক অধ্যাদেশ ও আইন এবার বাংলায় রূপান্তর হচ্ছে। পূর্বের আইনটিতে আনা হয়েছে বেশকিছু সংশোধন। বাড়ানো হয়েছে জরিমানার বিধান। বালাইনাশক আইন-২০১৭’র খসড়ায় বায়ো-পেসটিসাইড সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। কোন কারণে লাইসেন্সধারী ব্যক্তি মারা গেলে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারীর কাছে লাইসেন্স হস্তান্তরের বিধি যুক্ত হয়েছে নতুন করে। চলতি বছরের ২১ মার্চ বালাইনাশক আইন-২০১৭ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। জানা গেছে, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আইনটি শীঘ্রই সংসদে উঠতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর আইনটি বাংলায় হওয়ায় কৃষক পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই এর সুফল ভোগ করবে। বায়ো-পেসটিসাইডের মতো ধারণা যুক্ত হওয়ায় আইনটি হয়েছে আধুনিক। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে উন্মুক্তভাবে বালাইনাশক বিক্রি, বালাইনাশকের অপব্যবহার ও উপযুক্ত মাত্রার নয় এমন বালাইনাশক বিক্রি হ্রাস করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ মনজুরুল হান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, পূর্বের আইনে অনেক বিষয়েই সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ছিল না। আর ভাষা ইংরেজীতে হওয়ায় এর গুরুত্ব অনুভব করা অনেকের জন্য দুরূহ ছিল। বর্তমানের আইনটিতে বায়ো-পেসটিসাইড সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আইনটি আগের তুলনায় আধুনিক হয়েছে। তিনি বলেন, বালাইনাশক আইন-২০১৭’র খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। শীঘ্রই তা সংসদে উঠার পর চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে বিশ্বাস করি। নতুন এ আইন প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্লান্ট প্রোটেকশন উইংয়ের পরিচালক মোঃ গোলাম মারুফ জনকণ্ঠকে বলেন, পূর্বে আইনটি ইংরেজীতে থাকায় ও আইনের ভাষা কঠিন হওয়ায় বিধিগুলো বুঝতে অনেকের কষ্ট হতো। পূর্বে মালিকানা হস্তান্তর বিষয়ে আইনে কোন দিকনির্দেশনা ছিল না। বর্তমানের আইনটিতে লাইসেন্সধারী ব্যক্তি মারা গেলে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারীর কাছে লাইসেন্স হস্তান্তরের বিধি সংযুক্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ আইন পরিপন্থী কিছু করলে প্রথমে আমরা তাকে সতর্ক করে দিই। তারপরও যদি সতর্ক না হয় তাহলে জেল জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে। আইনটিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, অন্য কেউ রেজিস্ট্রার্ড ব্র্যান্ডের কোন বালাইনাশক বিক্রি, বিক্রির জন্য উন্মুক্ত, মজুত বা বিজ্ঞাপন দিলে উপাদানগুলো গুণাগুণযুক্ত নয় অথচ বিক্রি করলে, বিজ্ঞাপনে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন বা এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করলে অপরাধটি শাস্তিযোগ্য হবে। প্রথমবার অপরাধের জন্য কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। পরবর্তীতে প্রতিবার অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই বছর পর্যন্ত কারাদ-ের বিধান রয়েছে। ডিলার বা ক্রেতাকে যদি বালাইনাশকের ব্যাপারে মিথ্যা নিশ্চয়তা দেয়া হয় তাহলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এতে বলা হয়, যদি কেউ নিবন্ধন নম্বর অননুমোদিত ব্যবহার করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোন বস্তু মিশিয়ে বালাইনাশকের উপাদান পরিবর্তন করে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক বা বিক্রেতার মাধ্যমে বাজারে আনা হয় বা আইনের অধীনে যদি কোন পরিদর্শককে তার কাজে অসহযোগিতা ও ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেয়া, প্রতিরোধ বা অন্য যে কোনভাবে বিরোধিতা করলে শাস্তি হিসেবে সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- হতে পারে। আইনে বলা হয়েছে, নিবন্ধনের সময় মিথ্যা তথ্য দিলে (পূর্বে বা পরে) মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী পুনরায় নিবন্ধনের আর কোন সুযোগ পাবে না। মাঠ পরিদর্শনের সময় পরিদর্শকরা অসঙ্গতি দেখলে যে কোন বস্তু জব্দ করতে পারবেন। কোন দ্রব্যাদি জব্দ করা হলে এ বিষয়ে আইন বা বিধিমালার লঙ্ঘনকারী অভিযুক্তের ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে হবে। বালাইনাশকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আইনের অধীনে কোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার কারণে দ-িত হন তাহলে আদালত বালাইনাশক, দ্রব্যাদি সরকারের অধীনে ন্যস্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে গ্রাহকরাও এনালিস্টের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন। আইনে বলা হয়েছে, বালাইনাশকের লেবেলে বিষ এবং ওই বিষের প্রতিষেধকের উল্লেখ, বালাইনাশকের নিরাপদ গুদামজাত করার প্রয়োজনীয় দিকসমূহ, কোন ব্যক্তি কোন সময় কোন জায়গায় কী অবস্থায় কী পরিমাণ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বালাইনাশক গুদামজাত করতে পারবে, বালাইনাশক নিয়ে কর্মরত শ্রমিকদের বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপত্তায় আগাম সতর্কীকরণসহ নানা বিষয়ে তথ্য থাকতে হবে। জানা গেছে, পাকিস্তান আমলের অধ্যাদেশের মাধ্যমেই এতদিন বালাইনাশকের আইনটি চলে এসেছিল। এর ভাষাও ছিল ইংরেজী। ফলে কৃষক পর্যায়ে বালাইনাশক ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন তথ্য অজানা থেকেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনটি বাংলা ভাষায় হওয়ায় সর্বস্তরের জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। আর নতুন কিছু ধারা সংযুক্ত হওয়ায় আইনটি হয়েছে পূর্বের তুলনায় আধুনিক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা দ্রুত সময়ে আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে।
×