ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাসিরউদ্দিন শাহ পরিবারের ‘ইসমত আপা কে নাম’ নাটকে মুগ্ধ ঢাকার দর্শক

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২২ এপ্রিল ২০১৭

নাসিরউদ্দিন শাহ পরিবারের ‘ইসমত আপা কে নাম’ নাটকে মুগ্ধ ঢাকার দর্শক

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সবার সৌভাগ্য হয় না চাইলেও আপন ইচ্ছেটি পূরণের। তেমনি চাইলেও উপমহাদেশের নামজাদা অভিনয়শিল্পী নাসিরউদ্দিন শাহর অভিনয় সরাসরি দেখার সুযোগটি পেলেন না অনেকে। তবে সৌভাগ্যবান প্রায় ৩ হাজার ভক্ত শুক্রবার বৃষ্টিপাত রাতে প্রিয় শিল্পীর অনবদ্য অভিনয় উপভোগের সুযোগটি পেয়েছেন। সিনেমার আলোচিত অভিনেতার দেখা মিললো নাটকে। রাজধানীর বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রি হলে মঞ্চস্থ হলো নাসিরউদ্দিন শাহ অভিনীত ও নির্দেশিত বিখ্যাত মঞ্চনাটক ‘ইসমত আপা কে নাম’। চলচ্চিত্রের বদলে নাটকে দেখা গেল নাসিরউদ্দিন শাহকে। নিজের নাট্যদল মোটলির এ প্রযোজনায় তার সঙ্গে এ নাটকে অভিনয় করেন তার স্ত্রী রতœা পাঠক শাহ্ ও মেয়ে হেবা শাহ। বাবা-মা ও সন্তানের অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক দেখলেন ভারতের খ্যাতিমান উর্দু ভাষার নারীবাদী লেখক ইসমত চুঘতাইয়ের স্পষ্টবাদী লেখনীর মঞ্চরূপ ও নির্দেশনা। এ আয়োজনের আয়োজক ছিল ব্লুজ কমিউনিকেশন, নিবেদন করে সিটি ব্যাংক। ঘড়ির কাঁটার মতোই ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মঞ্চে এলেন নাসিরউদ্দিন শাহ। পরনে কালো শেরওয়ানি, সাদা পায়জামা। মঞ্চে উঠে বললেন, ‘শুকরিয়া!’ তারপর দর্শকশ্রোতাদের সালাম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এসে আমরা খুব আনন্দিত। আপনারা অনেকে আমার চলচ্চিত্র দেখেছেন, তবে মঞ্চ নাটক বোধ হয় দেখেননি। আসলে অভিনয়ের সেরা জায়গাটাই হলো মঞ্চ। মঞ্চে অভিনয় করতে আমার খুব ভালো লাগে।’ কথা শেষে শুরু হলো এক পরিবারের তিন শিল্পীর অভিনয় উপভোগের পালা। ‘ইসমত আপা কে নাম’ একটি নির্র্দেশনা হলেও এখানে তিনটি গল্পের আলাদা মঞ্চরূপে পরিবেশিত হয়েছে। ‘চুই মুই’, ‘মুঘল বাচ্চা’ ও ‘ঘরওয়ালি’ এই তিনটির মধ্য দিয়ে নির্দেশক ও শিল্পীরা তুলে ধরেছেন পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজে নারীর পথচলা ও অস্তিত্ব রক্ষায় ভিন্ন তিন কাহিনী। সাবলীল বলার ভঙ্গিমার সঙ্গে নাটকে ছিল ব্যঙ্গ ও হাস্যরস। চমৎকার ভাবনার নাটকটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বিশাল ভরদ্বাজ। আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন দর্শন বনদাশ। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন সেলিম আরিফ। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন রতœা পাঠক। প্রযোজনা জয়রাজ পাতিল। নাটকের প্রথম গল্প ‘চুই মুই’। যার প্রধান দুটি চরিত্র দুই গর্ভবতী নারী। ট্রেনের একটি কামরায় তাদের দুজনের দুরকমের জীবন ভাবনা উঠে এসেছে। এই দুই নারীর গল্পের চরিত্রে রূপদান করেছেন হেবা শাহ। ট্রেনের দুই নারীর মধ্যে একজনের জীবনযাপন অনেকটাই আরামপ্রদ। তার জীবনে কোন কিছুর চিন্তা না থাকলেও তার শুধু একটাই আকাক্সক্ষা তাকে গর্ভবতী হতে হবে এবং একটি বাচ্চার জন্ম দিতে হবে। আর সেটা এ কারণেই যে তার স্বামী যেন তাকে ছেড়ে না যায়। অন্য গর্ভবতীর জীবন একেবারেই ভিন্ন। তার না আছে স্বামী না আছে সম্পদ। তার পথচলা মসৃণ নয়। তাকে প্রতি মুহূর্তে জীবনের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। হেবা শাহ্ তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দুই নারীর চরিত্রেই অপূর্ব অভিনয় করেন। পরিবেশনার সময় নানাভাবে দর্শকদের সঙ্গে মনোসংযোগের বিষয়টিতেও তার খেয়াল অপূর্ব। নাটকের দ্বিতীয় গল্পের নাম ‘মুঘল বাচ্চা’। এই গল্পে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রতœা পাঠক। গল্পটি ভারতে মুঘল আমলের পরবর্তী সময় ঘিরে। এই গল্পের চরিত্র দুটি- গোরি বি ও কালে মিয়া। কালে মিয়া মুঘলদের বংশধর। সে তার স্ত্রীকে বিয়ের রাতেই একাকী ও অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। এই গল্পে মূলত দেখানো হয়েছে কিভাবে ক্ষমতাধরদের বংশধরদের স্ত্রীদের তাদের নির্মমতা এবং অক্ষমতার বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়েছে। রতœা পাঠক একাধারে তার বর্ণনা এবং অভিনয় দিয়ে এ নাটকে মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। নাটকের শেষ গল্প ‘ঘরওয়ালি’। এটি ছিল এই নাটকের অন্যতম আকর্ষণ। এই গল্পেও দুটি চরিত্র। একদিকে অবিবাহিত মির্জা এবং অন্যদিকে গৃহপরিচারিকা ও যৌনকর্মী লাজ্জো। লাজ্জোকে অনেকেই কামনা বাসনার চোখে দেখে। কিন্তু সে তার গৃহকর্তাকে সমাদর করে। একসময় তাদের সম্পর্ক পরিণয়ে রূপ নেয়। কিন্তু তাদের দুজনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। একজন বৃদ্ধ ও নার্ভাস মির্জা অন্যজন তরুণী এবং স্বাধীনচেতা লাজ্জো। লাজ্জো তার জীবনে আরও কিছু চায়। কিন্তু মির্জা তা দিতে অপারগ। একসময় তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। নাটকের এই গল্পের মধ্য দিয়ে মূলত বৈবাহিক জীবন ও নারীর স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। নাসিরুদ্দিন শাহ্ তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা এবং কণ্ঠশৈলী দিয়ে মির্জা এবং লাজ্জোর চরিত্রে মুগ্ধ করেন সবাইকে। প্রতি অঙ্কে তার অভিনয় ও সংলাপ মানুষকে আনন্দ দিয়েছে, ভাবিয়েছে। সব মিলিয়ে নাসিরউদ্দিন শাহ পরিবার মন জয় করে নেন ঢাকার দর্শকদের। রুনার আমন্ত্রণে সপরিবারে নৈশভোজে নাসিরুদ্দিন শাহ বিডিনিউজ জানায়, উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ ঢাকায় এসেই দেখা করলেন আরেক কিংবদন্তি রুনা লায়লার সঙ্গে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক পারিবারিক আড্ডায় মিলিত হন দুই তারকা। ঢাকায় এসে রুনা লায়লার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ভোলেননি নাসিরুদ্দিন শাহ। নৈশভোজে আর আড্ডায় মেতে উঠলেন সপরিবারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে ছবি প্রকাশ করেছেন রুনা লায়লা ও আঁখি আলমগীর। রুনা লায়লার ভাইয়ের বাসায় এই পারিবারিক আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের সদস্যরা। তবে, আড্ডায় চিত্রনায়ক আলমগীর উপস্থিত থাকতে না পারলেও রুনাকে সঙ্গ দেন তাঁর কন্যা আঁখি আলমগীর। একসঙ্গে আড্ডা হলেও নাটকটি উপভোগ করতে পারলেন না রুনা। কেননা, শুক্রবার সকালেই লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি।
×