ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা কাপ কাবাডির চূড়ান্ত পর্ব শুরু ২৩ এপ্রিল

কাবাডির সুদিন ফেরাতে উদ্যোগ...

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২১ এপ্রিল ২০১৭

কাবাডির সুদিন ফেরাতে উদ্যোগ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ধারণা করা হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষ এককভাবে বা দলীয়ভাবে শিকার করতে এবং বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শিখেছিল, তখনই কাবাডির সূচনা। পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে কাবাডি প্রচলিত থাকলেও এর উৎপত্তিস্থল পাঞ্জাব। কাবাডির উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি মত হচ্ছে, মহাভারতে বর্ণিত অভিমন্যু কর্তৃক কৌরব সৈন্যদের চক্রব্যুহ ভেদ করার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে এ খেলার সৃষ্টি হয়। কাবাডি খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আরেকটি ধারণা হচ্ছেÑ এটি আরম্ভ হয় তামিলনাড়ুতে। দুটি বাচ্চা ছেলের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা থেকে এর ধারণা পাওয়া যায়, যদিও দম ধরে রাখার বিষয়টি তাতে পরে যুক্ত হয়। ব্যক্তি ও দলগতভাবে শত্রুপক্ষের আক্রমণ প্রতিহতকরণ এবং ত্বড়িত পাল্টা আক্রমণের কৌশল চর্চা করতে গিয়েই এ খেলার উদ্ভব। বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি আমাদের জাতীয় খেলা কাবাডি বা হা-ডু-ডু। ১৯৭২ সালে বাঙালীর ঐতিহাসিক হা-ডু-ডু খেলাটিকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে ঘোষণা হয়। ১৯৭৩ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়Ñ শুধু জাতীয় খেলার মর্যাদা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি কাবাডির ভাগ্যে। এই খেলার প্রসারে বাস্তবে কোন পদক্ষেপই নেয়নি ফেডারেশনের আগের কমিটিগুলো। যার প্রমাণ বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় খেলা কাবাডির জন্য নেই কোন শাখা। সময়ের বিবর্তনে আন্তর্জাতিক কাবাডিও অনেক বদলে গেছে। প্রো-কাবাডির প্রচলনে নিত্যনতুন নিয়ম যোগ হচ্ছে। ঘরোয়া পর্যায়ে সেসবের কোন চর্চা নেই। দেশে সেই পরিমাণ খেলোয়াড়ই নেই। সেনাবাহিনী, বিজিবির মতো বাহিনীগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায়ই খেলোয়াড়রা কোনরকম টিকে আছেন। ১৯৮০ সালে প্রথম এশিয়া কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক, দ্বিতীয় সাফ গেমসে রৌপ্যপদক, ২০০৬ সালে কাবাডি বিশ্বকাপে তাম্রপদক, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের ইন্দো-বাংলা গেমসে বাংলাদেশ স্বর্ণপদকের (কমপক্ষে দুই ডজন এমন সাফল্য আছে) মতো সম্মান অর্জন করে। এরপর আর তেমন কোন সাফল্য নেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ফেডারেশনেরও কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। ঘরোয়া আসরগুলো ঠিকঠাক মাঠে রাখাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে অনেক সময় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। পৃষ্ঠপোষকরা আবার জাতীয় দলের সাফল্য চায়। ব্যর্থতার এই চক্রতেই আটকা এখন কাবাডি। সম্প্রতি নতুন এ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব নিয়েছে কাবাডি ফেডারেশনের। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ একেএম শহীদুল হক। তার কমিটির অধীনে শুরু হয়েছে স্বাধীনতা কাপ কাবাডি প্রতিযোগিতা। দেশের ৪৩৪ উপজেলার ৫২০৮ খেলোয়াড় নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্ব। উপজেলা পর্যায় থেকে বাছাইকৃত দলগুলো নিয়ে ৬৪ জেলা হয়ে পরবর্তীতে ৮টি বিভাগের প্রথম স্থান অধিকারী দলগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই ৮টি বিভাগ থেকে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারী দলগুলোসহ সাতটি সার্ভিসেস দল নিয়েই ঢাকায় চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। দুটি গ্রুপের শীর্ষ চারটি দল নিয়ে আগামী ২৬ এপ্রিল দুটি সেমিফাইনাল ও পরেরদিন ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। চূড়ান্ত পর্বে টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আগামী রবিবার থেকে মিরপুর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হবে চূড়ান্ত পর্বের খেলা। এদিন বিকেল ৫টায় প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি একেএম শহীদুল হক। পাঁচদিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় দুই গ্রুপে ১০টি দল অংশ নেবে। দলগুলো হলো : গ্রুপ ‘এ’তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস, জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ও জেলা পর্যায়ে তৃতীয় দল। গ্রুপ ‘বি’তে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বাংলাদেশ জেল ও জেলা পর্যায়ে রানার্সআপ দল। বৃহস্পতিবার দুপুুরে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টুর্নামেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি ও ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ একেএম শহীদুল হক, বিপিএম, পিপিএম, ফেডারেশনের যুগ্মসম্পাদক ও এআইজি (ডেভেলপমেন্ট) গাজী মোজাম্মেল হক, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) মাহবুব হায়দার খানসহ ফেডারেশনের অন্য কর্মকর্তারা। ফেডারেশনের সভাপতি একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘এ প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে খেলোয়াড় বাছাই করা, যেন পরবর্তীতে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে কাবাডিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।’
×