ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্প মালিকরা এখনও অবকাঠামোর কাজ শেষ করতে পারেননি

চাওয়া মাত্র গ্যাস বিদ্যুত পানি সংযোগ মিলবে সাভারে ট্যানারি শিল্পে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ এপ্রিল ২০১৭

চাওয়া মাত্র গ্যাস বিদ্যুত পানি সংযোগ মিলবে সাভারে ট্যানারি শিল্পে

এম শাহজাহান ॥ চাহিবামাত্র গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির সংযোগ পাওয়া যাবে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে। মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই প্রস্তুতি নিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি, পল্লী বিদ্যুত সমিতি এবং পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আরএডিএ। এ লক্ষ্যে সরকারী এই তিনটি প্রতিষ্ঠান সেবা নিশ্চিত করতে প্রায় শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছে। কিন্তু চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তারা ট্যানারি চালাতে এখনও অবকাঠামোর কাজ শেষ করতে পারেননি। কারখানার প্রথম ধাপের কাজ বিল্ডিং নির্মাণ হয়নি অর্ধেক শিল্প ইউনিটের। যদিও বিটিএ এবং বিএফএলএলএফইএ’র আওতা-ধীন ১৫৪টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে ২০০৭ সালে ২০৪টি প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিসিক) সর্বশেষ তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৭টি ট্যানারি স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগ নিয়েছে। ৯টি প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ নিয়েছে এবং ৩১ প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ স্থাপনের জন্য মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। মাত্র ৪৬টি প্রতিষ্ঠান পানি সংযোগ নিয়েছে। সংযোগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিসিকের তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বিসিকের সহকারী প্রকৌশলী (কেমিক্যাল) সেহ্লী সাদেক জনকণ্ঠকে বলেন, মহামান্য কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর পনেরো দিনের মধ্যে সংযোগ দিতে বিসিক বিরতিহীন কাজ করছে। চাইলে পাওয়া যাবে পানির সংযোগ। আমরা ট্যানারি মালিকদের পিছে পিছে ঘুরছি পানির লাইন দেয়ার জন্য। অথচ তারা সংযোগ নিতে আসছে না। এ পর্যন্ত ৪৬টি প্রতিষ্ঠানকে পানির সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আবার বিসিকের তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি বলেন, আরএডিএ বগুড়া সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে পানি সংযোগের কাজটি করছে। এদিকে, যে সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নিয়ে এত বিতর্ক, তার কাজও প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে ৯৫ শতাংশ। সূত্রগুলো বলছে, ৪টি মডিউলের মধ্যে ২টি মডিউল রান করছে। বাকি ২টি মডিউল চলতি বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৪টি মডিউল চালাতে যে পরিমাণ বর্জ্য প্রয়োজন ট্যানারি পুরোমাত্রায় চালু না হওয়ায় তা পাওয়া যাচ্ছে না। উদ্যোক্তারা ট্যানারি চালু করতে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণে মনোযোগী হচ্ছে না। বরং কোর্টের রায় সামনে রেখে ১৫ দিনের মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির সংযোগের জন্য রাস্তায় কর্মসূচী দিচ্ছে। বিসিকের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, কতগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি সংযোগ দেয়া হয়। প্রথমে আবেদন করতে হয়, এরপর টাকা জমা দিলে ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয় এবং পরবর্তীতে সংযোগ দেয় সংস্থাগুলো। কিন্তু কতগুলো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে? তারা আবেদন না করে রাস্তায় কর্মসূচী দিচ্ছেন। এখন আবার মামলা করার হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে আগামী ২২ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরী সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভাটি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, ১৫ দিনের মধ্যে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি সংযোগ দেয়ার জন্য মহামান্য কোর্টের নির্দেশের নোটিস এখনও পায়নি বিসিক। এরপরও কোর্টের নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারী এই তিন সেবামূলক সংস্থা কাজ করছে। চাহিবামাত্র সংযোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে সংস্থাগুলো। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিকের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা মীর শাহীনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি সংযোগ দিতে তিনটি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি প্রস্তুত। চাহিবা মাত্রই সংযোগ দেয়া হবে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা সেভাবে আসছে না। তিনি জানান, তাদের অবকাঠামো নির্মাণ এখনও শেষ হয়নি। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে মাত্র। আর যারা অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করতে পেরেছে তারা সংযোগ নিয়ে উৎপাদনে চলে গেছে। প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল শনিবার পরিবেশ অধিদফতরের অভিযানে হাজারীবাগের ট্যনারিগুলোর বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এর পরের দিন ৯ এপ্রিল রবিবার মহামান্য আদালত ১৫ দিনের মধ্যে সাভারের শিল্পনগরীতে সব ধরনের সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশ পাওয়ার পর কিছু ট্যানারি সাভারে সরে যেতে সক্ষম হলেও বেশির ভাগ ট্যানারি স্থানান্তর হতে পারেনি। সাভারের চামড়া শিল্পনগরী বিসিকি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে ৫৩টি ট্যানারি ট্যানিং ড্রাম স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ৪৮টি ট্যানারি পুরোমাত্রায় উৎপাদনে গেছে। ১৩৯টি কারখানা স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগের জন্য আবেদন করেছে পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে। সব ট্যানারির ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হলেও টাকা জমা দিয়েছে ৮৬টি প্রতিষ্ঠান। কারখানা চালুর জন্য ৬৭টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগ নিয়েছে। নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য ৯২টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস বরাবর আবেদন করেছে। আর পানির জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪৬টি ট্যানারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, সাভারের শিল্পনগরী পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করবে। বিসিক থেকেও আদালতের নির্দেশনা মেনে কাজ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের ৩০ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪২ ট্যানারির বকেয়া ৩০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মওকুফ করে কারখানাগুলোকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। পরিবেশের ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া অর্থ পরিশোধের আদেশ স্থগিত এবং প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন করেছিলেন ট্যানারি মালিকরা। আদালতের নির্দেশের পরও সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে না গিয়ে যেসব চামড়া কারখানা রাজধানীর হাজারীবাগে থেকে গেছে, তাদের গ্যাস-বিদ্যুত-পানির সংযোগ ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন করেছে পরিবেশ অধিদফতর। ইতোমধ্যে আপীল বিভাগ বলেছে, যেসব ট্যানারি কারখানা সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুত সংযোগের আবেদন করেছে, তাদের ১৫ দিনের মধ্যে সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সাভারের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদফতর ও বিসিককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য সিইটিপি ও অন্যান্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হবে না। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর পর সেখানে নিজস্ব সম্পত্তি বা স্থাপনা মালিকরা যদি অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে চান, তাহলে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে সেখানে গ্যাস, বিদ্যুত, পানির সংযোগ দিতে বলেছে আদালত।
×