ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড়াঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

হাওড়াঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্যাকবলিত হাওড়াঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এ দাবি জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হাওড় এলাকায় এখনও সরকারের কোন মন্ত্রী না যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, হেফাজতকে বশে এনে সরকার তাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক করার চেষ্টা করছে। মির্জা ফখরুল বলেন, হাওড়াঞ্চলের কৃষক জীবন-জীবিকার একমাত্র সম্বল ফসল হারিয়ে এখন দিশাহারা। এপ্রিল মাসের ৪-৫ তারিখ থেকে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল, অকাল বন্যা, অতিবৃষ্টি এবং বিভিন্ন বাঁধ সংস্কার না করার ফলে ভেঙ্গে যাওয়ায় নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাওড় এলাকার সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসল থেকে প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো। নীরবে এসব এলাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে গেছে, যা এ দেশের মানুষের অজানা রয়ে গেছে। এসব এলাকার লাখ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। মানুষ অর্ধহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে। সরকারের ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল। ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়াঞ্চলে ইতোমধ্যে একজন আত্মহত্যা করেছে এবং একজন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। এতবড় বিপর্যয়ের পরও সেখানে সরকারের কোন মন্ত্রী যাননি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হাওড় এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। সেখানে যে কী অবস্থা বিরাজ করছে তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। আর ভেতরে ভেতরে এতবড় একটা বিপর্যয় ঘটে গেলেও তা গণমাধ্যমে সেভাবে উঠে আসেনি। তিনি বলেন, হাওড় এলাকায় বন্যায় ফসল বিনষ্টের সংবাদে উদ্বিগ্ন হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দেন। হাওড়াঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, সরকারী ত্রাণ তৎপরতা একেবারেই অপ্রতুল এবং লোক দেখানো। খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রির কথা বলা হলেও তা দৃশ্যমান নয় এবং এ নিয়ে চরম দুর্নীতি হচ্ছে। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের প্রতি এদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। আর এ কারণেই সরকার হাওড়াঞ্চলের জনগণের দুর্দশায় নির্বিকার। ফখরুল বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলেই প্রথম সরকারীভাবে হাওড়াঞ্চলে ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের আগেই বাঁধগুলো সরকারী খরচে সংস্কার করা হতো। কিন্তু এ বছর দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে বাঁধগুলো যথাযথভাবে সংস্কার না হওয়ায় উজানের পানির ঢলে দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে ফসল নষ্ট করে। সম্প্রতি বিভিন্ন ইসলামিক দলসহ হেফাজতকে কাছে টানার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ, এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী- এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কথা একরকম, কাজ একরকম, যেটা আওয়ামী লীগ খুব সুন্দর করে পারছে আর কী। পিটিয়ে-পুটিয়ে শেষে বলে, এসো তোমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি, ভালবাসা করি- এগুলোর মধ্যে আমরা সহজে যাই না। আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। হেফাজতে ইসলাম তখন যে দাবিগুলো করেছিল, তার মধ্যে কিছু দাবি আমরা যুক্তিসঙ্গত মনে করে সেগুলোকে সমর্থন দিয়েছিলাম। আর যে কাজটা আওয়ামী লীগ এখন করল ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, হেলিকপ্টার দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে এলো মাওলানা শফি ও অন্য নেতাদের। তাদের পাশে বসিয়ে সুন্দর করে খাবার-দাবার তুলে খাওয়ালেন, ভাল কথা। হসপিটালিটি আমাদের বাংলাদেশের ঐতিহ্য। কিন্তু কী করলেন, অতীতে যেটা হয়ে গেছে, সেটাই উনারা করলেন। আমাদের আমলে তো দাওরায় হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়ে গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা সব সময় ন্যায়ের সঙ্গে আছি। ন্যায়সঙ্গত দাবির সঙ্গে আছি এবং আমরা মনে করি, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক করা দরকার। তাদের যেন চাহিদা অনুযায়ী কাজে লাগাতে পারি, তারা যেন ওয়ার্কিং ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারে, আমরা সেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে চাই। হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ঘটনা কি দ্রুত নির্বাচনের আভাস দিচ্ছে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তেমনটি আমরা মনে করি না। কারণ, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের তো আর ভোটের প্রয়োজন হয় না। ভোট ছাড়াই তো তারা ক্ষমতায় যেতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। প্রয়োজন কেবল নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। এ দুটি বিষয় হলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। তবে দলের নেতাকর্মীদের জেলে রেখে আমরা নির্বাচনে যাব না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ কারণেই আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিচ্ছে এবং তাদের গ্রেফতার করছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের সঙ্গে সে দেশ থেকে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে। কারণ, উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত এসব নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয়ায় বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে দিচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়াঞ্চলে প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নির্ভুল তালিকা করে আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত ত্রাণ তৎপরতা চালানোর দাবি করছি। এছাড়া পুরাতন কৃষিঋণ মত্তকুফ, আগামী ফসলের জন্য সুদবিহীন নতুন কৃষিঋণ দেয়া, কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ও তেলসহ কৃষি উপকরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কার ও আগামী বোরো ফসল ওঠার আগেই এলাকার নদীসমূহের যথাযথ ড্রেজিং করার দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেনÑ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ। হাওড়াঞ্চলে কৃষিঋণ মওকুফ করুন ॥ দুদু সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, হাওড়াঞ্চলে সর্বস্বান্ত কৃষকদের পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা ও সুদসহ কৃষিঋণ মওকুফ করুন, যাতে তারা আবার অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে নতুন করে দাঁড়াতে পারে। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কৃষক দল আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। দুদু বলেন, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড়াঞ্চলে ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে কৃষকদের ফসল, গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে উক্ত এলাকার মানুষ এখন বিপর্যস্ত। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত গিয়েছিলেন, এখন ভুটান গেছেন। কিন্তু তিনি দুর্গত হাওড় এলাকা দেখার সময় পাননি। তিনি দুর্গত মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়াননি। অথচ তিনি নিজেকে কৃষক ও শ্রমিকদের নেত্রী হিসেবে দাবি করেন। আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি একেএম মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেনÑ বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কেএম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
×