ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন এরদোগান

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা বাড়ানো প্রশ্নে গত রবিবার অনুষ্ঠিত গণভোটে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফল অনুযায়ী তার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়ে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বিপক্ষে পড়ে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট। সুতরাং এটি স্পষ্ট দৃশ্যমান যে, এরদোগান খুব অল্প ব্যবধানে গণভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য, অনেক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে এ গণভোট যে স্বচ্ছ হয়নি তার সপক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। সবার সঙ্গে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ ও কাউন্সিল অব ইউরোপ বেশকিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরে এ গণভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের সমর্থকদের অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ। ‘হ্যাঁ’ ভোট অর্থাৎ এরদোগান সমর্থকরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এতে প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রিবর্গ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রবাসীদের সমর্থন আদায়ের জন্য বিদেশে তার মন্ত্রীদের পাঠিয়ে প্রচারকাজে নিয়োগ করেন। জরুরী অবস্থার মধ্যে এ গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে এবং একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকার মতো আইনগত কাঠামো পর্যাপ্ত ছিল না। সবচেয়ে সন্দেহজনক একটি সরকারী পদক্ষেপের প্রতি সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে যে, গণভোট চলাকালে একেবারে শেষ দিকে এমন সব নির্বাচনী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যারা সরকারী সিল স্বাক্ষরহীন ব্যালট পেপারও গণনার আওতায় এনেছেন। এ বিষয়ে কাউন্সিল অব ইউরোপ প্রতিনিধি দলের প্রধান সিজার ফ্লোরিন প্রেভা বলেছেন, সবদিক বিবেচনা করলে ইউরোপীয় মাপকাঠিতে এ গণভোট মানসম্মত হয়নি। কিন্তু এসব সমালোচনার প্রতি কর্ণপাত না করে প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার আঙ্কারার প্রাসাদ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বেশ রাগত স্বরে বলেন, তুরস্ক এসব রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন দেখে না, শোনে না, স্বীকারও করে না। কিন্তু এরদোগান স্বীকার করুণ আর না করুণ, দেশটি যে এ গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’-এর মধ্যে পড়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল এটি তো অস্বীকার করা যাবে না। এর আগে ২০১৬-এর জুলাইয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের সময়ে সমগ্র তুরস্কে এরদোগানের সপক্ষে বিপুল মানুষের ঢল নেমেছিল, সেসব শহরেও এরদোগানের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। রাজধানী আঙ্কারাসহ ইস্তানবুল ও ইজমিরের মতো বড় শহরে ‘না’ ভোট জয়যুক্ত হয়েছে। ইস্তানবুলে ‘না’ পন্থীরা বড়সড় বিক্ষোভ মিছিলও বের করেছে। তুরস্কের রাজনীতি সচেতন মানুষ ঠিকই বুঝতে পেরেছেন যে, এরদোগানের প্রবল ইচ্ছা ‘কনস্টিটিউশনাল মনার্ক’ হওয়ার। এ গণভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি হবেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করে যাকে খুশি আজ্ঞাবহ মন্ত্রী এবং বিভিন্ন পদে সরকারী কর্মকর্তাদের ডিসক্রেশনারি ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে গণভোটের আগেই লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিক্সের কনটেম্পরারি টার্কিশ স্টাডিজের প্রধান এসরা ওজিউরেক বলেছিলেন, তুরস্কে ‘হ্যাঁ’ পক্ষ জয়যুক্ত হলে ক্ষমতাসীন সরকারকে সঠিক পথে রাখতে ভারসাম্য বজায় রাখার পথ বন্ধ হয়ে যাবে, পার্লামেন্ট পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে এরদোগান বলেছেন, তিনি তুরস্কে মৃত্যুদ-ের বিধান পুনরায় চালু করবেন। তিনি এ মৃত্যুদ-ের বিধান পুনর্বহাল করলে তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করা সম্ভব হবে না। রবিবারের গণভোটে বিজয় অর্জন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সিরিয়া বিমানঘাঁটিতে মার্কিন হামলাকে সমর্থন করায় তিনি এরদোগানকে ধন্যবাদ জানান। এর আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় তুরস্কের সেনা বিদ্রোহ ও কুর্দী বিদ্রোহীদের নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক বেশ তিক্ততায় পৌঁছে। -এএফপি।
×