ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুর টাউন থিয়েটারের নাট্যোৎসবে ‘রাজার চিঠি’ নাটকের মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

ফরিদপুর টাউন থিয়েটারের নাট্যোৎসবে ‘রাজার চিঠি’ নাটকের মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফরিদপুর টাউন থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের নিজস্ব প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে ‘১৪৩ বছর পূর্তি ও নাট্যোৎসব ২০১৭’। শনিবার এ উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফরিদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধা, পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, ফরিদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর, পৌরসভার মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু। বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর টাউন থিয়েটারের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাস। সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক ও ফরিদপুর টাউন থিয়েটারের সভাপতি উম্মে সালমা তানজিয়া। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে মঞ্চস্থ হয় ভারতের অশোকনগর অন্বেষা নাট্যদলের নাটক ‘শুক সারি কথা’। গতকাল রবিবার মঞ্চস্থ হয় ফরিদপুর টাউন থিয়েটারের নাটক ‘শাস্তি’। আজ মঞ্চস্থ হবে রাজবাড়ীর স্বদেশ নাট্যাঙ্গনের নাটক ‘৭১ এর রাজবাড়ী’। উৎসব চলবে আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। উৎসবের শেষ দিন সাভারের জাগরণী থিয়েটারের ‘রাজার চিঠি’ নাটকের ১১তম মঞ্চায়ন হবে। জাগরণী থিয়েটারের ১৫তম প্রযোজনা ‘রাজার চিঠি’ নাটকটি রচনা করেছেন মাহফুজা হিলালী। নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন স্মরণ সাহা, মাহামুদা ইয়াসমিন সুমি, সুইটি চৌধুরী, শাহনাজ শারমিন খান শিমু, মোঃ ইয়াসিন শামীম, মোঃ বাহারুল ইসলাম বাহার, মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি, মোঃ মাহামুদুল হাসান মুকুল, রোকুনুজ্জামান আপেল, সোয়েব হাসনাত মিতুল, সজীব ঘোষ, রিপা হালদার। নাটকের আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান, নৃত্যনির্মিত অনিকেত পাল, পোশাক পরিকল্পনা এনাম তারা সাকী, আবহ সঙ্গীত রামীজ রাজু ও সোয়েব হাসনাত মিতুল। ‘রাজার চিঠি’ নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় ১৯৩৯ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাসিন্দা শ্রী হরিদাস বসাক। এক সময় যুবক হরিদাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। এ নিয়ে তার পরিবার-পরিজন এবং বন্ধুবান্ধব হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু দেখা যায়, একদিন রবীন্দ্রনাথ সে চিঠির উত্তর দিয়েছেন। এ সময় হরিদাস বসাককে সবাই সমীহ করতে শুরু করে। অন্যদিকে হরিদাস বসাকও সাহিত্যসংস্কৃতির কাজে নিজেকে সঁপে দেন। সময়ের প্রবাহে আসে ১৯৪৭ সাল। এ সময় অনেকেই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়। কিন্তু যে ঠিকানায় রবীন্দ্রনাথ তাকে চিঠি লিখেছেন, সে ঠিকানা হরিদাস বসাক বদল করতে চান না। নাটকে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের চিত্র এবং হরিদাস বসাকের মাতৃভূমি আঁকড়ে থাকা দেখা যায়। এরপর আসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় হরিদাস বসাকের স্বপ্নভঙ্গ হয়। পুড়িয়ে ফেলা বাড়ি-ঘর দুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে হরিদাস বসাক সে দিন তার আত্মজনের খোঁজ নেন না, শুধু শিশুর মতো হাহাকার করেন চিঠিটির জন্য। এ অবস্থায় পাকিস্তানী আর্মি এসে দাঁড়ায় হরিদাস বসাকের সামনে। তার মুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনে আর্মিরা তাকে বেয়োনেট দিয়ে মারতে থাকে। কাহিনী এখানেই শেষ হয়েছে, কিন্তু এর বিস্তৃতি বহু দূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। একটি চিঠি মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে, কিংবা রবীন্দ্রপ্রেম একজনকে কতটা কেন্দ্রিভূত করতে পারে, তাই দেখানো হয়েছে নাটকে। নাটকে প্রকাশিত হয়েছে মানুষের প্রতিদিনের জীবনে রবীন্দ্র-সাহিত্য কতটা প্রাসঙ্গিক। আরও প্রকাশিত হয়েছে বাঙালীর সমস্ত জীবনবোধে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে মিশে আছেন। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য এবং রবীন্দ্রনাথ নিজে মানুষকে বদলে দিতে পারেন সম্পূর্ণভাবে তাও প্রকাশ পেয়েছে। এ নাটকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সমাজ জীবনে ১৯৩৯ এবং ১৯৪৭ সালের সময়, ১৯৪৭-এর পরবর্তী সময় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি। নাটকে যদিও ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময় দেখানো হয়েছে, তবু বর্তমান সময় পর্যন্ত এর প্রভাব বিস্তৃত। আধুনিক যুগের জীবন-জিজ্ঞাসার নানাবিধ সমাধান রবীন্দ্রসাহিত্যে ছড়িয়ে রয়েছে। তারই একটি নমুনা পাওয়া যায় এ নাটকে। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বের জঙ্গী অস্থিতার সময়ে মানুষকে মানবিক সংস্কৃতিতে কেন্দ্রিভূত করতে রবীন্দ্রসাহিত্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
×