ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়নি, আজ থেকে নামবে ভিজিলেন্স টিম

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়নি, আজ থেকে নামবে ভিজিলেন্স টিম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত মানেননি অধিকাংশ পরিবহন মালিক। শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বেশিরভাগ রুটে সিটিং সার্ভিস চলতে দেখা গেছে। এদিকে এ সার্ভিস বন্ধে রবিবার থেকে পাঁচটি স্পটে ভিজিলেন্স টিম কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শনিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ঢাকার বাস-মিনিবাসে শনিবার থেকে সিটিং সার্ভিস প্রথা বাতিল করে পরিবহন মালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ৪ এপ্রিল। কিন্তু সকালে যাত্রাবাড়ী-সাভার রুটে লাব্বাইক পরিবহনকে সিটিং হয়ে চলতে দেখা গেছে। পোস্তগোলা-গাজীপুর রুটে চলা ছালছাবিল ও অনাবিল পরিবহনেও দেখা গেছে একই চিত্র। ভাড়াও নেয়া হচ্ছে সিটিংয়ের। এছাড়া চিড়িয়াখানা থেকে মতিঝিল রুটে নিউ ভিশন পরিবহনও সিটিং হয়ে চলছে। মিরপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পথে চলা দিশারী পরিবহনে লোকাল যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত চলা রাইদা পরিবহনে সিটিং সার্ভিসের পাশাপাশি কাউন্টার সিস্টেমও সচল রয়েছে। কোন বাসেই ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো চোখে পড়েনি। এছাড়াও মোহাম্মাদপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে মৈত্রী পরিবহন, রাজাসিটি ও ফতেহ ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের কিছু বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলছে। তবে লোকালও চলছে ওসব কোম্পানির বাস। ‘ডাইরেক্ট’ সেবা দেয়া মৈত্রী পরিবহনের একটি বাসের চালক আল আমিন বলেন, অফিস টাইমে সবারই উপকার হয়। তাই ‘ডাইরেক্ট’ চালাই। দশটার পর আর ‘ডাইরেক্ট’ চলে না। সিটিং সার্ভিস বন্ধ হয়নি মিরপুর-মতিঝিল, মিরপুর কেরানীগঞ্জ, মিরপুর-সদরঘাট রুটের বাসেও। চিড়িয়াখানা থেকে আরামবাগ, কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট ও যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে আগে থেকেই চলা দিশারী পরিবহন, এভারেস্ট পরিবহন, তানজিল পরিবহনেও আদায় হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। বিমানবন্দর রুটে চলা বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া নেয়া ও সিটিং হয়ে চলার অভিযোগ মিলেছে। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় মালিকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। এ কারণে শনিবার ঢাকার রাস্তায় বাসের সংখ্যা ছিল অনেক কম। মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অনেকেই বাস না নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার অনেকেই জানিয়েছেন, রবিবার থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। শনিবার কিছু কিছু পরিবহন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিটিং সার্ভিস বাতিল করেছেন বলেও জানান তারা। সিটিং সার্ভিস বন্ধে মালিক সমিতি পাঁচটি পরিদর্শন দল (ভিজিলেন্স টিম) গঠন করেছে। রবিবার সকাল থেকে নগরীর পাঁচটি স্থানে তারা সড়কে অবস্থান নেবে। স্থানগুলো হচ্ছে আসাদগেট, আগারগাঁও (আইডিবি ভবনের সামনে), শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে, রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে ও যাত্রাবাড়ীর চাংপাই রেস্তরাঁর সামনে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে বলেন, শনিবার থেকেই অনেক মালিক সিটিং সার্ভিস বাতিল করে নরমাল চালাচ্ছেন। এরপরও বিআরটিএতে বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। তাদের ভিজিলেন্স টিম নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে অবস্থান নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, আশা করি সবাই সমিতির সিদ্ধান্ত সাড়া দেবেন। যারা মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটিং সার্ভিস চালাচ্ছেন আমরা অনুরোধ করব আপনারা সিদ্ধান্ত নেনে নিন। এতে মালিকদের ব্যবসায়িকভাবে লস হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে যানবাহন থেকে অবৈধ হুক এ্যাঙ্গেল খুলে ফেলা, সিটিং সার্ভিস বন্ধসহ পরিবহন খাতের সমস্যা সমাধানে করণীয় ঠিক করতে পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও মালিক-শ্রমিক নেতারা বৈঠক করেছেন। বিকেল চারটায় এলেনবাড়ীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জানান, সিটিং সার্ভিস বন্ধে রবিবার থেকে রাজধানীতে অভিযান চলবে। প্রতি সপ্তাহে চারদিন অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিনে পাঁচটি মোবাইল কোর্ট চলবে। মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি ছাড়াও পুলিশ ও এতে উপস্থিত থাকবে। কেউ সিটিং সার্ভিস হয়ে গাড়ি চালালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ জানান, রবিবার সকাল এগারোটায় আসাদগেটে ভ্রাম্যমাণ টিমের কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। এতে বিআরটিএ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। যতদিন লাগে এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি। বৈঠকে বিআরটিএ কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সড়ক পরিবহন সমিতি ৪ এপ্রিল সিটিং সার্ভিস বন্ধ করাসহ আরও যেসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৫ এপ্রিলের পর যাত্রীদের কাছ থেকে কোনভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া যাবে না। ভাড়ার তালিকা বাসের ভেতর দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখতে হবে। ছাদের ওপরে ক্যারিয়ার, সাইট এ্যাঙ্গেল ও ভেতরের অতিরিক্ত আসন খুলে ফেলতে হবে। প্রতিটি বাস ও মিনিবাসে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আসন সংরক্ষণ করতে হবে। এক মাসের মধ্যে রংচটা, রংবিহীন, জরাজীর্ণ বাস মেরামত করে রাস্তায় নামাতে হবে। মোটরযান আইন অনুসারে, সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। চালকের আসনসহ মিনিবাসে ৩১ আসন থাকবে। এর বেশি আসন হলে তা বাস। আর বিআরটিএ পরিবহন খাতের ২০ বিষয়ে ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করে বাস-মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করে। সর্বশেষ ব্যয় বিশ্লেষণে প্রতিটি বাস-মিনিবাসের ৮০ শতাংশ আসন পূর্ণ হয়ে চলাচল করবে। কিন্তু রাজধানীতে প্রায় সারা দিনই দাঁড়িয়ে যাত্রী যাতায়াত করেন। যাত্রীরা সকাল ও বিকেলে অফিসযাত্রা ও ছুটির সময় দরজাতেও ঝুলে যাতায়াত করেন। ঢাকায় মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারিত আছে কিলোমিটার প্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা আর বড় বাসে ১ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বনিম্ন দূরত্বের বেশি যাতায়াতের ক্ষেত্রে সরকার-নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ভাড়ার হার কার্যকর হওয়ার কথা। এছাড়া বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) নাজমুল আহসান মজুমদার বলেন, বাস সিটিং যাবে, নাকি ভরে চলবেÑ সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি বেশি নিলে আমরা মেনে নেব না। আমাদের নির্বাহী হাকিমেরা জেল-জরিমানা করবেন। আর মালিক সমিতি চাইলে তাদেরও আমরা সহায়তা দেব। আর হুক-এ্যাঙ্গেল খুলে ফেলার জন্য সারাদেশেই কাল থেকে অভিযান চলবে।
×