ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও দলে ফিরতে না পেরে বিএনপির সংস্কারপন্থীরা হতাশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৮ এপ্রিল ২০১৭

এখনও দলে ফিরতে না পেরে বিএনপির সংস্কারপন্থীরা হতাশ

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপি হাইকমান্ড সংস্কারপন্থী নেতাদের পদ-পদবি দিয়ে দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বার বার আশ্বাস দিলেও এখনও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ কারণে সংস্কারপন্থী নেতারা এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। এদিকে অতীত কর্মকা-ের জন্য ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরে আসার আশ্বাস দেয়া হলেও দলে বাইরে থাকা প্রায় অর্ধশত সংস্কারপন্থী নেতার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ক’জন ছাড়া অন্যরা বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে এ ধরনের কোন অনুভূতি প্রকাশ করেননি। সংস্কারপন্থীদের এখনও দলে ফিরিয়ে না আনার এটি একটি বড় কারণ। গত বছর ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের আগে দলের হাইকমান্ড সংস্কারপন্থী নেতাদের দলে ফিরে আসার আহ্বান জানান। এরপর বেশ ক’জন সংস্কারপন্থী নেতা পদ-পদবি ফিরে পেলে দলে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জাতীয় কাউন্সিলের পর বিএনপির ৫৯২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও বেশ ক’টি পদ খালি রাখা হয়। এরপর সংস্কারপন্থী কোন কোন নেতা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের জানানো হয় আরও প্রায় অর্ধশত পদে নতুন নেতা নিয়োগ করা হবে। এতে সংস্কারপন্থী প্রায় অর্ধশত নেতা ধরে নেন তাদের এ পর্যায়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেয়া হবে। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিলের পর প্রায় এক বছর সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পরও সংস্কারপন্থী নেতাদের দলে ফিরিয়ে না আনায় তারা আবার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সর্বশেষ এ বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংস্কারপন্থী বিএনপির প্রভাবশালী নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন ও সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল সাক্ষাত করেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের দলে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। খুব শীঘ্রই সব সংস্কারপন্থীদের পদ পদবি দিয়ে দলে ফিরিয়ে আনা হবে বলে সে সময় বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু এখনও সংস্কারপন্থী নেতাদের দলে ফিরিয়ে না আনায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে নতুন রাজনৈতিক জোটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সংস্কারপন্থী বিএনপি নেতাদের সর্বশেষ বৈঠকের পর দলের কিছু নেতা তাদের দলে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আপত্তি করেন। এরপর এ ইস্যুটি নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ ক’জন সিনিয়র নেতা সংস্কারপন্থীদের স্বসম্মানে দলে ফিরিয়ে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ক’জন সিনিয়র নেতা সংস্কারপন্থীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানান। এছাড়া লন্ডন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সংস্কারপন্থী নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করছেন বলে জানা গেছে। আর এ কারণেই সংস্কারপন্থী বিএনপি নেতাদের দলে ফিরিয়ে পদ-পদবি দেয়ার বিষয়টি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংস্কারপন্থী নেতা জানান, দলীয় হাইকমান্ডের আশ্বাস পেয়ে আমরা বিএনপিতে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের স্বসম্মানে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দলীয় হাইকমান্ড থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখছি না। তাই আমাদের নিয়ে আসলে বিএনপি হাইকমান্ড কি করতে চাচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে বলেছেন। তাই এখন আর বিএনপির কাউকে সংস্কারপন্থী বলে দূরে রাখা ঠিক নয়। আর যারা এখনও নিজেদের সংস্কারপন্থী ভেবে দূরে সরে আছেন তাদেরও উচিত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলকে এগিয়ে নিতে কাজ করা। যারা বিএনপির আদর্শে বিশ্বাস করে তারা কারও ডাকের অপেক্ষায় বসে থাকা ঠিক নয়। আশা করি শীঘ্রই তারা সবাই দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় হবেন। ইতোমধ্যেই কেউ কেউ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে দলে সক্রিয় হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আর দলে ফিরে এলে চেয়ারপার্সন অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন। তিনি ইচ্ছা করলে তাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদে স্থান দিতে পারবেন। উল্লেখ্য, বিএনপির সংস্কারপন্থী যেসব নেতারা এখনও দলের বাইরে রয়েছেন তারাই ছিল এক সময় দলের মূল শক্তি। দলীয় যে কোন কর্মকা-ে তাদের সরব উপস্থিতি বিএনপির এগিয়ে চলার পথে সাহস যোগাত। কিন্তু দলের দুর্দিনে তারা এখন নেই। দীর্ঘদিন পর বিএনপি হাইকমান্ড তাদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরে দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও এ উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে এনে কোন এক সময় সংস্কারপন্থী নেতাদের দলে ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
×