ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরীহ মানুষের রক্তে লাল হয়েছিল ভদ্রা নদীর পানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ এপ্রিল ২০১৭

নিরীহ মানুষের রক্তে লাল হয়েছিল ভদ্রা নদীর পানি

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে ॥ হিন্দুদের ঘরবাড়ি চিনিয়ে দিতে অস্বীকার করায় শরীরে পাট জড়িয়ে প্রথমে আগুন দিয়ে এবং পরে গুলি করে হত্যা করা হয় তালার পারকুমিরায় কাশিপুর গ্রামের হায়দার আলী বিশ্বাসকে ’৭১-এর ২৩ এপ্রিল। একই দিনে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার পারকুমিরায় জড়ো হওয়া ৭৯ নারী-পুরুষ ও শিশুকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। ’৭১-এর ২৩ মে বেলা সাড়ে ১১টায় সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে ইছামতি নদীতে নৌকায় করে ভারতে যাওয়ার পথে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৫০ নারী-পুরুষ ও শিশুকে। রক্তাক্ত হয় ইছামতি নদী। সাতক্ষীরা শহরের সরকারী বালক বিদ্যালয়ের পিছনে দীনেশ কর্মকারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া ৭০ শরণার্থীকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আর জবাই করে হত্যা করা হয় ’৭১-এর ২১ এপ্রিল। ২০ মে এ অঞ্চলের ভয়াবহ ও বর্বর হত্যাকা- চালানো হয় সাতক্ষীরা খুলনা সড়কের চুকনগরে। খুলনার ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, ফুলতলা, দিঘলিয়া, তেরখাদা, বাগেরহাট জেলার রামপাল, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জের ১২ থেকে ১৫ হাজার নিরস্ত্র নারী, পুরুষ শিশুকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। এসব নিরীহ মানুষের রক্তে সেদিন রক্তাক্ত হয়েছিল ভদ্রা নদীর পানি। এক সঙ্গে এত মানুষের নৃশংস হত্যাকা- পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল বলে উল্লেখ করেন প্রত্যক্ষদর্শী আলোচকরা। স্মৃতিচারণে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ’৭১-এর গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠল প্রত্যক্ষদর্শী, শহীদ পরিবারের সদস্য আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণে। সরকার ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার পর শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সদরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় চত্বরে আয়োজন করা হয় গণহত্যা ৭১ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল শীর্ষক সংলাপের। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তালার উপজেলা কমান্ড, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম গণগ্রন্থাগার এই সংলাপ সমাবেশের আয়োজন করে। তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজ উদ্দীনের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইমলাম। স্মৃতিচারণ করে গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন শহীদ পরিবারের সন্তান টিপু সুলতান, শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু, বটিয়াঘাটা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ম-ল, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র সরকার, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোড়ল আবু বকর, এম ময়নুল ইসলাম, অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক হাসেম আলী ফকির, শ্যামল কুমার বিশ^াস, কৃষ্ণেন্দু বিশ^াস, বিপদ জ্ঞান গোলদার, সুকৃতি বিশ^াস, চিত্তরঞ্জন গাইন, লায়লা পারভীন সেঁজুতি, উপাধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ মোড়লসহ শহীদ পরিবারের সদস্য ও অনেক প্রত্যক্ষদর্শী। সংলাপ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এনামুল ইসলাম। বক্তারা স্মৃতিচারণে খুলনা-সাতক্ষীরার অঞ্চলের চুকনগর, ডাকরা, পারুলিয়া, বাদামতলা, ঝাউডাঙ্গা, পারকুমিরা, সাতক্ষীরা সরকারী বালক বিদ্যালয়সহ কমপক্ষে ১২টি জায়গায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার তথ্য তুলে ধরেন। তাদের সেই হৃদয়বিদারক ও ভয়াবহ দিনের কথা স্মরণ করে আলোচকদের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলের চোখেও পানি নেমে আসে। সংলাপ অনুষ্ঠানে এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র যুবক, নারী-পুরুষসহ সকল বয়সের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে চিটাগাং চেম্বার দল দিল্লী যাচ্ছে আজ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে আজ ভারত যাচ্ছেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। শুক্রবার সকালে তিনি ঢাকা থেকে দিল্লীর উদ্দেশে যাত্রা করবেন। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি একই সঙ্গে এফবিসিসিআই এবং কনফেডারেশন অব ইস্টার্ন চেম্বারস অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি এবং মালির কনসাল জেনারেল। সফরসঙ্গী হিসেবে প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন চিটাগাং চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এ কে এম আক্তার হোসেন, মাহফুজুল হক শাহ, মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর পারভেজ ও চেম্বার সদস্য জামিলা মাহবুব। চিটাগাং চেম্বার সূত্রে জানানো হয়, ভারত সফরকালে তারা ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বারস্ অফ কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই), কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) ও এএসএসএমের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণে বিজনেস সেশনে অংশগ্রহণ করবেন। আগামী ১০ এপ্রিল তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
×