ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সব চুক্তির বিষয় জনগণকে জানানো হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৫ এপ্রিল ২০১৭

সব চুক্তির বিষয় জনগণকে জানানো হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে গোপনীয়তার কিছু নেই। চুক্তির সবকিছুই জনগণ জানতে পারবেন। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরের বিষয়ে অবহিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি নিমন্ত্রণপত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আর পৃথক এক নিমন্ত্রণপত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হবে নাকি চুক্তি হবেÑ এমন প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক হবে বলে ইঙ্গিত করেন। এ চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গোপন কোন বিষয় না। এ চুক্তির সবকিছুই আপনারা জানতে পারবেন। তবে এ চুক্তি নিয়ে আমাদের নিন্দুকেরা যা বলছে সেটি ঠিক নয়। ভারত সফরকালে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পর্ক এখন যে অবস্থানে আছে, সেখানে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। সেখানে একটি বিষয় হলো কি হলো না, সেটি তেমন বড় কিছু নয়। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বেশির ভাগই সীমান্ত হাট স্থাপন, তথ্য ও সম্প্রচার, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ভারতের প্রদেয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট, বিদ্যুত ও জ্বালানি সহযোগিতা সম্পর্কিত বলেও জানান মন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করবেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুত-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক-চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি গুরুত্ব পাবে। চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুদেশের দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল, ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠান থেকে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে। এবারের সফরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন, তাদের মরণোত্তর মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে সাতজন শহীদকে সম্মাননা দেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ১ হাজার ৬৬১ জনকে এ সম্মাননা দেয়া হবে। ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দুদেশের ব্যবসায়ীদের একটি বিজনেস ইভেন্টে অংশ নেবেন। সেই ইভেন্টে বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা হবে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক বর্তমানে বিশেষ উচ্চতায় অবস্থান করছে। সাম্প্রতিককালে বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে স্থলসীমানা ও সমুদ্রসীমার নির্ধারণ সারাবিশ্বের সামনে সহযোগিতার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় যথা, নিরাপত্তা ইস্যু, আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুত খাতে সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জনযোগাযোগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক, আন্তঃদেশীয় বাস, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিল্লী সফরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলে ৪০ জন সফর সঙ্গী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেনÑ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী, আইন ও বিচারমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।
×