ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হচ্ছে জুনে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৫ এপ্রিল ২০১৭

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হচ্ছে জুনে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ। চলতি মাসেই খুলে দেয়া হচ্ছে এফডিসি থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত ফ্লাইওভারের লুপ। কাকরাইল হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের উড়াল সড়ক দিয়ে কাওরান বাজারমুখী যে কোন গাড়ি এই লুপ ব্যবহার করে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে নামতে পারবে। তবে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার কোন ব্যবস্থা নেই। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কারণে রাজারবাগ, মালিবাগ, মৌচাকসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ফ্লাইওভারের কাজও ব্যাহত হওয়ার কথা বলছেন তারা। তবে সমস্যা যতই হোক জনভোগান্তি নিরসনে দ্রুত কাজ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। দেশের দীর্ঘতম এ ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। এর মোট তিনটি অংশ। একটি তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রমনা পর্যন্ত, অন্যটি বাংলামোটর থেকে মৌচাক পর্যন্ত। আরেকটি হচ্ছে মালিবাগের আবুল হোটেল থেকে মৌচাক হয়ে রাজারবাগ-শান্তিনগর পর্যন্ত। গত বছরের ৩০ মার্চ ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত ২ দশমিক ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম অংশটির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকি অংশ এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এ উড়াল সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যা ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে কয়েক দফা সময় বৃদ্ধি হয়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা গত বছর জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগে পুরো ফ্লাইওভার খুলে দেয়া সম্ভব হবে না। শেষ পর্যন্ত দ্রুত কাজ হওয়ার কারণে উদ্বোধনের সময় আরও এগিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ প্রতিষ্ঠান সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি, চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বর্তমানে প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশই করছে তমা। প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর থেকেই নক্সার ত্রুটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। ২০১১ সালে একনেকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রথম ধাপে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে এ খরচ নির্ধারণ করা হয় ৭৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তবে এখন প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় এফডিসি গেট থেকে সোনারগাঁও পর্যন্ত লুপটি বর্ধিত করা হয়। আগের নক্সায় যা ছিল এফডিসি গেট পর্যন্ত। অর্থাৎ রেল গেটের আগেই লুপটি নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জনস্বার্থে এই লুপটি রেল গেট অতিক্রম করে নামানো হলে সাধারণ মানুষের উপকার হবে। আগের নক্সা অনুযায়ী লুপ থেকে গাড়ি নামার পরই রেল লাইনের লেভেল ক্রসিংয়ের মুখে পড়তে হবে। এতে যানজটের ভোগান্তি বাড়বে বলেও বিভিন্ন সংগঠনসহ সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লুপটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। পুরনো নির্মাণকাজ ভেঙ্গে নতুন করে লুপটি বর্ধিত করা হয়। এলজিইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এই লুপটি উদ্বোধনের জন্য একেবারেই প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সময় দিলেই এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। চলতি মাসের মধ্যেই এই লুপটি উদ্বোধন করার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। সোমবার প্রকল্পের মালিবাগ, রাজারবাগ, মৌচাকসহ মালিবাগ রেল গেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উড়াল সড়কের কাজ অব্যাহত রয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এখন রাত-দিন কাজ চলছে। রফিক নামের এক নির্মাণশ্রমিক জানান, আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার। সে অনুযায়ী এখন রাত-দিনের কর্মব্যস্ততা চলছে। আমরা সাধ্যমতো কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। শ্রমিকরা জানান, রাজারবাগ, মালিবাগ, মৌচাক ও মালিবাগ রেল গেট এলাকার কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। এখন গার্ডার বসানো ও সø্যাবসহ ঢালাইয়ের কাজ বাকি। পিলার নির্মাণকাজও বেশিরভাগই শেষ। এছাড়া নিউ ইস্কাটন, মৌচাকসহ প্রকল্পের অন্যান্য অংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। অপর শ্রমিক দিদার জানালেন, মালিবাগ মোড়, রাজারবাগ সড়কে পানি জমে থাকার কারণে কাজ করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। বেশি পানি জমে গেলে কাজের প্রয়োজনে সেচ দেয়ার কথাও জানান তিনি। বলেন, ড্রেন নির্মাণের কারণে পানি রাস্তায় আসছে। তবে প্রকল্পের কাজের জন্য মৌচাক থেকে মালিবাগ রেল গেটের একাংশের সড়ক ১৫ দিনের বেশি বন্ধ থাকার কথাও শ্রমিকরা জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মগবাজার-মৌচাক প্রকল্পের নতুন পরিচালক সুশান্ত কুমার বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে উদ্বোধন করা হবে। এরপর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে ফ্লাইওভারটি। তিনি বলেন, চলতি মাসের মধ্যে এফডিসি গেট থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত প্রস্তুত হওয়া লুপটিও খুলে দেয়া হবে। জনভোগান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি সর্বাধিক গুরত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এখন ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য কোন ভোগান্তি হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প এলাকার বেশকিছু স্থানে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ড্রেনের পানি রাস্তায় এসে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমাদের কাজও অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, পানি জমে থাকার কারণে অনেক স্থানে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। আবার যেসব স্থানে রাস্তা নষ্ট হয়ে আছে সেগুলো আমরা মেরামত করতে পারছি না। এসব সমস্যার জন্য সাধারণ মানুষ আমাদের দোষারোপ করছে। কিন্তু আমরা তো কোনভাবেই দায়ী নই। নানা প্রতিকূলতা থাকলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করি, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।
×