ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেনজির আবরার

তারুণ্যের আগ্রহের বিষয় ‘সিএসই’

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৪ এপ্রিল ২০১৭

তারুণ্যের আগ্রহের বিষয় ‘সিএসই’

আপনি কি জানেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান তরুণ রুশু কাজি ফেসবুকের প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন? হয়ত তথ্যটি পিলে চমকে দিল, তবে শুনুন চাইলে আপনার পক্ষেও সম্ভব গুগল, ফেসবুকের চাকরি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্যারিয়ার নিয়ে সবারই কমবেশি ভাবনা থাকে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শেষ দশকে যে সাবজেক্টটি তারুণ্যের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে, সেটি কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই)। ১৯৮৭ সালে বুয়েটে এবং ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠার পর এদেশে একবিংশ শতাব্দীতে সিএসই পড়াশোনার বিষয় হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়, এরপর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সেভাবে প্রসার না পাওয়াতে বিষয়টির প্রসার ঘটেনি তখন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে বিষয়টির কদর আবারও, আমরা এখন দেখব কি কারণে তরুণ-তরুণীরা বিষয়টিকে বেছে নিচ্ছে। যদি হোন ক্রিয়েটিভ- ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের যে কয়েকটি বিষয় আছে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ সাবজেক্ট বলা হয়ে থাকে সিএসই কে। কারও কারও মতে, সিএসই পড়ার ক্ষেত্রে বড় বিষয় হলো আপনি নিজে কেমন ক্রিয়েটিভ? হ্যাঁ, এটা কোন মুখস্থ বিদ্যার বিষয় না। আপনার যদি চিন্তাশক্তি, কল্পনা করার ক্ষমতা, কঠোর পরিশ্রম করার মনোবাসনা, লেগে থাকার তীব্র ইচ্ছা, কম্পিটারের সামনে বিরক্ত না হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার ধৈর্যশক্তি, নতুন কিছু বানানোর স্বপ্ন থাকে, তাহলে ৫০% কাজ হয়েই গেছে। সিএসইর ক্ষেত্রসমূহ- আপনি যদি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেন তবে আপনার সামনে এমন অনেক পথ পাবেন যেখান থেকে খুব সহজে নিজের পছন্দমতো একটি পথ বেছে নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। আমাদের দেশের বেকার সমস্যা প্রকট, যথাযথ ডিগ্রী ও যোগ্যতা থাকার পরও অনেকেই চাকরি পান না। আপনি একজন কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট হিসেবে খুব সহজেই অনলাইন ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এজন্য আপনার দরকার হবে একটি নির্দিষ্ট কাজের দক্ষতা। আপনি একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। দেখবেন আপনার বন্ধুদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে কাজ করছে এবং সেখান থেকে মোটামুটি ভাল টাকা আয় করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এটি বেশ ভাল একটি পেশা। এবং এখান থেকে মোটামুটি ভাল আয় করতে পারবেন। অনেকে আবার নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবেও গড়ে তুলতে পারেন। যুগ যেহেতু এখন তথ্যপ্রযুক্তির, তাই তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক ধরনের নতুন নতুন বিজনেস শুরু“করা যেতে পারে। যেমন ধরুন, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরপরই কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা সফটওয়্যার ফার্ম গড়ে তুলতে পারেন। চাকরির সুযোগ যদি আমরা বর্তমান ক্যারিয়ার মার্কেট ও এর ট্রেন্ড বিবেচনায় নেই, তবে দেখব অন্তত আগামী আরও ১৫-২০ বছর কম্পিউটার ক্যারিয়ারের রমরমা অবস্থা বিরাজ করবে। এটা যতটা আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রযোজ্য ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য। বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ কম্পিউটার সায়েন্সই মনে হয় একমাত্র সাবজেক্ট, যেটাতে পড়ে আপনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই সরাসরি গুগল বা ফেসবুকের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করতে পারেন। ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশী ছাত্র এসব নামকরা প্রতিষ্ঠানে নিজেরদের আসন করে নিয়েছেন। তরুণদের আগ্রহ - দেশের অভিভাবকদের বিষয়ভিত্তিক চিন্তাভাবনার জগতে এক ধরনের আশীর্বাদ হয়ে এসেছে সিএসই, তরুণরা সিএসই’র প্রতি ঝুকছেন যে কারণগুলোতে সেগুলো জানতে কথা হলো বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি (বেসিস) স্টুডেন্ট ফোরামের স্টামফোর্ড ইউনিটের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর অনিকের সঙ্গে। অনিক জানালেন, ‘তরুণরা সিএসইতে পড়লে ক্যারিয়ার নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে, বিষয়টি আপনাকে বেকার রাখবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই আছে তারা পর্যাপ্ত সকল সুবিধা দিতে চেষ্টা করছে, আর মূল যে বিষয়টি আমার চোখে পড়ে সেটি হলো তরুণরা স্বাধীন পেশা চায়, যেটা শুধুমাত্র সিএসই দিতে পারে।’ ঠিক এ রকমই আরেক বক্তব্য আহসানউল্লাহ্ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা পাভেলের। তার চোখে মুখে স্বপ্নও অনেক। তার কাছে প্রশ্ন ছিলÑ পেশা হিসেবে তিনি কেন সিএসই বাছাই করলেন? তিনি বলেনÑ কম্পিউটার সায়েন্সের মাধ্যমে আমি আমার ক্রিয়েটিভিটি মানুষকে দেখাতে পারব। দিন যতই যাচ্ছে, মানুষ ততটাই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আগামীর পৃথিবীটা প্রযুক্তিনির্ভর। আর সেই জায়গা থেকেই এই পেশার প্রতি আগ্রহ আমার। সিএসই এর শিক্ষার্থী এবং পাশাপাশি আইটিনির্ভর প্রতিষ্ঠান ব্রেটবাইটের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা সজিব খান জানালেন, ‘আমি সিএসই ৩য় বর্ষে পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের সমসাময়িক একটি দলকে এক করে কাজ করছি ব্রেকবাইটের হয়ে, আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করি, এবং আমাদের কাজের চাহিদাও অনেক, আর কম্পিউটার সায়েন্সের ইচ্ছেটাও বেশ আগের। আমি এটাকে বেশ উপভোগ করি। এটা যে কেউই বলতে পারবে যে, এই পেশার বর্তমান এবং ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল, কারণ এখনই বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাব পাচ্ছি।’ তবে হ্যাঁ, শুধুই সিএসই নয়, কম্পিউটারনির্ভর যাবতীয় প্রায় সকল পেশাই এখন বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনাময় এবং খুব প্রয়োজনীয়। একে ঘিরে বিভিন্নজন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও বেশ ভাল অবস্থানে আছেন অনেকেই। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বপ্নসারথী বিষয় ‘সিএসই’। তরুণপ্রজন্ম আরও বেশি এ বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদ এখন সময়ের দাবি...
×