ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফের পাইলটের ভুলে বিকল হলো আরেকটি উড়োজাহাজ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ এপ্রিল ২০১৭

ফের পাইলটের ভুলে বিকল হলো আরেকটি উড়োজাহাজ

আজাদ সুলায়মান ॥ আবারও পাইলটের অদক্ষতা ও ভুলে বিমানের আরেকটি উড়োজাহাজ বিকল হয়ে পড়েছে। নতুন কেনা বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এয়ারক্রাফটটি রবিবার রাতে দুর্ঘটনার শিকার হবার পর হ্যাঙ্গারে রাখা হয়েছে। বিমানের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাইলটের টেক অফ পারফরমেন্সে ভুল থাকায় টেক অফের সময় উড়োজাহাজটির টেলের (লেজে) সঙ্গে রানওয়েতে বড় ধরনের ঘর্ষণ লাগে। সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় বড় ধরনের ঘর্ষণে এয়ারক্রাফট মাঝ বরাবর ভেঙ্গে যেতে পারে। তবে টেল স্কিড (স্প্রিং) থাকায় বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। প্রকৌশল বিভাগ বলছে, তারা ইতোমধ্যে উড়োজাহাজটির মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছেন। বোয়িংয়ের চেক লিস্ট অনুযায়ী ১৮ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তারা উড়োজাহাজটি অপারেশনের জন্য তৈরি করেছেন। বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, রবিবার রাত ৭.১৫ মিনিটে বিজি-০২৭ ফ্লাইটি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে আবুধাবী যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়। পাইলট টেক অফ করার পর বুঝতে পারেন জাহাজটির লেজের সঙ্গে রানওয়ের মাটির ঘর্ষণ লেগেছে। এরপর পাইলট বিমানবন্দরের টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্লাইটটি ফের অবতরণের ক্লিয়ারেন্স চান। এবং রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে আবারও শাহজালালে অবতরণ করেন। এরপর ওই ফ্লাইটের যাত্রীদের অপর একটি ফ্লাইটে আবুধাবী পাঠানো হয়। এদিকে অভিযোগ আছে টাওয়ারের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরও পাইলট ঝুঁকিপূর্ণভাবে আরও আড়াই ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর ঘটনা বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ঘটনায় পাইলট ও ফাস্ট অফিসারের অজ্ঞতা প্রমাণিত হয়েছে। তাদের মতে এ ধরনের ঘটনায় আকাশে চলন্ত অবস্থায় এয়ারক্রাফটের মাঝ বরাবর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা ছিল। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারত যাত্রী ও বিমানের ক্রুরা। নিয়মানুয়ায়ী এক্ষেত্রে পাইলটের উচিত ছিল দ্রত বিমানবন্দরের আশপাশে কোথাও অতিরিক্ত জ্বালানি তেল ফেলে দিয়ে জরুরী অবতরণ করা। আড়াই ঘণ্টা ফুয়েল বার্ন করে তারপর অবতরণ করা তাদের কোনভাবেই ঠিক হয়নি। বিমানের নতুন কেনা এই বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে ফিউল ডাম্পিং সিস্টেম ছিল। পাইলট ইচ্ছে করলে মুহূর্তেই সব তেল ডাম্পিং করতে পারত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পাইলট তা অনুসরণ না করে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ডাম্পিং করার দরুন একদিকে যাত্রীদের জানমাল যেমন চরম ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়েছেন, তেমনি সিডিউলেরও ক্ষতি করেছেন। পাইলটের অদক্ষতার দরুন চার ঘণ্টা বিলম্বে আরেকটি উড়োজাহাজ দিয়ে সেই ফ্লাইটের যাত্রীদের রাত পৌনে দশটায় দুবাই পাঠানো হয়। এ ঘটনায় বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি সংশ্লিষ্ট পাইলট ও কো পাইলটের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেননি। নিয়মানুযায়ী এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার পাইলট ও কো পাইলটকে তাৎক্ষণিক গ্রাউন্ডেট করে তাদের রক্ত পরীক্ষা ও মানসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর। অথচ কিছুদিন আগেই শুধু রুট চেকের সময় ফারিয়াল নামের একজন ফার্স্ট অফিসার ক্যাপ্টেন জোয়ারদারের মনমতো আচরণ না করায় তাকে তিন তিনবার মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সে ঘটনায় মিডিয়ায় প্রকাশের পর তোলপাড় দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ফারিয়ালের রুট চেক ক্লিয়ার করা হয়। মানসিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিমানে এ ধরনের বৈষম্যের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।
×