ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ ড্র

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জয়বঞ্চিত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২ এপ্রিল ২০১৭

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জয়বঞ্চিত বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে হেরে গেল বাংলাদেশ। ৭০ রানে হারে মাশরাফিবাহিনী। কুশল মেন্ডিসের ৫৪, থিসারা পেরেরার ৫২ রানে শ্রীলঙ্কার করা ২৮০ রান অতিক্রম করতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের ৫৪ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৫১ রানের পরও ২১০ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাতে করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ ড্র হয়। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৯০ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। তাতে সিরিজের ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ তখনও এগিয়েই থাকে। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে জিতলে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজে হারাতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু উল্টো হেরে গেল। তাতে করে সিরিজ জয় হলো না বাংলাদেশের। টেস্ট সিরিজের উল্টো চিত্র হলো ওয়ানডে সিরিজে। টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ জিতে টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করে। এবার ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকে। কিন্তু শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা জিতে সিরিজ ১-১ ড্র করে। সামনে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজ রয়েছে। ৪ ও ৬ এপ্রিল কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। এখন থেকেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, তাহলে কি টি২০ সিরিজও ১-১ ড্র’ই হবে? টি২০ সিরিজে কি হবে তা সময়ই বলবে। তবে এখন ওয়ানডে সিরিজ নিয়েই চলছে তুমুল আলোচনা। বাংলাদেশ যে তৃতীয় ওয়ানডেতে হারল, ২৮০ রানই করতে পারল না; তাহলে কি দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও হারত? শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩১১ রান করেছিল। বৃষ্টিতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। যদি তা না হত, তাহলে কি শ্রীলঙ্কাই জিতত? তাই যদি হত, তাহলে তো সিরিজই জিতে নিত শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তৃতীয় ওয়ানডেতে যে রূপ দেখিয়েছে তা যে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও দেখাত না; তা কে বলতে পারত। শ্রীলঙ্কা ২৮০ রান করার পর আশা ছিল বাংলাদেশ জিতবে। কারণ কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে গড়পড়তা দলীয় স্কোরই হচ্ছে ২৭০-২৮০। তাই প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যে নৈপুণ্যের রূপ দেখিয়েছেন তাতে এই রান তোলা কষ্টসাধ্য হওয়ার কথা না। কিন্তু শুরুতেই যে ধাক্কা খেল দল, ১১ রানের মধ্যেই তামিম ইকবাল, সাব্বির রহমান রুম্মন ও মুশফিকুর রহীমকে হারিয়ে বসল; তাতে ম্যাচ জেতা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন হয়ে পড়ে। তাও স্বপ্ন থাকে। উইকেটে যে তখনও সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ থাকেন। মাশরাফিও তো মাঝে মাঝে জ্বলে ওঠেন। একটা বড় জুটিই তো জেতার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু শুরুতেই ৩ উইকেট পতনের পর সৌম্য ও সাকিব মিলে যে আশা দেখান, হঠাৎ করেই সেই আশার আলো নিভে যায়। সৌম্য ও সাকিব মিলে যেই চতুর্থ উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়েন, বিপদ কাঁধে এসে পড়ে। ৮৮ রানে সৌম্য (৩৮) সাজঘরে ফেরেন। এরপর ৩০ রানের মধ্যে যখন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও ইনিংসের প্রথম হাফসেঞ্চুরিয়ান সাকিবও (৫৪) আউট হয়ে গেলে সব আশা শেষ হয়ে যায়। স্বপ্নও তখন কল্পনার রাজ্যে বসবাস করতে শুরু করে দেয়। এরপর মাহমুদুল্লাহ, মিরাজ, মাশরাফিরা মিলে আর দলকে কতদূর নিতে পারতেন। হারের ব্যবধানটাই কমাতে পারতেন। সেই কাজটিই করেছেন তারা। মাহমুদুল্লাহ ব্যর্থ হন। মাশরাফিও খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। তবে মিরাজ হাল ধরেন। শেষে গিয়ে ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসও খেলেন। তাসকিনকে নিয়ে নবম উইকেটে ৫৪ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু সবারই জানা ছিল, হঠাৎ করেই নিভে যাবে সব। ২০৯ রানে গিয়ে যেই মিরাজ আউট হন আর এক রান হতেই তাসকিনও সাজঘরে ফেরেন। বাংলাদেশ গুটিয়ে যায়। ম্যাচেও হেরে যায়। বাংলাদেশ বোলাররা সেই তুলনায় নির্লিপ্তই ছিলেন। বাংলাদেশ দলের যেখানে পাঁচ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেন। এরমধ্যে তিনটি ইনিংস ৩০ রানের বেশি। সেখানে শ্রীলঙ্কার পাঁচ ব্যাটসম্যান ৩০ রানের বেশি করেন। শুরুতে কুশল মেন্ডিসের ৫৪ রানের পর শেষে গিয়ে থিসারা পেরেরা যে ৫২ রানের ইনিংসটি খেলেন, তাই সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়। মাঝে গুনাথিলাকা (৩৪), থারাঙ্গা (৩৫), গুনারতেœরা (৩৪) মিলে স্কোরবোর্ডটাকে মজবুত করার চেষ্টা করেন। তাতেই শ্রীলঙ্কা ২৮০ রানে পৌঁছে যায়। এ রানই বাংলাদেশের হারের জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় ওয়ানডেতে হারও হয়।
×