ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেনা সদস্যরা চলে আসার পর আতিয়া মহল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩০ মার্চ ২০১৭

সেনা সদস্যরা চলে আসার পর আতিয়া মহল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ শিববাড়ী জঙ্গী আস্তানায় নিহত মহিলা মর্জিনার লাশ শনাক্ত করতে পারেনি তার বাবা আবদুর রহমান। বান্দরবান থেকে বুধবার সকালে মর্জিনার বাবা লাশ শনাক্ত করতে সিলেট আসেন। পুলিশ প্রহরায় তাকে মর্জিনার লাশ দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়। আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশ দেখে নিশ্চিত হতে না পারায় মর্জিনা আক্তারের বাবা আবদুর রহমানের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খায়রুল ফজল জানান ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যাবে মর্জিনা আক্তারের প্রকৃত পরিচয়। সে লক্ষ্যে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। শিববাড়ী জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে মর্জিনাসহ ৪ জঙ্গীর মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে অপারেশন টোয়াইলাইট পরিচালনাকারী সেনাবাহিনী টিম মর্জিনা ও অপর ১ পুরুষ জঙ্গীর মৃতদেহ সোমবার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। অপর ২ জঙ্গীর লাশ বুধবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আতিয়া মহলের সেই আস্তানায় ছিল। কর্মকর্তা খায়রুল ফজল বলেন, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী পুলিশের বিশেষ দলটি ঢাকা থেকে সিলেট এসে কাজ শুরু করলেই লাশ দুটি অপসারণ করা হবে। মর্জিনার ভোটার আইডি কার্ডে তার নাম হচ্ছে মর্জিনা আক্তার, পিতা আবদুর রহমান, মাতা আমেনা আক্তার, জন্ম সাল ১ মার্চ ১৯৯৭। মর্জিনা আক্তারের ভোটার আইডি কার্ডটি ২১-৬-১৪ সালে ইস্যু করা হয়েছে। কাডের্র ঠিকানা হচ্ছে রাজঘাট, বাইশারী নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান। এই মর্জিনা আক্তার জঙ্গী মনজিয়ারা কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো বুধবার শিববাড়ী এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। মঙ্গলবার সেনাবাহিনী অপারেশন টোয়াইলাইট সম্পন্ন করে জঙ্গী আস্তানা শিববাড়ীর আতিয়া মহল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। চলে যাওয়ার পর পুলিশ সেখানে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখনও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। বাসা-বাড়ির বন্দীদশা থেকে এলাকাবাসী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেননি। জঙ্গী আস্তানা আতিয়া মহলে বুধবার বিকেল পর্যন্ত দুই জঙ্গীর লাশ পড়ে থাকার খবর পাওয়া যায়। এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বুধবার ২টার দিকে গ্রামের গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়। আতিয়া ভবন নামের ৫তলা এই বাড়িটি এখন ক্ষতবিক্ষত। কেবল কাঠামোটাই দাঁড়িয়ে আছে, পুরো ভবনের দেয়ালজুড়ে গুলি-বোমার চিহ্ন। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ভবনের নিচের তলার বেশিরভাগ দেয়াল। পুলিশের ভাষ্যমতে, এই ভবনে বিপুল গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক থাকায় ঝুঁকির কথা চিন্তা করে সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হচ্ছে। গত শনিবার থেকে জঙ্গী দমনে এই ভবনটিতে অপারেশনে নামে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। প্রথমে ভবনের বিভিন্ন তলার দেয়াল ও কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে ভবনে আটকে পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে বাইরে নিয়ে আসে সেনাবাহিনী। এরপর টানা চারদিন ধরে চলতে থাকে গুলি-বোমা বিস্ফোরণ। ভবনের ভেতরে গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়তে ভবনটির বিভিন্ন দেয়াল ভেঙ্গে ফেলা হয়। চারদিনের গুলি বোমায় কয়েকবার আগুন ধরতে ও দেখা যায় ওই ভবনে। বুধবার আতিয়া ভবনের পেছনের দিকে ঘিরে দেখা যায়, নিচতলার পুরো দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। পাশের জমিতে পরে আছে ইট-সুড়কি। ওপরের দিকও ভাঙ্গাচোরা। আগুনে কালো হয়ে আছে অনেক ছাদ। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘিরে রেখেছেন পুরো বাড়িটি।
×