ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাঙ্কভর্তি অর্থে বিপাকে ওরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৮ মার্চ ২০১৭

ট্রাঙ্কভর্তি অর্থে বিপাকে ওরা

বন্ধ ঘরের এক কোনায় ট্রাঙ্কটা প্রায় তিন বছর পড়ে ছিল। পুরু ধুলোর আস্তরণে ঢাকা পড়া। বহুদিন পর ঘরে ঢুকেই এটা-সেটা গোছগাছ করতে করতে ট্রাঙ্কের ডালা খুলতেই চোখ ছানাবড়া সূর্যের। ভিতরের নানা জিনিসপত্রের মধ্যে একটা বালিশ রাখা। ১৬ বছরের কিশোর সূর্যের মনে পড়ে গেল, মা বেঁচে থাকতে বালিশের কভারে নিয়মিত রুপী ঢুকিয়ে রাখতেন। সঙ্গে সঙ্গে বালিশের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেয় সে। দেখা যায়, তাতে রয়েছে রুপী। তবে সবই পুরনো নোট! মোট ৯৬ হাজার রুপী। মৃত মায়ের সারা জীবনের রোজগার। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তা রেখে গিয়েছিলেন সূর্যের মা পূজা বানজারা। তবে তা নিয়েই এখন বিপত্তিতে সূর্যরা। কারণ ওই সঞ্চয়ের গোটাটাই তো এখন বাতিলের খাতায়। মাত্র সাত বছরেই বাবা রাজু বানজারাকে হারিয়েছিল ভারতের রাজস্থানের কোটা জেলার ১৬ বছরের কিশোর সূর্য। বোন তখন মাত্র বছর দুয়েকের। তারপর থেকে মায়ের কাছেই থাকত তারা। আয়ার কাজ করে সন্তানদের বড় করে তুলছিলেন তাদের মা। কিন্তু ২০১৩ সালে মা মারা যান। অভিযোগ, মাকে খুন করে তারই ‘ঘনিষ্ঠ’ এক ব্যক্তি। সে ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। মায়ের মৃত্যুর পর সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত হোমেই ঠাঁই হয় দুই ভাইবোনের। হোমের ২৭০ জন বাসিন্দার সঙ্গেই বেড়ে উঠছিল তারা। এক রুটিন প্রশ্নোত্তর পর্বে হোমের কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, ওই দুই কিশোর-কিশোরীর দুটি বাড়ি রয়েছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে কোটার আর কে পুরম এলাকায় একটি বাড়িতে যান তারা। সঙ্গে ছিল ওই কিশোর-কিশোরী। প্রতিবেশীরা জানান, মায়ের মৃত্যুর পর সে বাড়ির প্রায় সব জিনিসপত্র ফেলে দেয়া হয়। তবে ওই কিশোরের দাবি, আসলে প্রতিবেশীরাই তাদের সব জিনিসপত্র নিয়ে নিয়েছে। কিশোরটি জানিয়েছে, আশপাশের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে তাদের টেলিভিশন ও বাসনপত্র। এরপর পুলিশকে নিয়ে তারা যায় কোটা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সরওয়াড়াতে। মায়ের দু’কামরার বাড়িতে। গত ১১ মার্চ সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় কিছু সোনা-রুপার গয়না। ঘরের জিনিসপত্র নাডাচাড়া করতেই সামনে আসে ওই ট্রাঙ্কটি। তালাচাবি ছাড়াই ঘরের কোণায় পড়ে ছিল সেটি। ট্রাঙ্ক খুলতেই একটি বালিশের মধ্যে থরে থরে সাজানো ৫০০ ও ১০০০ রুপীর পুরনো নোট। গত ৮ নবেম্বরের পর যা বাতিল ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রিজার্ভ ব্যাংকে বাতিল নোট জমা দেয়ার শেষ তারিখ ধার্য করা হয় ৩১ মার্চ। সেই মতো শীর্ষ ব্যাংকে ওই নোট বদল করতে গিয়েও বিপত্তি। গত ২২ মার্চ রিজার্ভ ব্যাংক সে নোট জমা নিতে অস্বীকার করায় রীতিমতো বিপাকে পড়েছে ওই ওই কিশোর-কিশোরী। এর পরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছে ওই কিশোর। হিন্দিতে লেখা সে চিঠি অনলাইনে পোস্টও করেছে সে। কোটা শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান হরিশ গুরুানি জানিয়েছেন, ওই কিশোরের লেখা চিঠি পৌঁছে গেছে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। -এনডিটিভি
×