ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ৩০ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৯ মার্চ ২০১৭

এবার ৩০ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে

ফিরোজ মান্না ॥ এবার ৩০ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে ‘উইমেন এ্যান্ড আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ’ (ওয়াইফাই) প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ দেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। প্রশিক্ষণ পেয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে তারা দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখতে পারবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প গুণগত প্রশিক্ষণে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষ মানব সম্পদের কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছে প্রযুক্তি বিভাগ। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, উইমেন এ্যান্ড আইসিটি ফ্রন্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ’র (ওয়াইফাই) প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবনের সব ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০ হাজার নারীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উচ্চতর পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী ৩ বছরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২ লাখ ৬০ হাজার নারীকে টেকসই নারী উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে ‘মোবাইল ট্রেনিং বাস’ চালু করা হয়েছে। ‘ন্যাশনাল হাই-স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্টের’ আওতায় নারীদের জন্য প্রোগ্রামিং কনটেস্ট চালু করা হয়। নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে এসব কার্যক্রম আরও বেশি ফলপ্রসূ ও টেকসই হবে। ফলে নারীরা সমাজ উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও জাতীয় অর্থনীতি কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে পারবে। বর্তমানে নারীরা ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে এগিয়ে এসেছে। তারা তাদের মেধার সাক্ষরও রাখছে। এবার ওয়াইফাই কার্যক্রমের মাধ্যমে এ দেশের উদ্যমী নারীরা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সরকারের সহযোগিতায় যুক্ত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, দেশ পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটার দিলেই দক্ষ জনবল সৃষ্টি হবে না। এজন্য দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন হবে। প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন হবে। সরকার বিপুল সংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তি তৈরি করতে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। নতুন করে আরও কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে এক লাখ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে চাই। ইতোমধ্যে ৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে ফার্স্ট ট্রাক ফিউচার লিডারের (এফটিএফএল) প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার জনকে টপআপ আইটি এবং ২০ হাজার জনকে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দেশে ১৩টি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলোতে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ প্রয়োজন হবে। সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। এই খাত থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সময়ে ২০ লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরি করা হবে। এই ২০ লাখ পেশাজীবী জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এজন্য সারাদেশে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকেও যেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা কাজ করতে পারেন এমন অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। আমরা ইতোমধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতে দেশের সকল ইউনিয়ন কানেক্টিভিটির আওতায় চলে আসবে। এর বাইরে বেসরকারী উদ্যোগেও আইসিটি উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। আমরা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আইসিটি বিষয়ও বাধ্যতামূলক করেছি। এর ফলে একজন শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে বের হবে। ইনফো-৩ প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের দফতর প্রতিষ্ঠানে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ প্রদান, ১৫ হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ডিসি ও ইউএনও অফিসে কম্পিউটার ল্যাব, ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেন্টার, ১০ হাজার গ্রোথ সেন্টারে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স ও রেগুলেটরি ল্যাব, সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব ও ভিএলএস ল্যাব স্থাপনসহ গ্রাম পর্যায়ে ই-কমার্স চালু করা হবে। প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে একটি করে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স প্রতিষ্ঠা করা হলে গ্রামের মানুষ নিজ বাড়িতে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্য, নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এতে গ্রামীণ জনপদের মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল বৈষম্য রোধ সম্ভব হবে। ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও চীনের আর্থিক সহযোগিতায় এস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি নামে নতুন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কালিয়াকৈর, যশোর, সিলেট, রাজশাহী, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে আইটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব পার্কে ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণের কাজ চলছে। আইটি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশী আইসিটি শিল্পের প্রসারে এসব পার্ক ও সেন্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
×