ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আশান্বিত হতেই পারে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৯ মার্চ ২০১৭

আশান্বিত হতেই পারে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শততম টেস্টে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। উৎসবের রঙে রঙিন হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। এজন্য দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত শ্রীলঙ্কার হাতে থাকা দুই উইকেট দ্রুত ফেলতে হবে। এরপর টার্গেট অতিক্রম করতে হবে। যে টার্গেট এখনই ১৪০ রানের দাঁড় হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কার হাতে থাকা দুই উইকেট যত দ্রুত নিতে পারবে বাংলাদেশ, টার্গেট তত কম হবে। তাতে জয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। যেভাবে মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান চতুর্থদিন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, তা আজ কলম্বো টেস্টের পঞ্চম ও শেষদিনের শুরুতেই দেখাতে পারলেই হয়ে যায়। পারবে বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে? শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করার পর বাংলাদেশও সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরিতে জবাবটা ভালই দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে ৪৬৭ রান করেছে। এরপর শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে চতুর্থদিন পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৬৮ রান করেছে। তাতে বাংলাদেশ থেকে ১৩৯ রানে এগিয়ে রয়েছে। এক দিমুথ করুনারতেœই হাল ধরেছেন। এ ওপেনার ১২৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। তাতেই এতদূর এগিয়ে যেতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। না হলে ৩ উইকেট করে নেয়া মুস্তাফিজুর রহমানের ‘কাটার’ আর সাকিব আল হাসানের স্পিন ‘বিষে’ শ্রীলঙ্কা এতক্ষণে অলআউটও হয়ে যেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। এখন উইকেটে ব্যাট করছেন লেজের দুই ব্যাটসম্যান দিলরুয়ান পেরেরা (২৬*) ও সুরঙ্গ লাকমাল (১৬*)। ব্যাট করার অপেক্ষায় আছেন লাকশান সান্দাকান। বাংলাদেশকে এখন যেভাবে হোক ম্যাচ জিততে হলে শ্রীলঙ্কার দুটি উইকেট দ্রুত তুলে নিতে হবে। সেটি আবার সকালের সেশনের একঘণ্টার মধ্যেই নিতে হবে। বড় কোন তারকা ব্যাটসম্যান এখন শ্রীলঙ্কার হাতে নেই। বোলাররাই এখন ব্যাটিংয়ে আছেন। তাতে করে দ্রুত উইকেট তুলে নেয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। একঘণ্টায় ১৫ ওভারও খেলা হতে পারে। তাতে রান আসতে পারে ৫০-৬০। তবে সেটি কোন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান থাকলে সম্ভব। কিন্তু সকালের সেশনে যে কোন দলের জন্যই ব্যাটিং করা কঠিন। আর যেহেতু এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার টার্গেটই থাকবে যত বেশি ব্যাটিং করা যায়। তাতে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতেই খেলবে ব্যাটসম্যানরা। যদি বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক বোলিং করতে পারে, তাহলে এই একঘণ্টাতে দুটি উইকেটও পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শ্রীলঙ্কার নিচের সারির ব্যাটসম্যানরা উইকেটে থাকায় রান কম হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। যদিও ৫০-৬০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হয়, সেই সঙ্গে দুই উইকেটও হারায় শ্রীলঙ্কা, টার্গেট দাঁড় হবে ১৯০-এর মতো। তাতে খানিক বিপত্তি থাকলেও প্রথম ইনিংসে যেভাবে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ, সেভাবে করতে পারলেই জয় সম্ভব। হাতে তখনও থাকবে দুই সেশন পুরো ও এক সেশনের অর্ধেকটা। আর যদি কোনভাবে এরআগেই অলআউট করে দেয়া যায়, তাহলে টার্গেট আরও কম হবে। তাতে জয়ের সম্ভাবনাও আরও বেড়ে যাবে। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কাকে ভালভাবেই চাপে ফেলা গেছে। তৃতীয়দিনে দুই ওপেনার করুনারতেœ ও উপুল থারাঙ্গা মিলে ৫৪ রান যোগ করেছিলেন। চতুর্থদিনে এসে আর ৩ রান যোগ হতেই জুটিটি ভেঙ্গে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে করুনারতেœ ও কুশল মেন্ডিস মিলে প্রতিরোধ গড়ে দলকে ১৪৩ রানে নিয়ে যান। এমন সময়ে মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। শুরু হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ছন্নছাড়া ব্যাটিং। মুস্তাফিজ তার ‘কাটারে’ একের পর এক ব্যাটসম্যানকে বিদ্ধ করতে থাকেন। সাকিব তার ঘূর্ণিতে কাবু করতে থাকেন। দেখতে দেখতে ১৯০ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। কিন্তু একজনই দলকে টেনে নিতে থাকেন। তিনি করুনারতেœ। শেষ পর্যন্ত তাকেও ২১৭ রানের সময় সাকিব আউট করে দেন। তখন যে উৎসব করেন ক্রিকেটাররা, যেন জিতেই গেছেন। করুনারতেœ আউটের পর লেজের ব্যাটসম্যানরা যেন একটু প্রতিরোধ গড়ার ইঙ্গিত দেন। হেরাথ তা করতে পারেননি। তবে নবম উইকেটে গিয়ে পেরেরা ও লাকমাল মিলে ৩০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এ জুটিতেই আসলে ভুগছে বাংলাদেশ। সারাদিন করুনারতেœকে আউট করতে ভুগেছে। শেষবেলায় করুনারতেœ আউটে মনে হয়েছে দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংস। কিন্তু পেরেরা ও লাকমাল মিলে দিনটিই শেষ করে দেন। এখন বাংলাদেশকে জিততে হলে দ্রুত ২ উইকেট তুলে নিতে হবে। এরপর সাবলীলভাবে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করতে হবে। তা করতে পারলেই জয় সম্ভব হবে। এ টেস্টের আগে ৯৯ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ৮টি টেস্টে জিতেছে। দুটি টেস্টে টার্গেট অতিক্রম করে জিতেছে। একটি ২০১৪ সালে, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। ১০১ রানের টার্গেট অতিক্রম করেছে। আরেকবার ২০০৯ সালে, গ্রেনাডায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২১৫ রানের টার্গেট অতিক্রম করে জিতেছে। আর কোন ম্যাচে টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। শঙ্কাও যে নেই। তা বলা যাবে না। ১৫০ রানের নিচে কিংবা ১৪০ রানের নিচে বহুবার অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশ যে টেস্টে সর্বনিম্ন ৬২ রানে অলআউট হয়েছিল, সেটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই, কলম্বোতে ২০০৭ সালে। এর বাইরে আরও তিনবার ১০০ রানের নিচে এবং একবার ১৫০ রানের নিচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ২০০ রানের নিচে তো বহুবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। তাই শঙ্কাও থাকছে। বিশেষ করে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ তো এমনিতেও দুর্বল ব্যাটিং করে। তবে এবার সুযোগ মিলেছে। আর সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলেই হলো। জয়ের স্বপ্ন যে দেখছে বাংলাদেশ। তা বাস্তবেও রূপ নেবে।
×