ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাইব্যুনাল নেই ১৮ জেলায়

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৮ মার্চ ২০১৭

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে

আরাফাত মুন্না ॥ সারাদেশে বিচারাধীন নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সব জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল না থাকায় মামলার জট ক্রমেই বাড়ছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে বিচার প্রার্থীদের। জট কমাতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আরও ৪১টি বৃদ্ধির বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের প্রস্তাব ঝুলে আছে দুই বছর। ফলে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলার জট লেগেই আছে। সূত্র জানায়, ৪৬ জেলায় ৫৪ ট্রাইব্যুনালে এক লাখ ৪১ হাজার ১৮৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালই নেই ১৮ জেলায়। এসব জেলায়ও এই আইনে দায়ের করা ১৪ হাজার ৮৯৫টি মামলা বিচারাধীন। এই ১৮ জেলায় জেলা জজ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচার করেন। সুপ্রীমকোর্টের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক লাখ ৫৬ হাজার ৮২টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এসবের মধ্যে ৪৬টি জেলার ৫৪টি ট্রাইব্যুনালে এক লাখ ৪১ হাজার ১৮৭টি ও ট্রাইব্যুনাল না থাকা ১৮টি জেলায় ১৪ হাজার ৮৯৫টি মামলা রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন ছিল এক লাখ ৫২ হাজার ৩৫টি মামলা। নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধ কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করে সরকার। বিশেষ এ আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচারের জন্য প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুযোগও রাখা আছে। আইনের বিধান অনুসারে সারাদেশে ৫৪টি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালে হাজার হাজার মামলা বিচরাধীন। এসব বিষয় বিবেচনা করে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন যেসব জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে তার মধ্যে মামলার জট বিবেচনায় ২২টি জেলায় নতুন করে আরও ২৯টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করে। এছাড়া যেসব জেলায় এই ট্রাইব্যুনাল নেই তার মধ্যে ১২ জেলায় ১২টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করে। সুপ্রীমকোর্টের প্রস্তাবপত্রে বলা হয়, বর্তমানে দেশের আদালতগুলোয় প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন। এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মামলার বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১৬শ’ বিচারক। বর্তমানে বিচারক ও মামলার অনুপাত ১:১৮৭৫। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমীক্ষা অনুযায়ী বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য বিচারক ও মামলার অনুপাত হওয়া উচিত ১:৮০০। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হওয়ায় এখানে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়। এসব মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা বেশি হয় এবং বিচার কার্যক্রম সম্পন্নে অধিক সময় প্রয়োজন হয়। সে বিবেচনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও মামলার অনুপাতের পার্থক্য আরও কম হওয়া উচিত। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, আইন অনুযায়ী এসব মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে মামলা শেষ করার কোন রেকর্ড নেই। হাজারো মামলা রয়েছে, যেগুলোর বিচারকাজ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে। তিনি বলেন, মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। আবার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই। সালমা আলী বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ অনুযায়ী আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে এ আইনের মামলার বিচারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেসব জেলায় বেশি জট ॥ চট্টগ্রামের তিনটি ট্রাইব্যুনালে ১২ হাজার ৮১৩টি, ঢাকার পাঁচটি ট্রাইব্যুনালে ১২ হাজার ১২৬টি, খুলনার একটি ট্রাইব্যুনালে পাঁচ হাজার ১৪৩টি ও মৌলভীবাজারের একটি ট্রাইব্যুনালে পাঁচ হাজার ২৬টি মামলা বিচারাধীন। আইনজ্ঞরা বলেন, ট্রাইব্যুনালে মামলার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আইন-নির্দিষ্ট সময়ে বিচার শেষ করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র দেরিতে জমা পড়ে। সাক্ষীর অভাবেও বিচার ঝুলে থাকছে। যেসব জেলায় ট্রাইব্যুনাল নেই ॥ রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নেই।
×