ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের শততম টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৫ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশের  শততম টেস্ট  শুরু আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আজ বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক দিগন্তের শুরু হবে। পি সারা ওভালে সকাল সাড়ে ১০টায় টস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ দলের টেস্ট খেলার সংখ্যা হবে ১০০! শততম এই টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আজ সিরিজ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামবে সফরকারী বাংলাদেশ। কারণ গলে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ২৫৯ রানে হেরে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে মুশফিকুর রহীমের দল। ভিনদেশে শততম টেস্ট হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) বিশেষ কিছু আয়োজন রাখছে। ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য অনেক আয়োজন থাকলেও ক্রিকেটারদের লড়তে হবে আরেকটি সিরিজ পরাজয় এড়াতে। প্রথম টেস্টে অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়ের একটি মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গল টেস্টকে নিয়েছিল মুশফিকরা। কিন্তু বাস্তবে সেটার প্রতিফলন মাঠে দেখা যায়নি। খেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ দলের পারফর্মেন্সে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ম্যাচের পাঁচদিনই স্বাগতিক লঙ্কানরা ছড়ি ঘুরিয়েছে সফরকারী দলের ওপর। আর এ কারণেই শততম টেস্ট খেলা হচ্ছে না মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। দীর্ঘদিন দলের অপরিহার্য ব্যাটসম্যান হিসেবে নিয়মিত খেললেও সাম্প্রতিক সময়ে টানা ব্যর্থতার জন্য পি সারা ওভালে দলের ১০০তম টেস্টে একাদশের বাইরে থাকছেন তিনি। এছাড়া ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ মুমিনুল হক সৌরভও চলে যেতে পারেন একাদশের বাইরে। সেক্ষেত্রে ইনজুরির পর ফিটনেস সমস্যায় থাকা ওপেনার ইমরুল কায়েস ঐতিহাসিক টেস্টে মাঠে থাকার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আজ ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে তিনি ব্যাট হাতে আগে নামবেন। আর গল টেস্টের উভয় ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকানো সৌম্য সরকার চলে যেতে পারেন ওয়ানডাউনে। মাহমুদুল্লাহর টানা ব্যর্থতায় তার চার নম্বর জায়গাটা আগের টেস্টেই নিয়েছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। সাব্বির রহমানেরও একাদশে ফেরা প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া বাকি জায়গাগুলো গল টেস্টের মতোই অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কিন্তু দলের চেহারাটা গত টেস্টেই বদলে গিয়েছিল, এবার আরও বদলাচ্ছে। গল টেস্টে মুশফিকের পরিবর্তে উইকেটরক্ষকের গ্লাভস হাতে পরেছিলেন লিটন কুমার দাস। এবারও একই দায়িত্বে থাকছেন তিনি। শততম টেস্টে খেলার জন্য বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা পাবেন স্মারক ক্যাপ, ক্রেস্ট ও ব্লেজার। যাতে লেখা থাকবে ‘শততম টেস্ট’। এছাড়া শততম টেস্টকে ঘিরে থাকছে বিশেষ স্যুভেনির। আয়োজক শ্রীলঙ্কাও ভুলছে না অতিথিদের সম্মান জানাতে। তাই তাদেরও বিশেষ আয়োজন আছে। এসএলসি প্রধান থিলাঙ্গা সামাথিপালাই সংবাদ মাধ্যমকে এমনটি জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘শততম ম্যাচ খেলা দুই দলের খেলোয়াড়দের দেয়া হবে ‘বিশেষ’ পদক।’ যদিও শ্রীলঙ্কা ২৫৭ টেস্ট খেলতে নামবে। আবার ৫০০ শিশু-কিশোরকে মাঠে বসে খেলা দেখার ব্যবস্থাও নিয়েছে এসএলসি। বাংলাদেশই সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ১০০ টেস্ট খেলে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। ১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের আগে শততম টেস্ট খেলতে সবচেয়ে কম সময় নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তাদের সময় লেগেছিল ১৮ বছর ৩ মাস ২৯ দিন। আর দীর্ঘ সময় ধরে স্বেচ্ছায় ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়াদের ১০০ টেস্ট খেলতে সময় লেগেছিল ৫৯ বছর ১১ মাস ২২দিন। এরপর সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে নিউজিল্যান্ডের ৪২ বছর ২ মাস ১৪ দিন। জিম্বাবুইয়ের শততম টেস্ট খেলতে সময় লেগেছে ২৪ বছর ১২ দিন। প্রথম টেস্ট খেলা দুই দল অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সময় লেগেছে যথাক্রমে ৩৫ বছর ২ মাস ১৩ দিন এবং ৩৫ বছর ৩ মাস ১৭ দিন। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৬ বছর ৮ মাস ৫৯ দিন, ভারতের ৩৫ বছর ১৯ দিন ও পাকিস্তানের ২৬ বছর ৪ মাস ২৩ দিন লেগেছে টেস্ট খেলার সেঞ্চুরি হাঁকাতে। ৯৯ টেস্টে ৭৬ ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। ড্র করেছে ১৫টি আর জিততে পেরেছে মাত্র ৮টি। এর মধ্যে দুর্বল জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৫ জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২ জয় এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১ জয়। বাকি ৬ দলের কাউকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ একাধিকবার মোকাবেলা করেও। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স সবচেয়ে হতাশার। এখন পর্যন্ত ১৭ টেস্ট খেলে মাত্র দুটি ড্র করতে পেরেছে, বাকি ১৫ টেস্টেই হেরে গেছে একতরফাভাবে। অথচ আশ্চর্যজনক কয়েকটি রেকর্ড আছে এই লঙ্কানদের বিরুদ্ধেই। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৬৩৮ রান শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের মার্চে গলে। আবার টেস্টে নিজেদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ ৬২ রানও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে কলম্বোয়। আবার ওই কলম্বোতেই মোহাম্মদ আশরাফুল অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। আবার গলে ২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন অধিনায়ক মুশফিক। আজ শততম টেস্টেও হোয়াইটওয়াশ এড়ানো, সিরিজ হার ঠেকানোর লড়াই। তাই এমন ঐতিহাসিক ম্যাচেও চ্যালেঞ্জের মুখেই থাকবে বাংলাদেশ দল।
×