ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হারই হলো বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১২ মার্চ ২০১৭

হারই হলো বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্বপ্নটা চতুর্থদিন বিকেলে দেখিয়েছিল তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের ব্যাটিং। ৪৫৭ রানের বিশাল লক্ষ্য সামনে নিয়েও বিনা উইকেটে ৬৭ রান তুলে ফেলেছিল। কিন্তু পঞ্চমদিনে অভিজ্ঞ স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের ভয়াল ঘূর্ণিতে ধসে পড়ল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ১৯৭ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলে সিরিজের প্রথম টেস্টে গলে মুশফিকুর রহীমের দল পরাজয় দেখল ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে। হেরাথ একাই নেন ৬ উইকেট। এর ফলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকল ১-০ ব্যবধানে। ৪৫৬ রানের বিশাল লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে ২৭৪ রান তুলে। বিশাল এই লক্ষ্যটা ছোঁয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল বিশ্বরেকর্ড গড়ার। কারণ এর আগে চতুর্থ ইনিংসে সর্বাধিক ৪১৮ রান করে ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জিততে পেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর বাংলাদেশ দল টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে সর্বাধিক ৪১৩ রান করেছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই। ২০০৮ সালের ঘটনা সেটি। আর মাত্র দু’বার তিন শতাধিক রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুশফিকুর রহীমের দলটি দুর্দান্ত খেলছিল। যদিও আগের দুটি সফরে শতভাগ পরাজয় দেখেই ফিরেছে তারা। কিন্তু গল টেস্টে ৪৫৭ রানের লক্ষ্যটাকেও মনে হচ্ছিল ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব। কারণ চতুর্থদিন আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন সৌম্য সরকার। মাত্র ৪৪ বলে অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৭ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। বিনা উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে পঞ্চমদিন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ দল। কিন্তু সৌম্য আর মাত্র ২ বল টিকতে পেরেছেন। দিনের প্রথম ওভারটি করতে এসেই সফল হয়েছেন আসেলা গুনারতেœ। দিনের দ্বিতীয় বলেই ভয়ঙ্কর সৌম্যকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন তিনি। তামিম আগের মতোই ধৈর্য নিয়ে খেলছিলেন দেখেশুনে। শুরুর ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার জন্য তার সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দেন মুমিনুল হক। কিন্তু ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ এ ব্যাটসম্যান মাত্র ৩ ওভার ক্রিজে থাকতে পেরেছেন। ৫ রান করেই সাজঘরে ফিরে যান দিলরুয়ান পেরেরার বলে। অধিনায়ক মুশফিক এসে তামিমের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তামিম নিজেই খেই হারিয়ে ফেলেন। মুমিনুলের পর তিনি ফিরে যান দ্রুতই। এবার পেরেরা আঘাত হানেন। তামিম ৫৫ বলে মাত্র ১ চারে ১৯ রান করেছিলেন। এরপর লড়াইটা দীর্ঘক্ষণ একাই চালিয়ে গেছেন মুশফিক। অন্যপ্রান্ত দিয়ে মাঠ থেকে সাজঘর আর সাজঘর থেকে মাঠে আসা-যাওয়ার প্রতিযোগিতায় রত থেকেছেন বাকি ব্যাটসম্যানরা। সাকিব আল হাসানকে শিকার করে নিজের প্রথম উইকেটের দেখা পান হেরাথ। মাত্র ৮ রান করতে পেরেছেন সাকিব। একই ওভারের শেষ বলে আবার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকেও শিকার করেন। টানা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়া মাহমুদুল্লাহ শূন্য রানেই ফিরে যান। মুশফিকের সঙ্গে যোগ দেন তরুণ উইকেটরক্ষক লিটন দাস। এ দু’জনের লড়াইটা বেশ জমে উঠেছিল লঙ্কান স্পিন আক্রমণের বিরুদ্ধে। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েন তারা। চলতি টেস্টে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন অধিনায়ক মুশফিক। আর গ্লাভসজোড়া তিনি তুলে দিয়েছেন লিটনের হাতে। তবে লিটন প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮ রান করেই সাজঘরে ফিরে কটাক্ষের শিকার হয়েছেন। লিটন দারুণ খেলেছেন এদিন। মুশফিককে ভালভাবেই সঙ্গ দিচ্ছিলেন। কিন্তু মুশফিক নিজেই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৯৮ বল মোকাবেলা করেছেন। তবে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে লক্ষণ সানদাকানের স্পিনে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৩৪ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় মুশফিককে। আর তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় বিশাল পরাজয় নেমে আসছে বাংলাদেশের ওপর। সেটা আরও ঘনীভূত হয় লিটনও ৬২ বলে ২ চারে ৩৫ রান করে আউট হওয়ার পর। হেরাথ হয়ে ওঠেন ভয়ানক। একের পর এক আঘাত হানতে থাকেন। বাংলাদেশের টেলএন্ডাররা দিশেহারা হয়ে যায় এ অভিজ্ঞ স্পিনারের আক্রমণে। তবে একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। তিনি ৪৮ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেছেন মূলত সঙ্গীর অভাবে। কারণ অপরপ্রান্তে হেরাথের স্পিন বিষে পরাভূত হয়েছেন তাসকিন আহমেদ (৫) ও মুস্তাফিজুর রহমান (০)। শেষ পর্যন্ত ১৯৭ রানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের লড়াই। স্বপ্নের হয় বসতি। ৫৯ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন হেরাথ। গল টেস্টের প্রথম থেকে শেষদিন পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার। ব্যাটে-বলে কিংবা ফিল্ডিংয়ে কোন বিভাগেই বিন্দুমাত্র প্রভাব দেখাতে পারেনি সফরকারী বাংলাদেশ। বেশ কিছু ক্যাচ হাতছাড়া করেছে মুশফিকের দল। আর ওই সুযোগে উভয় ইনিংসে দাপট দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। অপরদিকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। তামিম, সৌম্য ও মুশফিক ছাড়া আর কেউ আহামরি কিছু করতে পারেননি। বোলিংয়েও ছিল বেহাল দশা। দীর্ঘদিন পর ফিরে ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি। সবমিলিয়ে ২৫৯ রানের বিশাল পরাজয় মানতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অথচ এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়ের আশা নিয়েই দেশ ছেড়েছিল মুশফিকের দল। নিয়মিত অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার দলে না থাকায় মোক্ষম সুযোগ দেখছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু আত্মবিশ্বাসটা থাকলেও মাঠে নেমে সেটার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি বাংলাদেশ। লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ১৭তম টেস্টে ১৫তম পরাজয়বরণ করেছে। এরপর পি.সারা ওভালে নিজেদের শততম টেস্টের মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ দল। এমন পরাজয়ে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার পর ঐতিহাসিক সেই টেস্টে ভাল করা কঠিন চ্যালেঞ্জের হবে মুশফিকদের।
×