ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে এমআইটির সঙ্গে যৌথ গবেষণার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ মার্চ ২০১৭

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে এমআইটির সঙ্গে যৌথ গবেষণার উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এমআইটির সহযোগিতায় আধুনিক প্রযুক্তিতে (ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি) আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডিপ লার্নিং, বিগ ডেটা, ইন্টারনেট অব থিংসের ওপর গবেষণা কার্যক্রম চালানো হবে। এতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানোর জন্য নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সরকার। আধুনিক ও অভিনব প্রযুক্তিতে কাজ করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এমআইটি’র সঙ্গে কার্যকর ও টেকসই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যৌথ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, গত ৮ বছরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঘটেছে। সরকার তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। দেশে দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য হাতে নেয়া হযেছে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। প্রশিক্ষণ নিয়ে এই সেক্টরে অনেকে ভাল করছেন। ২০২১ সালের আগেই দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরি করা হবে। উদ্ভাবনে সফলতা আনয়ন, উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে আমাদের সরকার ইনোভেশন ডিজাইন এ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিওরশীপ একাডেমি (আইডিয়া) শীর্ষক এক অনন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্প গবেষণা ও উদ্ভাবনে শিল্প-শিক্ষার্থী-শিক্ষক-সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি উদ্ভাবনী কার্যক্রমী প্রণোদনা সৃষ্টি করবে এবং দেশে একটি বৈশ্বিক স্টার্টআপ কালচার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মান বাড়ানোর ওপর সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। আইসিটি খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। এমআইটির সহযোগিতায় ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং তথ্য প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয়করণ কর্মসূচীর আওতায় বৈজ্ঞানিক ডাটাবেজ, মানব সম্পদ উন্নয়ন ডাটাবেজ, ফিন্যান্সিয়াল ডাটাবেজ, লাইব্রেরি ডাটাবেজ ও মেডিক্যাল ডাটাবেজ করা হবে। সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে সরকার। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষজনবল গড়ে তোলার জন্য গাজীপুরে হাইটেক পার্ক শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাইটেক পার্ক স্থাপন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য সময়োপযোগী কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে আইটি ভিলেজ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার টেকনোলজি পার্ক বা আইটি ভিলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এমআইটির কানেকশন সায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড এম শয়ার ডিজিটাল অর্থনীতির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে বাংলাদেশের করণীয়, সুযোগ ও সম্ভাবনা উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতির সম্মানজনক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শিক্ষিত তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচিত সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আইসিটি ‘ক্যারিয়ার ক্যাম্প’ চলছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই ক্যারিয়ার ক্যাম্প কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যারিয়ার ক্যাম্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের শিক্ষিত তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহ বাড়ানো। একই সঙ্গে তাদের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) যৌথভাবে আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। দেশের ৬৪ জেলার নির্বাচিত বিশ্বদ্যিালয় ও কলেজে আগামী এক বছর ধরে এ কার্যক্রম চলছে। দেশের ১২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬৪টি জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ৭০ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্প গুণগত প্রশিক্ষণে ৩৪ হাজার দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলছে। এর আগে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ৩ হাজার ৫শ’ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা দক্ষতা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে শুধু নেটওয়াকিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে না। এজন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সুযোগ সুবিধার। এরকম সুযোগ সুবিধা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব। এই ল্যাবে কাজ করে একজন সাধারণ ছাত্রও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারেন। আগামী এক বছরের মধ্যে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে দেশে ৭০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি তৈরি করা। এজন্য বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা শহরে ল্যাব স্থাপন করা হলে তরুণ তরুণীরা সহজেই এই ল্যাবগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। এই ল্যাবগুলো দক্ষ শিক্ষক দিয়ে পরিচালনা করা হবে। দক্ষ জনবল গড়তে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইসিটি ক্লাবও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশ পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। উল্লেখ্য ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজে অবস্থিত একটি বেসরকারী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এমআইটি হিসেবে বিশ্ব জুড়ে পরিচিত। এমআইটির ছাত্র ও শিক্ষক সম্মিলিতভাবে ৭৮টি নোবেল পুরস্কার এবং ৫০টি ন্যাশনাল মেডেল অব সায়েন্স অর্জন করেছেন। এমআইটি বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিপ্লব ও গবেষণায় অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগেই তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
×