ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ মার্চ ২০১৭

 গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

রশিদ মামুন ॥ গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি পোসকো দাইয়ু কর্পোরেশনের সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) সই করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। এ সপ্তাহেই চুক্তিটি সই হওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন ২০১০ (বিশেষ বিধান) আওতায় ব্লকটি দাইয়ুকে ইজারা দেয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী মৌসুমেই দাইয়ু ব্লকটিতে তেল গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করবে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ও মিয়ানমার নিজ নিজ সীমানায় জরিপ চালিয়ে তেল গ্যাস মজুদের সন্ধান পেয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায়ও তেল ও গ্যাসসহ অন্য খনিজের কি অবস্থা তা এখনও অজানাই রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এবং মিয়ানমারের সমুদ্র এলাকা অগভীর হলেও বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা বেশ গভীর। এই প্রতিবন্ধকতার জন্য অনেক বহুজাতিক কোম্পানি শেষ পর্যন্ত তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ হারায় বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে। মডেল পিএসসি অনুসারে চুক্তির প্রাথমিক মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। পেট্রোবাংলার সঙ্গে সমঝোতা অনুসারে দাইয়ু প্রথম দুই বছরে এক হাজার ৮০০ লাইন কিলোমিটার ™ি^তীয় মাত্রার (টুডি) জরিপ চালাবে। তৃতীয় বছরে এক হাজার বর্গকিলোমিটার তৃতীয় মাত্রার জরিপ (থ্রিডি) পরিচালনা করবে। চতুর্থ ও পঞ্চম বছরে ১টি অনুসন্ধান কূপ খনন করবে। গত বছর ৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী দাইয়ুর সঙ্গে চুক্তি অনুস্বাক্ষরের অনুমোদন দেয়। এরপর গত ৭ ডিসেম্বর চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করা হয়। চুক্তিপত্র মতামতের জন্য জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে এখন চূড়ান্ত চুক্তি সই করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা আশা করছে আগামী বছরের শেষ নাগাদ দাইয়ু দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ শুরু করবে। এর পরের বছর ২০১৮ সালের মধ্যে জরিপের ফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। মডেল পিএসসি অনুসারে ব্লকে কোন গ্যাস পাওয়া গেলে দাইয়ু তার অংশের গ্যাস পেট্রোবাংলার কাছে প্রতি হাজার ঘনফুট সাড়ে ছয় ডলারে বিক্রি করবে। তবে এক্ষেত্রে সেই গ্যাসের উপর ধার্য কর পেট্রোবাংলা সরকরাকে প্রদান করবে। প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পিএসসির পরিবর্তন এনে দেশে সাগরের গ্যাসের দর বৃদ্ধি করেছে সরকার। গভীর সমুদ্রের ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। বহুজাতিক কোম্পানি কনোকোফিলিপস ও স্টেট অয়েল যৌথভাবে ১২ নম্বর ব্লকের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয়। পরে কনোকো এই প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ায় তা বাতিল করা হয়। এরপর জ্বালানি বিভাগ বিশেষ আইনে ব্লকগুলো ইজারা দেয়ার উদ্যোগ নেয়। এজন্য এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক তেল গ্যাস কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আগ্রহপত্র চায় পেট্রোবাংলা। সিঙ্গাপুরের ত্রিক্রস এনার্জি, দাইয়ু ও নরওয়ের স্টেট অয়েল আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে প্রস্তাব চাওয়া হলে ১২ নম্বর ব্লকের জন্য শুধু দাউয়ু একক প্রস্তাব দাখিল করে। এরপর পেট্রোবাংলা দাইয়ুর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির শর্ত ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে। এর আগে মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপস গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায়। সেখানে পিএসসির বাইরে গিয়ে গ্যাসের দর বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু সরকার অনৈতিকভাবে গ্যাসের দর বৃদ্ধি করতে না চাইলে কনোকো বাংলাদেশ ছাড়ার ঘোষণা দেয়। এতে গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তবে দাউয়ু তাদের কার্যক্রম শুরু করলে আবার গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত ক্রমান্বয়ে আমাদের গ্যাসের মজুদ কমে আসছে। স্থলভাগের মজুদ দিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলা সম্ভব। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিদেশ থেকে আমদানি করা একটি লিক্যুফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে কক্সবাজারের মহেশখালীতে। এছাড়া আরও ছয়টি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তবে এলএনজির দাম বেশি হওয়ায় সরকার সাগরে গ্যাস উত্তোলনের ওপর জোর দিতে চায়। কারণ সাগর থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে পারলে তার দাম আমদানি করা এলএনজি থেকে অনেক কম হবে। এছাড়া নিজস্ব সম্পদ হওয়ায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
×